টেস্ট নিয়ে ভোগান্তি ও চাহিদার তুলনায় যোগান অপ্রতুল
করোনাভাইরাস শনাক্তের টেস্টের জন্য দেশের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাড়িতে এসে নমুনা সংগ্রহের সিরিয়ালের যেন কোন শেষ নেই।
আবার টেস্ট করাতে পারলেও সেটার ফল পেতে পেরিয়ে যাচ্ছে চার থেকে চৌদ্দ দিন। যার চরম মূল্য দিতে হয়েছে ঢাকার বাসিন্দা পারমিতা ইসলামের পরিবারকে।
সময় মতো টেস্ট না হওয়ায় সম্প্রতি তার চাচা চিকিৎসার অভাবে মারা যান।
মিস ইসলামের চাচা ছিলেন একজন কিডনির রোগী এবং তিন চারদিন পর পর তার ডায়ালিসিস করতে হতো।
কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কোভিড, নন-কোভিড কোন হাসপাতাল তার টেস্টের রিপোর্ট ছাড়া ডায়ালিসিস করাতে রাজি হয়নি।
এজন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরুরি হটলাইন নম্বরগুলোয় ফোন করে অনুরোধ জানানো হয় যাতে কেউ দ্রুত বাড়িতে এসে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। কিন্তু কোথাও কোন সাড়া মেলেনি।
অনেক চেষ্টার পর স্বাস্থ্যকর্মীরা নমুনা সংগ্রহের জন্য আসেন ঠিকই। তবে সেটা ১০ দিন পর। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
মিস ইসলাম বলেন, "নন কোভিড হাসপাতাল বলেছে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া তারা রোগী ভর্তি করবে না, আবার কোভিড হাসপাতালে বলেছে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট ছাড়া চিকিৎসা দেবে না। এখন এই রিপোর্টের জন্য সময় মতো ডায়ালিসিস করাতে না পেরে চাচা নমুনা সংগ্রহের দিনেই মারা যান।"
মিস ইসলামের চাচা মারা যাওয়ার আরও দুই সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তার সেই নমুনা পরীক্ষার ফল এখনও তাদের হাতে আসেনি।
এভাবে টেস্টের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, বাড়িতে এসে নমুনা সংগ্রহ করার জন্য দীর্ঘ সিরিয়াল এবং টেস্টের ফল পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা যেন নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংকটে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ
সবচেয়ে সংকটে রয়েছে উপজেলা বা প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষ।
জরুরি টেস্ট করাতে তাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে আসতে হচ্ছে। এতোদূর এসেও টেস্ট করাতে পারবেন কিনা সেই নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কেউ।
আবার যে টেকনোলজিস্টরা নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরীক্ষা করেন, তাদের দক্ষতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
কারণ করোনাভাইরাসের লকডাউনের সময়ে তাদের বেশিরভাগের প্রশিক্ষণ হয়েছে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।
দক্ষতার অভাব থাকায় টেস্টের ফলাফল ভুল আসার আশঙ্কা থেকে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের নমুনা কিভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে, সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং পরীক্ষা করা হচ্ছে সেটার ওপর নির্ভর করবে ফলাফল কতোটা নির্ভুল আসবে। এই কাজের জন্য দক্ষ জনবলের দরকার। যে কাউকে দিয়ে এটা হবে না।