সালিশে তালাকের রায় শুনেই গৃহবধূর আত্মহনন

মানবজমিন নরসিংদী প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

প্রেম ভালবাসার পর বিয়ে। তার পরও প্রেম ভালবাসা ধরে রাখতে পারল না একটি জীবন। বনিবনা না হওয়ায় হয় গ্রাম্য সালিশ। সালিশে বিচারকরা দাম্পত্য জীবন বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত। তা যেন মানতে পারেনি গৃহবধূ পারভিন। বিচারকদের বিবাহ বিচ্ছেদের রায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় পারভিন। বিষ তার জীবন কেড়ে নেয়। হল ৪টি সন্তান এতিম। এর দায় কে নিবে। এখন জনমনে এ প্রশ্ন। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নরসিংদীর মাধবদীর পাইকারচর ইউনিয়নের সাগরদী গ্রামের সাইদ মিয়ার মেয়ে ও একই গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়ার স্ত্রী বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে পারভিন আক্তার(৪০) নামে এক গৃহবধু। এমন অভিযোগ করেছেন নিহত পারভিনের ছোট ভাই কাউছার মিয়া।  নিহতের বাবা সাইদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানা  সহ স্থানীয় বিচারকরা এক পক্ষের হয়ে কাজ করেছে। তাদের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের কারনেই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।নিহতের পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় প্রেমের পর পাইকারচর ইউনিয়নের সাগরদী গ্রামের সাইদ মিয়ার মেয়ের বিয়ে হয় একই গ্রামের ওসমান মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর এর সাথে। এটি স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই ২য় বিবাহ। কিন্তু বিবাহের কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এর জের ধরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরে সেটা সালিস পযর্ন্ত গড়ায়। এর জের ধরে সোমবার উভয় পক্ষকে নিয়ে মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানা ও পাইকাচর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর আলমসহ এলাকার মাতব্বরগন সালিসে বসেন। তবে সালিসে উপস্থিত হয়নি গৃহবধূ পারভিন। তার বাবা সাইদ মিয়া উপস্থিত ছিলেন। পরে স্বামীর পক্ষের কথা শুনে  বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত দেয় সালিশের বিচারকরা। বিয়ের কাবিন নামা এক লক্ষ পঞ্চাশ টাকার কথা থাকলেও  সালিশে মাত্র বিশ হাজার টাকা মেয়ের পিতাকে দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রস্তাব প্রদান করেন সলিশের বিচারকরা। কিন্তু এই রায় মানেননি পারভিনের বাবা। পরে এই খবর শুনে ক্ষোভে দু:খে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন চার সন্তনের জননী পারভিন আক্তার। পরে খবর পেয়ে পুলিশ নিহতে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এখবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সন্তানের মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়।নিহতের ভাই কাউছার মিয়া বলেন, সালিশে মাতব্বরদের চাপেই কারণেই জামাই আমার বোনকে তালাকে রাজি হয়েছে। সালিশে আমার বোনকে না রেখেই তারা নিজের ইচ্ছামত রায় দিয়েছে। যেখানে কাবিন আছে দেড় লক্ষ টাকার আর তারা রায় দিয়েছে ২০ হাজার টাকা। এই কারণেই অপমানে ও ক্ষোভে সে বিষ পান করে আত্মহত্যা করে।সাইদ মিয়া বলেন, ২০ হাজার টাকা দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদান্ত দেয় বিচারকরা। টাকা দিয়ে আমি কি করবো? বিচারকদের চাপিয়ে দেয়া সিদান্তের কারনেই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।পাইকাচর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাহাঙ্গীর দুইটি বউকে নিয়ে ঠিকমতো সংসার চালাতে পারে না। এজন্য সে সালিশে দ্বিতীয় স্ত্রী পারভিনকে তালাক দিবে বলে জানায়। কিন্তু পারভিন এখানে উপস্থিত না থাকায় কোন রায় হয় নি। আর জরিমানার ব্যাপারে একেকজন একেক কথা বললে ও কোন টাকা নির্ধারণ করা হয়নি। আর সালিশে তালাক দেয়ার জন্য কোন চাপ প্রয়োগ করা হয় নি।  এ ব্যাপরে মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।  মাদবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সৈয়দুজ্জামান বলেন, একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে এমন খবরের ভিত্তিতে পুলিশ গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। পরে জানতে পেরেছি এর আগে স্থানীয়রা উভয় পক্ষকে নিয়ে একটি সালিস বৈঠক করেছে। তবে এখন পযর্ন্ত কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও