আমি চাই গাছ কাটা হলে শোক সভা হবে মন্ত্রিসভায়
নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমি বছার দুয়েক দৈনিক জনকণ্ঠে কাজ করেছি। তখন জনকণ্ঠ অফিস ছিল মতিঝিলে। আর আমার বাসা ছিল রাজাবাজারে। কাজ সেরে মধ্যরাতে বাসায় ফিরতাম অফিসের বেবি ট্যাক্সিতে। টু স্ট্রোক ইঞ্জিনের সেই বেবি ট্যাক্সি এখন পরিচিত ‘সিএনজি’ হিসেবে। মধ্যরাতে খোলা হাওয়ায় চুল উড়িয়ে বাসায় ফিরতে দারুণ লাগতো। কাকরাইল মোড়ে ডানে ঘুরলেই হঠাৎ একটা ঠান্ডা হাওয়া শীতল করে দিতো দেহ মন। কারণ কাকরাইলের মোড় ঘুরলেই রমনা পার্ক। এ শুধু আমার অনুভব নয়, রীতিমত গবেষণা করে দেখা গেছে, মতিঝিলের সাথে রমনা ও ধানমন্ডি লেক এলাকার তাপমাত্রায় বেশ ব্যবধান।
এখন যেটা রমনা, একসময় সেটা পরিচিত ছিল রমনা গ্রিন হিসেবে। আর শাহবাগ ছিল ঢাকার নবাবদের বাগান। রমনা আর শাহবাগ মিলে ছিল সবুজ বেষ্টনী। কিন্তু কালের গহবরে হারিয়ে গেছে তার অনেকটাই। আসলে বলা ভালো, আমাদের সর্বগ্রাসী লোভ গিলে খেয়েছে সেই সবুজ। মানুষের মধ্যে একধরনের আত্মহনন প্রবণতা আছে। আর বাঙালির মধ্যে জাতিগতভাবেই আত্মহনন প্রবণতা আছে। নিজের ভালোটা নাকি পাগলেও বোঝে। কিন্তু আমরা বুঝি না। খাল-বিল-নদী-নালা একটা দেশের জন্য কতটা দরকারি, কাগজে-কলমে আমরা বুঝি বটে; কিন্তু সুযোগ পেলেই নদী দখল করি, দূষণ করি। আপনি যে কোনো মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন, গাছপালা, সবুজ আমাদের কতটা দরকার। সবাই একবাক্যে বলবে, অনেক দরকার। কিন্তু সুযোগ পেলেই গাছ কেটে বিল্ডিং বানাবে। আমাদের এই আত্মহনন প্রবণতার মধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে অনেক নদী, ঢাকার খাল এখন শত চেষ্টায়ও উদ্ধার করা যাচ্ছে না। অনেক কষ্টে টিকে ছিল রমনা গ্রিনের কিছুটা স্মৃতিচিহ্ন। এবার বাণিজ্যের করাল থাবা সেই সবুজে, করাত চলছে গাছের গোড়ায়। নিজের পায়েই আমরা নিজেরা কুড়াল মারছি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মন্ত্রিসভা
- উন্নয়ন
- শোক
- গাছ কাটা