বিপুল পরিমাণ বনভূমি বেদখলে।। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উদ্ধারের ব্যবস্থা নিক
.tdi_2_b78.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_2_b78.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});বিশাল এলাকাজুড়ে নির্বিচারে পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হয়েছে বসতি। চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন ও হাটহাজারী ভূমি সার্কেলের জালালাবাদ মৌজায় মাদ্রাসার নামে সরকারি জমি দখল করে চলছে প্লট ব্যবসাও। অভিযোগ রয়েছে, মাদ্রাসা গড়ার আড়ালে সরকারি খাস জমি দখল করে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। হাটহাজারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস বলছে, জালালাবাদ তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার নামে ৬ একরের বেশি সরকারি খাস জমি দখল করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, বিশাল এলাকাজুড়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার বর্গফুট পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে মাদ্রাসার কর্ণধার বলছেন, তাঁর নামে কোন জমি নেই দৈনিক আজাদীর ১৬ আগস্ট সংখ্যায় এ খবর প্রকাশিত হয়। যাঁরাই এই বিশাল সরকারি জমি দখল করুন না কেন, এভাবে সরকারি খাস জমি দখল করা নতুন কোন ঘটনা নয়। বন বিভাগের রেকর্ডভুক্ত এক লাখ একরের বেশি জমি বেদখলে চলে গেছে। একটি দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে হলে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ বনভূমি সংরক্ষণ করতেই হয়। তা সত্ত্বেও বন সংহারে মানুষের এতটুকু দ্বিধা নেই। আর এতেই হচ্ছে লাখ লাখ একর বনভূমি উজাড়। বনবিভাগের তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে বেদখল হওয়া বনভূমির পরিমাণ দু’লাখ ৮০ হাজার একর। এর মধ্যে কাগজেপত্রে কোন ধরনের সমস্যা না থাকা বেদখলিকৃত বনভূমির পরিমাণও কম নয়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির উপস্থাপিত তথ্যে এর পরিমাণ নিদেনপক্ষে এক লাখ একরের বেশি বলে জানা গেছে। বেদখলে থাকা বনভূমির সর্বশেষ অবস্থা দখলকারীদের কতবার আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে, নিয়োজিত আইনজীবীদের ভূমিকা কী ছিল, কর্তৃপক্ষগুলো কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে আলোচ্য কমিটি। এক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি ও বেদখল হওয়া বনভূমি উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যকর উদ্যোগই কাম্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, গত প্রায় এক দশকে বন উজাড় ও দখল হতে হতে দেশের বনভূমি তলানিতে এসে ঠেকেছে। এশিয়ার দেশগুলোয় বনের পরিমাণ সবচেয়ে কমের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ আর মাত্র দুটি দেশের পাকিস্তান ও মঙ্গোলিয়া। দেশের বনভূমি আজ যে ক্রমহ্রাসমান তার কারণ প্রাকৃতিক নয়, বরং মানবসৃষ্ট। দিনে দিনে আমরাই বনজঙ্গল উজাড় করে চলেছি। কিছু স্বার্থান্ধ মানুষের অপরিণামদর্শী কাজকর্ম, দায়িত্বহীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনাহীনতা দূরদৃষ্টির অভাব এবং বাছবিচারহীন অবকাঠামো নির্মাণই সাধারণভাবে এজন্য দায়ী। বন ধ্বংসের কারণে এরই মধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বনভূমি থাকা অপরিহার্য। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে দেশে এখন বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নানাদিক থেকে উদ্যোগ নেওয়ায় দেশে এখন বনভূমির পরিমাণ বেড়ে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে তা ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু বেদখল হওয়া বনভূমি উদ্ধার করা না গেলে তা কতটুকু সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। সুতরাং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের জোরালো তৎপরতা অপরিহার্য। কেবল অভ্যন্তরীণ সংরক্ষিত বনাঞ্চলই যে ক্রমে কমছে তা নয়; দেখা যাচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনও নানা দিক থেকেই ক্রমসংকোচনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এটা আরও ভয়ংকর। কারণ এখন যেমন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগে আমাদের প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে, তেমনি এর বনজ সম্পদ দেশের অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখছে। তাই সুন্দরবনসহ সামগ্রিক বনাঞ্চল রক্ষায় লাগসই পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। দেখা যাচ্ছে, পর্যাপ্ত বনভূমি থাকার পরও ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম নিজ নিজ দেশের বনাঞ্চল বাড়ানোর প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। এসব দেশে সামাজিক বন বিভাগ অ্যাগ্রো ফরেস্ট্রি, কমিউনিটি ফরেস্ট্রি, কমার্শিয়াল ফরেস্ট্রি, আরবান ফরেস্ট্রিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আমাদেরও সেদিকেই যেতে হবে। আগামী দিনগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত আরও বাড়বে। এমন পরিস্থিতিতে বনাঞ্চল যতটা অবশিষ্ট রয়েছে ততটা বনাঞ্চল সুরক্ষায় বনবিভাগের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগী হতে হবে। পাশাপাশি বনভূমি বিনষ্ট করে যারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে, আখের গুচাচ্ছে সেইসব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং কঠোর সাজা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে বনসম্পদ, জাতীয় সম্পদ। এসব ব্যক্তি ও গোষ্ঠী জাতীয় সম্পদ অপহরণ করেছে। সর্বোপরি বেদখলে থাকা বনের জমি উদ্ধারে বলিষ্ঠ ব্যবস্থা নিতে হবে। বন সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার অনেক শোনা গেছে আমাদের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে। তারা নতুন বন সৃজনের নানা আয়োজনের কথাও বিভিন্ন সময়ে শুনিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে খুব একটা দৃশ্যমান নয়। আমরা আশা করি, এখন থেকে সত্যিকার অর্থে কাজের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হবে।.tdi_3_b13.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_3_b13.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});