ঈদ, একুশে এবং বাঙালির ঘরে ফেরা

দেশ রূপান্তর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৩৯

এটা মেনে নেওয়াই ভালো যে ঈদ আর তেমন ঐক্যের অনুষ্ঠান নয়। তবুও ঈদ তো মাত্র দু’বার আসে বছরে। একুশে ফেব্রুয়ারি কোনো উৎসবের দিন নয়। একুশে ফেব্রুয়ারিকে উৎসবের উপলক্ষে পরিণত করলে বরং অপমান করা হয় শহীদদের, অমার্যাদা ঘটে এর তাৎপর্যের। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি ঐক্য প্রতিষ্ঠার দিন, ঐক্যকে দৃঢ় করবার দিন। যখন দেখি যে, আত্মদানের স্মৃতি অবিস্মরণীয় হয়ে আছে, যখন দেখি অসংখ্য মানুষ এগিয়ে এসেছে, যখন শোনা যায় ঘুম ভেঙেছে চতুর্দিকে, ফুলের মালায় গানের কলরবে তখন একটা নতুন সংবিতকে দেখতে পাই, একটা নতুন সম্পর্ককে চিনতে পারি। ঐক্যসৃজনকারী তাৎপর্যে ঈদের অনুষ্ঠান থেকে এই দিন উদ্যাপন ভিন্ন, কেননা এতে আমরা শুধু যে আত্মীয়-পরিচিতের সঙ্গে মিলিত হই তা নয়, অনেক অপরিচিত, অচেনা মানুষের সঙ্গে একটা ঐক্যের সূত্রে গ্রথিত হয়ে উঠি আলিঙ্গন না করেও। এই দিনে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনো চেতনা নেই, একটা অনুভবের মধ্য দিয়ে অন্যের হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যাই, নিজেকে অনেক দূর বিস্তৃত করে দিই। এই ঐক্য ধর্মনিরপেক্ষ, শুধু এই কারণে বা এই অর্থে নয় যে, পার হয়ে যাই আমরা সাম্প্রদায়িক ব্যবধানের প্রান্তসীমা, বরং এই অর্থে আরও বেশি যে, ধর্মের ধর্মীয় সীমা, অর্থাৎ এর জগৎবিমুখ আধ্যাত্মিকতা ও পারলৌকিকতা, পার হয়ে আমরা হয়ে উঠি জাগতিক ও ইহলৌকিক। একুশে ফেব্রুয়ারির মতো ধর্মনিরপেক্ষ দিন বাংলাদেশে কম আছে, কবর জিয়ারত সত্ত্বেও। অন্যদিনটি হলো পহেলা বৈশাখ।


দেখি যার সঙ্গে আজিমপুরে দেখা হয়েছিল, তার পাশেই এসে দাঁড়িয়েছি শহীদ মিনারের নিচে, অথবা পরবর্তী কোনো সভা-প্রাঙ্গণে। যে-সংকলন এক জায়গায় কিনেছি সেই সংকলন অন্য জায়গাতেও বিক্রি হচ্ছে। সেই একই বক্তা একই কথা বলছেন, যা গত বছরেও বলেছিলেন, যা আগামী বছরেও হয়তো বলবেন। সেই একই লেখা, একই ধরনের লেখা। একই প্রকাশ, একই অনুষ্ঠান। তখন মনে হয় একুশে ফেব্রুয়ারিতে যে-একটা জাগরণ এসেছে হৃদয়ে, যে-জাগরণ গুঞ্জরণ করছে ভেতরে, আমার ভেতরে, অন্যের ভেতরে, সবার ভেতরে, সেটা যেন আটকা পড়েছে একটা জালে-ঘেরা খাঁচায়, কিছুতেই পথ পাচ্ছে না বের হয়ে যাওয়ার, অথচ বের হয়ে যেতে তার ভীষণ আগ্রহ, বহির্গমনের আয়োজনে একটা র্থ র্থ অস্থিরতা। এই কথাটা ভাবতেই খুব দুঃখ হয়, খেয়াল হয়, মহৎ অনুভবের এ কি অসামান্য অপচয়, প্রাণচাঞ্চল্যের এ কি নিদারুণ ব্যর্থতা। তখন এও বোঝা যায় যে এই অনুভবের, এই চাঞ্চল্যের সম্ভাবনা সর্বক্ষণই ছিল, আমরা টের পাইনি, আমরা তাকে কাজে লাগাইনি। কাজে না লাগানোর গ্লানিটা তখন খুব বড় হয়ে বাজে। সন্দেহ হয় অনুপ্রেরণা শেষ পর্যন্ত ফুঁসে-ওঠা আতশবাজির মতো অবসিত নিষ্প্রাণতায় পায়ের কাছে গড়িয়ে পড়বে, একুশে ফেব্রুয়ারির তাজা ফুলগুলোকে পায়ে মাড়িয়ে আবার আমরা ছোট ছোট ঘরে ফিরে আসব : উন্মুক্ত প্রান্তরে যারা মিলেছিলাম তারা সামান্য কুটিরবাসী দিনানুদৈনিকতার ভেতর ঠিকানাবিহীন হয়ে হারিয়ে যাব।


অনুভব ও অনুপ্রেরণা যে প্রকাশের পথ পাচ্ছে না তার একটা প্রমাণ ও লক্ষণ তো এই যে, ভেতরের চাঞ্চল্যকে আমরা বাইরের কোনো অনুষ্ঠান কি প্রতিষ্ঠান, সৃজন কি উদ্ভাবনের ভেতর প্রতিফলিত করতে পারিনি। উৎসাহ প্রত্যক্ষ অবয়ব গ্রহণ করেনি। সাহিত্যই বলি কি সামাজিক পরিবর্তনই বলি, কোনো বড় কাজের ভেতর আমাদের প্রাণের যে-অস্থিরতা তা সৃষ্টিশীল প্রতিরূপ লাভ করতে পারেনি।


তার চেয়ে কম মর্মান্তিক নয় এই সত্য যে, দেশের বিপুল জনসংখ্যার তুলনায় খুব অল্পলোকের জীবনেই একুশে ফেব্রুয়ারি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। আমরা জানি এই দিনে আমরা ঐক্যবদ্ধ হব কিন্তু সেই ঐক্য-চেতনা ক’জনের? সমাজের কত বড় এলাকায় তার বিস্তার? একুশে ফেব্রুয়ারি তো শিক্ষিত মানুষের অনুষ্ঠান, আর দেশে শিক্ষিত মানুষ ক’জন? তাই দেখা যায় শহরেই থাকে এই দিনটি আবদ্ধ। গ্রামে যে যায় সেও গ্রামের বিদ্যালয়টি পর্যন্তই। অল্প ক’জনের জন্যই এই সর্বজনীন অনুষ্ঠানটি আসে। বাদ-বাকি যারা তারা হয় দর্শক, নয়তো এ বিষয়ে বেখবর। অর্থাৎ শুধু যে ধনী-নির্ধনের তফাৎটাই আবার নতুন করে প্রকট হয়ে ওঠে তা নয়, আরও একটা বৈষম্য চোখে পড়ে শিক্ষার বৈষম্য, সংস্কৃতি-চর্চার বৈষম্য। একুশে ফেব্রুয়ারি তুলনায় বিত্তবান যারা তাদের জন্যই, শিক্ষিত যারা, যারা চিৎকর্ষের কারিগর তাদের কাছেই এর মূল্য।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও