দুর্ঘটনার দায় যার, ক্ষতিপূরণের দায়িত্বও তার

ডেইলি স্টার মোশতাক আহমেদ প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:৫১

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যুর কথা জানা গেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে আরও বহু মানুষ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরই মাঝে সরকারের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ এবং ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন পৃথকভাবে ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বরগুনা জেলা প্রশাসন নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা এবং চিকিৎসাধীনদের ১৫ হাজার করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ও প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে দেড় লাখ করে টাকা দেবে বলে জানিয়েছে।


আমাদের দেশে যখনই কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটে তখনই সরকারের তরফ থেকে এমন সাহায্যের ঘোষণা শোনা যায়—হোক সে কারখানা দুর্ঘটনা, বাস দুর্ঘটনা কিংবা নৌযান দুর্ঘটনা। রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও সরকারের কাছে সাহায্যের দাবি জানাতে ভুলেন না। তবে তাদের এই দাবি যত না মানবিক বিবেচনা প্রসূত, তারচেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক অভিসন্ধিজাত, এ কথা সবাই জানেন। সরকারও তার মুখরক্ষা এবং বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এ জাতীয় দাবি মেনে নেয়। আজকের আলোচ্য ঘটনার বেলায় অবশ্য দাবি জানানোর আগেই প্রশাসন এবং মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে সাহায্যের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে বেশ প্রোঅ্যাক্টিভ মনে হচ্ছে।


দুর্ঘটনা পরবর্তী এরকম সাহায্যের ২টি দিক আছে। প্রথমত, এই ধরনের সাহায্যের মধ্য দিয়ে ঘটনার পেছনে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আড়াল করে তাকে বা তাদেরকে জনরোষ থেকে রক্ষা করার প্রয়াস। দ্বিতীয়ত, পরোক্ষভাবে ঘটনার দায়িত্ব সরকারের নিজের ঘাড়ে তুলে নেওয়া। কিন্তু দ্বিতীয় বিষয়টি আমাদের দেশে খুব একটা দৃশ্যমান নয়। বিদেশে, এমনকি আমাদের প্রতিবেশী ভারতে, এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে কোনো দুর্ঘটনার দায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ভারতের কিংবদন্তি নেতা লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর গল্প তো সবাই জানেন—যিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দুর্ঘটনার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। এমন আরও নজির সভ্য দেশে রয়েছে। এসবের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণ এবং জনস্বার্থের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা প্রকাশিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও এরকম দায়বদ্ধতার কোনো প্রমাণ জনগণের সামনে আমরা তুলে ধরতে পারিনি। উল্টো অনেকসময় দুর্ঘটনার পেছনে কোনো এক অদৃশ্য নন্দ ঘোষকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি নাহয়—'আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে' বলে স্রষ্টার ওপর সব দোষ চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস পাই। এসবের কারণও খুবই স্পষ্ট। সোজাসাপ্টা কথায়, আমাদের দেশে মন্ত্রী-মিনিস্টারগণ জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নন। তাই জনগণের কাছে জবাবদিহিতারও কোনো প্রশ্ন নেই। একথা সুবিদিত যে, প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির কারণে আমাদের মন্ত্রী মহোদয়গণ কেবলমাত্র তাদের দলের কাছেই দায়বদ্ধ। অনেক সময় দলের প্রতিও তাদের দায়বদ্ধতা খুবই দুর্বল, তাদের আসল দায়বদ্ধতা তাদের দলীয় প্রধানের কাছে। এর ফলে এই যে গত দেড় দশকে দেশে এতসব দুর্ঘটনা ঘটল, যার ফলে হাজারেরও বেশি প্রাণ অকালে ঝরল, তার কোনো একটিরও যথাযথ তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন হয়নি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও