হারানো বাংলাকে আবার ফিরে পাব তো?
চোখের সামনেই আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ হারিয়ে যাচ্ছে। একাত্তর সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল অসাম্প্রদায়িক, উদার, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
অসাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মনিরপেক্ষতা মানে কিন্তু ধর্মহীনতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে হলো, সব ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ধর্ম পালন করবে। কেউ কারো ধর্ম পালনে বাধা দেবে না, কেউ কারো বিশ্বাসে আঘাত করবে না, কেউ কারো ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করবে না। কিন্তু ১৯৭৫-এর পর থেকে বাংলাদেশ আবার উল্টাপথে যাত্রা শুরু করে। স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানপন্থীরা বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত শুরু করে। দ্রুত তারা ক্ষমতার কাছাকাছি চলে আসে। বঙ্গবন্ধু হত্যার দিন থেকেই ‘জয় বাংলা’ বদলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ হয়ে যায়। এটা একটা প্রতীক মাত্র।
দীর্ঘদিন ধরেই বাঙালি সংস্কৃতিকে ইসলামের মুখোমুখি করার ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র পাকিস্তানিরা করেছে। তাদের ক্ষোভ ছিল পহেলা বৈশাখ নিয়ে, রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে পাকিস্তানিদের গা জ্বলতো। বাঙালি সংস্কৃতিকে পাকিস্তানিরা হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছিল। তাদের সে ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।
বাঙালিরা নিজেদের জাতিসত্তাকে চিনতে পেরেছিল। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিকে নিয়েই তারা নতুন একটি দেশ গড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের স্লোগান ছিল, ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার খৃস্টান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার মুসলমান; আমরা সবাই বাঙালী’। যুদ্ধ করে আমরা পেয়েছিলাম সব মানুষের একটা দেশ। সেই বাংলাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
কয়েক দশক ধরেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলা। এই বাংলা ছিল সব মানুষের, সব ধর্মের। বাংলার বাতাসে ভেসে বেড়াতো জারি-সারি-ভাটিয়ালির সুর। এখন ধীরে ধীরে বাংলাকে গলা টিপে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ষড়যন্ত্র হচ্ছে অনেকদিন ধরেই।
এখন সেই ষড়যন্ত্রকারীরা ফল পেতে শুরু করেছে। সেই পাকিস্তানি কায়দায় পহেলা বৈশাখের বিরুদ্ধে, জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে, মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে, টিপের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিবেচনায় আক্রমণ করা হচ্ছে। অথচ এই সবগুলোই হলো বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। এর সঙ্গে হিন্দু ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই, ইসলাম ধর্মের কোনো বিরোধ নেই।