ভাষা কি জাতীয়তাবাদের উৎস
ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। এই মাসে প্রতিবছর বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রশ্নটি উঠে আসে। আমরা অনেকেই মনে করি বাঙালি জাতীয়তাবাদের উৎস বায়ান্নর ভাষাসংগ্রাম। তার ফলে আমাদের জাতীয়তার ভিত্তি ভাষা বলে অনেক পণ্ডিত অনেক লেখা লিখেছেন। এ বিষয়ে আমার একটি প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশ যদি ভাষাভিত্তিক হয়, তাহলে এই বাংলা ভাষা পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা থেকে বিহারের পূর্ণিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত কেন? তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশ এই সকল এলাকা নিয়ে তৈরি হলো না কেন? আমরা ইতিহাস পাঠ করলে জানি, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে বলা হতো বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার মহান অধিপতি। তাহলে এই এলাকাগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হলো না কেন? বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার বহু আগে এদেশ পাল রাজাদের আমলে একটি স্বাধীন দেশ ছিল। ঈশা খাঁ, প্রতাপাদিত্যের আমলেও বাংলা দিল্লির অধীনতা স্বীকার করেনি।
সম্রাট আকবর বারো ভূঁইয়াদের সঙ্গে অনেক বছর যুদ্ধ করার পর জয়ী হতে না পারায় সামান্য করের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নেন। মোগল সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়লে নবাব আলীবর্দি দিল্লিকে কর দেওয়া বন্ধ করে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আসাম, বিহার, উড়িষ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশের সীমানা বিস্তৃত ছিল। তখন বাংলাদেশ, আসাম, বিহার এবং ত্রিপুরার মানুষের ভাষা প্রায় একই রকম ছিল। সেই বাংলা ভাষা থেকেই পরবর্তীকালে অহমিয়া, উড়িয়া ইত্যাদি ভাষার জন্ম। ইংরেজ আমলে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করে যখন বিহার ও উড়িষ্যাকে স্বতন্ত্র প্রদেশ করা হয়, তখন অহমিয়া ও উড়িয়া ভাষা বাংলা ভাষার আধিপত্য বর্জন করে নিজস্ব ভাষার কর্তৃত্ব স্থাপন করে। কিন্তু এখনও এসব ভারতীয় প্রদেশে বাংলা ভাষার সীমানা বিস্তৃত রয়েছে। অন্যদিকে, ভাষার আন্দোলন শুধু বাংলাদেশে হয়নি। এখন শিলচর, করিমগঞ্জ, দার্জিলিং, বিহার ইত্যাদি স্থানেও হচ্ছে। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে ভারতের এসব অঞ্চল ও প্রদেশে। সেখানে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আন্দোলনের খবরও পাওয়া যায়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন
- জাতীয়তাবাদ