কিছু প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন সংক্ষেপে র্যাব বাংলাদেশের একটি চৌকস আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা দেশের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও আনসার থেকে আসেন। এ বাহিনীতে সরাসরি কোনো সদস্য রিক্রুট করা হয় না। যাঁরা আসেন তাঁরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসেন, আর তাঁদের মেয়াদ শেষ হলে তাঁরা নিজ নিজ সংস্থায় ফিরে যান। র্যাবের সৃষ্টি ২০০৪ সালে। তখন খালেদা জিয়া চারদলীয় জোট সরকারের প্রধান ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। র্যাবের সদস্যদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ট্রেনিংয়ের মূল বিষয় ছিল উগ্র জঙ্গিবাদের উত্থান আর মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার বন্ধ করা।
খালেদা জিয়ার সরকার সে সময় এসব কাজে র্যাবকে তেমন একটা ব্যবহার করেনি। করেছে বিরোধী দল দমনে। এই সময় বিএনপি সরকার সন্ত্রাস দমনের নামে তাদের ভাষায় ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ নামে একটি সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করে, যাতে ৪৪ জন মানুষ র্যাবের গুলিতে বিনা বিচারে মৃত্যুবরণ করেন, যাঁদের অনেকেই নিরপরাধ অথবা বিরোধী দলের সমর্থক বা সদস্য ছিলেন। এসব হত্যাকাণ্ডকে দায়মুক্তি দেওয়ার জন্য বিএনপি সরকার সংসদে একটি দায়মুক্তি আইন পাস করে। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ নেতৃতাধীন সরকার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে সেই আইন বাতিল হয়ে যায়। এ পর্যন্ত র্যাবের এক হাজারের বেশি সদস্যকে তাঁদের কর্মপরিধির বাইরে কাজ করার জন্য বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জে র্যাবের হাতে সাতজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি খুন হলে র্যাবের অনেক সদস্যসহ ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডে আর ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে র্যাব গঠন হওয়ার পর থেকে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর র্যাব বাংলাদেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে যেমন তাক লাগানো ভূমিকা পালন করেছে, ঠিক একইভাবে দেশে মাদক ব্যবসাকে নির্মূল করতেও ব্যাপকভাবে তৎপর রয়েছে। ২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজান ঘটনার পর বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী বা জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটেনি। এই কৃতিত্বের বেশির ভাগ দাবিদার র্যাব, যা সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টও স্বীকার করেছে।