সেদিন কাননে ফুটেছিল ফুল
এই সেই ফেব্রুয়ারি যে মাসটিতে বাংলার সমগ্র বাগানজুড়ে ফুটেছিল অজস্র ফুল, নানা রং এর সমাহারে উজ্জ্বল হয়ে ধুয়ে মুছে ফেলেছিল সকল বিবর্ণতা, তাবৎ মনিলতা, সমগ্র পংকিলতা আধুনিক বাঙালি জীবনধারা রচনার সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক লক্ষ্য নিয়ে। বাংলার যুব সমাজ এক একটি ফুলের মত দেশজুড়ে সুঘ্রাণ ছড়িয়ে মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছিল বহুমাত্রিক লক্ষ্য নিয়ে।
একুশই তো ফেব্রুয়ারি সৃষ্টি করেছিল। না কি ফেব্রুয়ারিই সৃষ্টি করেছিল সুমহান একুশকে? এ প্রশ্ন আজ উঠতেই পারে বাঙালির আবেগ মুক্ত মননে যখন বাহান্ন অতিক্রম করছে সাত সাতটি দশক। সে কারণেই, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে আবেগমুক্ত মন ও দৃষ্টিতে ছবির মত ভেসে উঠছে ফেব্রুয়ারির বহুমাত্রিক লক্ষ্য, নানা রং এ সাজবার সাধনা।
যদি প্রশ্ন করি বাহান্নর ফেব্রুয়ারি কী বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়েছিল বাঙালির জীবনে? কাল বিলম্ব না করে সবাই হয়তো বলে উঠবেন, রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায় ও তাকে তার যোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে। এই উত্তর এই উপলব্ধি সত্য হলেও তা আংশিক সত্য মাত্র পূর্ণ সত্য নয়।
তাই দশকের পর দশক পরে গভীর অন্তদৃষ্টি দিয়ে দেখতে, উপলব্ধি করতে পারছে বাঙালির সমগ্র জীবনধারা পাল্টে আত্মপ্রত্যয়শীল, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন একটি বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক এবং সকল বৈষম্য ও পশ্চাৎপদতা মুক্ত একটি জাতি গঠন ও তার সার্বিক বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যেই ফেব্রুয়ারি এসে হাজির হয়েছিল বাঙালির রুদ্ধ দরজায়।
বাঙালি জাতির সুসজ্জিত ঘরগুলিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলেছিল ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল দ্বিজাতি তত্ত্বের ধারালো অস্ত্র নিয়ে। প্রাণ দিয়েছে বাঙালি, রক্ত ঢেলেছে বাঙালি ঐ শানানো অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করতে তাকে স্তব্ধ করে দিতে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ভাষা আন্দোলন
- ভাষার মাস