কারও নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা উচিত নয়

যুগান্তর আবদুল গাফফার চৌধুরী প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১০:২৪

সম্প্রতি কক্সবাজারে বিএনপি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সভা করেছে। পুলিশ ৭৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। ১৪৪ ধারা জারি করে মুসলিম লীগ সরকার সভা-সমিতি করতে দিত না। আরমানিটোলার ময়দানে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সভায় তারা গুণ্ডামি করেছে। এভাবে বিরোধীদের মুখ চেপে ধরে মুসলিম লীগ ভেবেছিল তারা স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু তা হয়নি। মুসলিম লীগের নুরুল আমীন সরকারের আমলে ৩৫ হাজার রাজবন্দি ছিল। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ১৪৪ ধারা জারি করায় মনে হয় তারা মুসলিম লীগের নীতি অনুসরণ করছে। আমলাতন্ত্র মুসলিম লীগ শাসনামলে যা করেছে এখন তারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। কক্সবাজারের ডিসি কেন ১৪৪ ধারা জারি করলেন, বিএনপিকে সভা করতে দিলেন না, তার কারণ কী? বিএনপি যতদিন সন্ত্রাস করেছে ততদিন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দমন করার ব্যবস্থা করেছিল এবং সেটি ছিল স্বাভাবিক। বর্তমানে বিএনপি সন্ত্রাসের নীতি ত্যাগ করেছে। বাংলাদেশে তারাই প্রধান বিরোধী দল। তাদের কথা বলতে না দেওয়া অগণতান্ত্রিক। বিএনপি ক্ষমতায় আসুক, আমরা কেউ তা পছন্দ করি না। বিএনপির ক্ষমতায় আসা মানে জামায়াতি ও হেফাজতিদের ক্ষমতায় আসা। তাহলে দেশ আবার ৫০ বছর পিছিয়ে যাবে। কিন্তু সেজন্য তাদের নাগরিক অধিকার, কথা বলার অধিকার বন্ধ করা উচিত নয়। এটি গণতন্ত্রসম্মত নয়। বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সহায়তায় দলটি গঠন করেন। তাতে বিভিন্ন দলের এবং জনগণের আস্থাহীন ব্যক্তিদের তার দলে টানেন। তাদের ভেতর কিছু মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। পরবর্তীকালে জিয়াপত্নী খালেদা জিয়া নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসে একইভাবে ১৪৪ ধারার আড়ালে ক্ষমতা স্থায়ী করতে চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের ডাকে ঢাকায় এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। খালেদা সরকার জলপথে, স্থলপথে কোনোভাবেই যাতে জনসাধারণ আওয়ামী লীগের সভায় আসতে না পারে, সেজন্য ঢাকা শহরকে অবরোধ করে রেখেছিল। বিএনপি তাই বলতে পারে না আওয়ামী লীগ সরকার অন্যায় করেছে।


কিন্তু বিষয়টি ন্যায়-অন্যায়ের প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার। দেশে এখন আমলাদের শাসন চলছে। তারা অতীতের মুসলিম লীগ সরকারের আমলে যা করতেন, এখন তারই পুনরাবৃত্তি করে প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগ সরকারের সুনাম নষ্ট করতে চান। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির প্রতি যে আচরণ করছে, এ একই আচরণ বিএনপি করেছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। তাই মির্জা ফখরুলের গলাবাজি করা উচিত নয়। তাদের আমলে দেশে গণতন্ত্র ছিল না। কিন্তু আজ বিএনপি একটি সন্ত্রাসমুক্ত রাজনৈতিক দল। তাদের সরকার বিরোধিতার অধিকার আছে। তাদের সভা-সমিতি করার অধিকার আছে। সুতরাং আওয়ামী লীগ সরকার একটি গণতান্ত্রিক সরকার হয়ে তাদের সভা-সমাবেশ করার অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পারে না। এর ফলে আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট হবে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে, তারা গণতন্ত্রের কথা বললেও তা অনুসরণ করছে না। দেশে জামায়াত ও হেফাজতিরা যে ষড়যন্ত্র করছিল তাদের দমনের জন্য শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রয়োজন ছিল। এখন সামনে যখন নির্বাচন আসছে, তখন বিএনপিকে কথা বলতে দেওয়া উচিত। শেখ হাসিনা দেশের অনেক উন্নতি করেছেন। বাংলাদেশের চেহারা তিনি বদলে দিয়েছেন। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার জয়লাভ অনিবার্য। এটি জানা সত্ত্বেও বিএনপিকে কেন হেনস্তা করা হচ্ছে তার কারণ আমাদের অজানা। আমলারাই এটি ঘটাচ্ছে এবং আওয়ামী লীগকে একটি অগণতান্ত্রিক দল হিসাবে গোপনে তুলে ধরতে চাইছে। আমলাতন্ত্র যখনই দেখেছে কোনো সরকার গণতান্ত্রিক পথে শক্তনীতি গ্রহণ করেছে, সেই সরকারের বিরুদ্ধেই তারা ষড়যন্ত্র পাকিয়েছে। এখনো সেই ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত বলে মনে হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত বিএনপির মুখ বন্ধ করা নয়, এ আমলাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার ব্যবস্থা করা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও