করোনার হটস্পট চিহ্নিত এলাকাগুলোতে স্বাভাবিক দাফনও অতিরিক্ত বেশি
সারা দেশের সিটি করপোরেশন এলাকায় গত পাঁচ মাসে হওয়া দাফনের তুলনায় কেবল নারায়ণগঞ্জে ২৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি দাফন হয়েছে। শুরু থেকেই করোনার হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হওয়া এই জায়গায় জানুয়ারির চেয়ে এপ্রিলে ২৭০টি দাফন বেশি হয়েছে। কবরস্থান সংশ্লিষ্ট মোহরার, খতিব ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, কয়েকটি সুনির্দিষ্ট জেলা ছাড়া স্বাভাবিক সময়ের থেকে খুব বেশি দাফন বাড়েনি। তবে যেসব জেলা করোনার হটস্পট সেসব জেলায় স্বাভাবিক দাফনও অনেক বেড়েছে। তারা বলছেন, সিটি করপোরেশনে থাকা দাফনের সংখ্যার বাইরে পারিবারিক কবরস্থান, মাজারভিত্তিক কবরস্থানে দাফন করা হয়ে থাকে। যেগুলোর বিষয়ে সিটি করপোরেশন অবহিত নাও থাকতে পারে।
ঢাকা বাদে সারা দেশের ৯টি সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানের কবরস্থানগুলোর সংখ্যা অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। কবরস্থান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে জানুয়ারি থেকে মে এই পাঁচ মাসে দাফন হয়েছে ২৫৯ জন, নারায়ণগঞ্জে ১ হাজার ৮৪১, চট্টগ্রামে ২৫৯, খুলনায় ১ হাজার ৬৭৪, রাজশাহীতে ১ হাজার ৯০, সিলেটে ৪২৯, বরিশালে ২৫৯, ময়মনসিংহে ৬৬৪ এবং রংপুরে ১১৪টি দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এই পর্যন্ত সব সিটি মিলিয়ে মোট দাফন ৬ হাজার ৫৮৯টি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক দাফন হয়েছে নারায়ণগঞ্জে, যার পরিমাণ সারা দেশের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
উল্লেখ্য, দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয় নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুরের শিবচরে। পরে ঢাকার টোলারবাগসহ ঢাকার বাইরে ১৮ জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এপ্রিলে করোনাভাইরাস ছড়ানোর একটা অন্যতম বড় স্থান হয়ে দাঁড়ায় নারায়ণগঞ্জ। সারা দেশেই নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কোভিড-১৯ রোগী পাওয়ার খবর মেলে সে সময়। জতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ৯ এপ্রিলের ব্রিফিংয়ে জানান, নারায়ণগঞ্জকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হোসেনের তথ্য মতে সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ৩৩টি কবরস্থান ও ৩টি শ্মশান রয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সেখানে দাফন হয়েছে ১ হাজার ৮৪১টি। এর মধ্যে এপ্রিলে সর্বোচ্চ ৫৭১টি। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে থাকা এই কবরস্থান ও শ্মশানে গত জানুয়ারিতে দাফন ও দাহ হয় ৩০১টি। পরের দুই মাস ফেব্রুয়ারি ও মার্চে যথাক্রমে ২৭৮ ও ২৬০টি। এপ্রিলে সর্বোচ্চ ৫৭১টি হলেও মে মাসে কিছুটা কমে দাফনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩১-তে। আবুল হোসেনের দেওয়া তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় এ সংখ্যা কমেছে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের ইন্সপেক্টর দীপক মজুমদারের দেওয়া তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট লাশ দাফন হয়েছে ৫২৯টি এবং ১৪৫টি দাহ করা হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে দেড়শ’ জনের। মার্চে ১৩৬। এবং তারপর প্রতিমাসে কমতে দেখা গেছে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকায় মে মাসে ১১৭ জনের দাফনের খবর পাওয়া গেছে। তবে এ সংখ্যা নিবন্ধিত হওয়া সংখ্যা। এর বাইরে পারিবারিক কবরস্থানে অনেক দাফন হয়, যেগুলোর বিষয়ে সিটি করপোরেশন অবহিত নাও থাকতে পারে।
রংপুর সিটি করপোরেশন
রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্ম ও মৃত্যু শাখার নিবন্ধন কর্মকর্তা মোহম্মদ আলীর দেওয়া তথ্যমতে, এলাকার ৩৩টি ওয়ার্ডে গত ৬ মাসে ১১৪ জন মারা গেছে। এদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৯ জন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে মারা গেছে ২১ জন, ফেরুয়ারি মাসে ১৩, মার্চ মাসে ২৪, এপ্রিল মাসে ২৭ এবং মে মাসে ২৯ জন। এই এলাকায় জুন মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও দুজন মারা গেছে। নিবন্ধন কর্মকর্তা মোহম্মদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রংপুরে মৃত্যুহার তুলনামূলক কম। সিটি করপোরেশনের অধীন দশটি কবরস্থান রয়েছে। এগুলোতে নিবন্ধিত গত পাঁচ মাসের দাফন সংখ্যায় খুব বেশি তারতম্য নেই। তবে জুনে এ সংখ্যা কিছুটা বাড়তির দিকে।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- সবচেয়ে বেশি
- দাফন
- স্বাভাবিক মৃত্যু
- করোনার প্রভাব
- করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
- বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
- সেলিনা হায়াৎ আইভী
- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
- বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)
- সিলেট সিটি কর্পোরেশন
- খুলনা সিটি করপোরেশন
- নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক)
- গাজীপুর সিটি করপোরেশন
- ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন
- রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন
- খুলনা
- গাজীপুর
- চট্টগ্রাম
- ঢাকা
- বরিশাল
- ময়মনসিংহ
- রংপুর জেলা
- রাজশাহী
- সিলেট জেলা