লং কোভিড ও করোনার চোখ রাঙানি
করোনার বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে, করোনা ভীতির ও বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে| আমাদের প্রায় সবারই মনোজগতে বর্তমানে এমন একটি অবস্থার বিরাজ করছে| বিশেষকরে করোনা সংক্রমণের হার এবং মৃত্যু ব্যাপক ভাবে কমে যাওয়ায় অনেকে করোনা মহামারির কথা প্রায় ভুলতে চলেছি| কিন্তু ইতিমধ্যে করোনা আমাদের স্বাস্থ্যের, অর্থনীতির এবং অন্যান্য অনেক কিছুর ব্যাপক ক্ষতি করে গেছে|
স্বজন হারানোর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে নানা রকম স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি সাধন করেছে, যা লং কোভিড নামে পরিচিত| ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকের এসব ক্ষতির ভার বহন করতে হবে দীর্ঘকালীন সময় করে না হয় আজীবন ধরে| স্বজন হারানো পরিবার কিংবা লং কোভিড ক্ষতিগ্রস্তরা কখনোই এই করোনা মহামারীর কথা ভুলতে পারবেন না|
লং কোভিড এর সার্বজনীন সংজ্ঞা এখনও তৈরি হয়নি| তবে যুক্তরাজ্যসহ কোন কোন দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শারীরিক কোনো সমস্যা বা কোনরকম লক্ষণ যা অন্য কোন রোগের কারণে হয়নি এমন প্রমাণিত হলেই তবে তাকে লং কোভিড বলে গণ্য করা হয়| বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই সময়টা কে ধরা হয় দুই মাস|
কোভিড এর কারণে দীর্ঘমেয়াদি যে সমস্যাগুলো দেখা দিচ্ছে তাদের মধ্যে হল ক্লান্তি বা মারাত্মক দুর্বলতা (৫১%), বুকে ব্যথা (৩৭%), শ্বাস-প্রশ্বাস ছোট হয়ে আসা (৩৬%), ব্রেইন ফগ বা স্মৃতিশক্তি লোপ বা স্মৃতি জড়তা (২৮%), খাবার স্বাদ কিংবা গন্ধ পরিবর্তন হওয়া, জয়েন্টে জয়েন্টে বা পেশিতে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য| ছাড়াও রয়েছে পেটের সমস্যা, বুক ধড়ফড় করা, রাতে ঘুম না হওয়া, চোখের পাওয়ারের পরিবর্তন হওয়া, বিষন্নতা, অনীহা, ক্রমাগত কাশি হওয়া, মাথাব্যথা হওয়া, ইত্যাদি|
লং কোভিড এর নানা রকম লক্ষণ বা সমস্যা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা এখনো চলছে| এক গবেষণায় দেখা গেছে করোনাভাইরাস ব্রেইনকে আক্রমণ করে ব্রেইনের আকার ছোট করে ফেলে, অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে ফুসফুস অ্যাবনরমাল করে ফেলে|
এসব সমস্যা আজীবনের জন্য রয়ে যাবে বা কতদিন পরে ঠিক হয়ে যাবে সে সম্পর্কে এখনো সঠিক কিছু জানা যায়নি, গবেষণা চলছে| লং কোভিড আক্রান্ত রোগীর ডায়াবেটিকস, আয়রন ঘাটতি এবং থাইরয়েড ফাংশন কাজ করছে কিনা বা অন্য কোনো রোগের কারণে এমনটি হচ্ছে কিনা তা পরখ করে নেওয়ার পরেই একজন রোগীর লং কোভিড আছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়|