বাবাদের নিয়ে তারকাদের স্মৃতিচারণ
বাবা মানে নির্ভরতা। বাবা নিখাদ আশ্রয়। উত্তপ্ত সূর্যের তলে সন্তানের শীতল ছায়া। বাবা মানে ভরসা। আবার বাবা শাশ্বত, বাবা চির আপন। বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব বাবা দিবস আজ পালন করা হয়। সে হিসেবে আজ বিশ্ব বাবা দিবস।
এদিনে নিজেদের বাবাদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন শোবিজের বেশ কয়েকজন তারকা। তাদের কথা তুলে ধরেছেন নাজমুল আহসান ঈশিতা আমার বাবাই এই পুরো পৃথিবীতে একমাত্র মানুষ যিনি আমাকে সারাজীবন ভালোবেসে গেছেন। আমার আব্বাকে খুশী করতে স্কুলে আমাকে ভালো রেজাল্ট করতে হয়নি। নতুন কুঁড়িতে চ্যাম্পিয়ন হতে হয়নি। নাটকে ভালো অভিনয় করতে হয়নি। কিন্তু তারপরও তিনি আমাকে সারাজীবন শুধু ভালোই বেসেগেছেন। আমার আব্বা আমার নিয়ম ভাঙ্গার সঙ্গী।
আমারই কোন অন্যায় আবদারের প্রশ্রয়দাতা আমার আব্বা। আবার আমার আনন্দেরও কারণ আব্বা। তিনি একজন সর্বশ্রেষ্ঠ বাবা। আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া আমার অনেক বড় নিয়ামত আমার বাবা। পপি অভিনয়ের শুরুতে পরিবারের কারো তেমন কোন সমর্থন ছিলোনা যে আমি নায়িকা হিসেবে সিনেমাতে অভিনয় করি। আমার বাবা শুরু থেকেই সিনেমাতে অভিনয়ের বিপক্ষে ছিলেন। কিন্তু তারপরও যখন কাজ শুরু করেছি, একের পর এক ভালো ভালো গল্পের সিনেমাতে কাজ করতে থাকি। তখন আব্বু আমাকে সমর্থন দেয়া শুরু করেন।
যে কারণে পরবর্তীতে আব্বুর অনুপ্রেরণাতেই আমি সিনেমাতে নিজেকে আরো নিবেদিত করে কাজ শুরু করি। আব্বু চুপচাপ স্বভাবের একজন মানুষ। প্রয়োজনের বাইরে কথা বলতে অভ্যস্ত নন। যথেষ্ট বিনয়ী একজন মানুষ। আমার আব্বুর জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন আব্বু সুস্থ থাকেন, ভালো থাকেন। অপূর্ব ছোটবেলা থেকেই আমি আমার বাবার আদর্শে বেড়ে উঠেছি, বড় হয়েছি।
বাবার আদর্শের সবচেয়ে যে বিষয়টি আমি আমার নিজের মধ্যে লালন করি তা হলো, বাবা সবসময়ই সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে একই সুঁতোয় গেঁথে থাকতে ভালোবাসতেন। একসঙ্গে থাকার মধ্যে সবসময়ই তারমধ্যে ভীষণ ভালোলাগা কাজ করতো। পারিবারিক যে বন্ধন সেটাকে এড়িয়ে যাবার কোনো সুযোগ নেই। তাই বাবার আদর্শকে আমার নিজের মধ্যে লালন করে বাবার মতো করেই সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে ভালোবাসি আমি। আমি যেমন বাবার স্নেহ মায়া মমতায় বেড়ে উঠেছি, তাই আমিও চাই আমার মায়া মমতা স্নেহ’তে আমার সন্তান আয়াশ বেড়ে উঠার পাশাপাশি আমার বাবা মানে আয়াশ তার দাদার স্নেহ মায়া মমতাতেও বেড়ে উঠুক। আমার বাবা আমাকে ছোট্ট বেলায় অপু বলে ডাকতেন, এখনো তাই ডাকেন।
কণা ছোটবেলা থেকেই আব্বুর সঙ্গে সম্পর্কটা আমাদের দূরত্বের নয় বন্ধুত্বের। ছোটবেলা থেকেই আব্বুর সঙ্গে সবকিছুই শেয়ার করতাম। মগবাজার গার্লস স্কুলে পড়ার সময় আমি আর আমার বড় বোন একই রিক্সায় আব্বুর সঙ্গে যেতাম। আমি আব্বুর কোলে বসতাম, আর আপু পাশে। আমি আরেকটু বড় হবার পর আমি উপরে বসতাম। এক সময় একসঙ্গে আর স্কুলে যাওয়া হয়ে উঠতোনা। এই বড় বেলায় এসে ছোটবেলার সেই আব্বু, আমি আর আপুর একই রিক্সায় করে স্কুলে যাওয়ার দিনগুলো খুউব মসি করি। আমি আমার বাবার সততা এবং ক্ষমা করে দেয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে পেয়েছি। আমি আমার পেশায়, আমার কাজে যথেষ্ট সৎ থাকার চেষ্টা করি এবং আমি আমার বাবার মতোই ক্ষমাশীল।
মিম যেহেতু আমার বাবা শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন তাই বিভিন্ন সময়ে যখন বাবার কর্মক্ষেত্রে আমি গিয়েছি, নিজ চোখে দেখেছি বাবাকে সবাই কতো সম্মান করেন, ভালোবাসেন। আবার সেই বাবাই যখন আমার সঙ্গে এখন কোথাও যান তখন তিনি নিজ চোখে উপভোগ করেন সেই বাবারই মেয়েকে দর্শক কতোটা ভালোবাসছেন, শ্রদ্ধা করছেন। বাবার বুক তখন আনন্দে ভরে যায়। আমারও চোখে তখন জল চলে আসে। বাবা আমাকে ছোটবেলায় টুকটুকি বলে ডাকতেন। আবার একটু বড় হবার পর বাবা আমাকে বাবু বলে ডাকা শুরু করেন।
এখনো আমাকে বাবা বাবু বলেই ডাকেন। তিনি আমার জীবনের পুরোটাতে এমনভাবে মিশে আছেন বাবা ছাড়া পৃথিবীতে আমি একটি দিনও কল্পনাও করতে পারিনা। সম্রাট দেশীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাক আমার বাবা- এই প্রাপ্তি আমাকে গর্বিত করে। পর্দার অনেক বড় নায়ক ছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন নায়করাজ উপাধি। নায়করাজের ছোট ছেলে আমি ভাবতে ভালো লাগে। আবার কষ্ট লাগে তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার আদর্শ জড়িয়ে আছে আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসে-বিশ্বাসে আর প্রাত্যহিক কাজকর্মে।
বাবা জীবনে যে সংগ্রাম করেছেন, কষ্ট করেছেন, পরিশ্রম করেছেন, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি আমাদের পুরো পরিবারকে যত্নের সঙ্গে ভালোবাসার সঙ্গে একই সুতায় বেঁধে রেখেছিলেন, তা আমাদের কাছে বড় একটা শিক্ষণীয় বিষয়। শত ব্যস্ততার মাঝেও বাবা আমাদের প্রচুর সময় দিয়েছেন। মেহজাবিন বিশ্বের বর্তমান যে পরিস্থিতি এই পরিস্থিতিতে আসলে বাবার কাছে একটিই চাওয়া তিনি যেন নিজের যত্নটা নিজেই যেন নেন। সবরকমের হতাশা থেকে যেন দূরে থাকেন।
বিশ্বে এই মুহূর্তে যতো সমস্যা তা নিয়ে যেন খুব বেশি দু:শ্চিন্তা না করেন। প্রত্যেক সন্তানের চোখেই বাবা সুপার হিরো, আমার চোখেও আমার বাবা একজন সুপার হিরো। কারণ এমন কিছু নেই যা বাবা আমাদের জন্য করেননি। সবচেয়ে বড় কথা আমার বাবা তার প্রত্যেক সন্তানের উপর আস্থা রেখেছেন। আমার বাবা সবসময়ই এটা বলেন আমরা যে কাজই করিনা কেন সেটাতে যেন আমরা শীর্ষে যেতে পারি। পড়াশুনার ব্যাপারে তিনি স্বাধীনতা দিয়েছেন।
তবে ভালো ফলাফলটা চেয়েছেন তিনি। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে বাবা এবং মায়ের কাছে একটিই চাওয়া তারা দু’জনই যেন, ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন। হিমি আমার বাবা আট বছর সাউথ কোরিয়াতে ছিলেন। আমার আব্বুর সঙ্গেই বন্ধনটা দৃঢ়, কারণ আমি ছোট মেয়ে। বাবা সহজ সরল আদুরে। আমি কোন ভুল করলে আম্মু আব্বুর কাছে নালিস করলেও আব্বু শাসন না করে আদর করতেন।