সমকামিতা: আদিমতা নাকি আধুনিকতা?
গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যম থেকে স্যোশাল মিডিয়া সবখানেই একটি ঘটনা হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। যে ঘটনাকে ঘিরে এত বাক-বিতণ্ডা তার বিষয়বস্তু সমকামিতা। ২০ মার্চ সন্ধ্যায় নোয়াখালীর এক কিশোরী টাঙ্গাইল জেলার বাসাইলে চলে আসে। সেখানে এসে নোয়াখালীর মেয়েটি ঘোষণা দেয় সে টাঙ্গাইলের মেয়েটিকে ভালোবাসে। এখানেই থেমে নেই, বিয়ে করে এক সাথে বাঁচতে চায়। এমন ঘটনা শুধু নোয়াখালীর মেয়েটিই বলেননি। তার সাথে সুর মিলিয়ে টাঙ্গাইলের মেয়েটিও বলে বাঁচলে একসাথে বাঁচবো, মরলেও একই সাথে মরবো।
বাংলাদেশে ঠিক কবে থেকে সমকামিতার চর্চা শুরু হয়েছে তা সঠিক প্রকাশিত নেই। তবে ২০১৪ সালে সমকামীদের অধিকার নিয়ে জুলহাজ মান্নানের সম্পাদনায় ‘রূপবান’ নামে প্রথম পত্রিকা বের হয়। এই পত্রিকার সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে অনেক সমকামীদের পরিচয়। ক্রমে ক্রমে দলে ভারী হতে থাকে এদেশের সমকামীরা। ২০১৬ সালে ঢাকার কলাবাগানে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে।
সমকামিতা শব্দটি উদ্ভাবিত হয়েছিল ১৯শতকে। এরপর একই শতকে এর বিপরীত শব্দ বিষমকামিতা শব্দটির উদ্ভব হয়। বিশ শতকে যৌন পরিচয় নির্ধারণে উভকামিতা শব্দটি উদ্ভব হয়। একই সাথে যারা সঙ্গমে আকৃষ্ট নয়, তাদের পরিচয় দানের জন্যও কোনো শব্দ উদ্ভবের প্রয়োজন ছিল।
যৌনবৃত্তি বলতে বোঝায় পুরুষ, নারী বা উভয়লিঙ্গের প্রতি পারস্পরিক আবেগ, প্রণয় এবং যৌনআকর্ষণজনিত এক স্থায়ী সম্পর্কিত অবস্থা। এ প্রবৃত্তির একটি প্রান্তে কেউ কেউ শুধু বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, আর অপর প্রান্তে কেউ কেউ শুধু সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। তবে সাধারণত যৌনপ্রবৃত্তকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়। এরা হলো, বিপরীতকামিতা অর্থাৎ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, সমকামিতা অর্থাৎ সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, উভকামিতা অর্থাৎ উভয়লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ।
পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন ইতিহাসে সমপ্রেমের অস্তিত্ব আছে এমনটাই দেখা যায়। আনুমানিক ৬শ’ খ্রিস্টপূর্বে চীনে সমকামিতা শব্দটি আকর্ষণীয় স্থানে দংশনের আনন্দ, ছিন্ন কর্তন, দক্ষিণীয় প্রথা নামে পরিচিত ছিল। সমলিঙ্গে আকর্ষণ এবং যৌন মিথিস্ক্রিয়া ধ্রুপদী উপন্যাস ‘ড্রিম অব দ্যা রেড চেম্বার’এ বর্ণিত হয়েছে। বিষমকামী মানুষদের মধ্যে ঘটে যাওয়া প্রেমের সময়ের ঘটনাক্রম যেভাবে গল্পে উঠে আসে কালোত্তীর্ণ উপন্যাসটিতে সমপ্রেম একইভাবে উঠে এসেছে।