বিসিএসের এক পরীক্ষা-নিয়োগেই যায় ৩ বছর
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনকে (পিএসসি) ২ হাজার ২৪ জন কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য ২০১৭ সালের ৫ মার্চ চাহিদা পাঠিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ২০ জুন এই নিয়োগের জন্য ৩৮তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে পারেনি পিএসসি। ফলের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ৯ হাজারেরও বেশি প্রার্থী এখন একদিকে যেমন হতাশায় ভুগছেন, আরেকদিকে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের তারুণ্য।
অবশ্য শুধু ৩৮তম বিসিএস নয়, বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ ও যোগদান করতে করতেই দুই থেকে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। তবুও সামাজিক নিরাপত্তা, ভালো বেতনকাঠামো ও গত এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে লাখো তরুণের। ফলে দেখা যাচ্ছে একেকটি বিসিএসে এখন চার থেকে পাঁচ লাখ তরুণ অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু পরীক্ষা, চূড়ান্ত ফল, পুলিশ যাচাই, যোগদান এসব মিলিয়ে নিয়োগে লেগে যাচ্ছে তিন বছরেরও বেশি সময়। এই দীর্ঘসূত্রতার কারণে লেখাপড়া শেষে পরীক্ষা ও চাকরি পেতেই তারুণ্যের গুরুত্বপূর্ণ সময় চলে যাচ্ছে জীবন থেকে। অথচ উন্নত দেশ কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশে এতো সময় লাগে না।
৩৮তম বিসিএসের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে অন্তত দুই হাজার প্রার্থী তাদের হতাশার কথা জানিয়ে দ্রুত ফল প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য পিএসসিকে অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যদিকে করোনার কারণে পিএসসি পড়েছে বিপাকে। পিএসসির চেয়ারম্যান, সদস্য, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ বেশিরভাগ নীতি নির্ধারণী কর্মকর্তার বয়স ষাটের কম-বেশি। ফলে এই সময়টায় তারা কীভাবে কাজ করবেন, তা নিয়েও বিপাকে পড়েছেন। তবে পরীক্ষার্থীরা এখন আর দেরি সইতে নারাজ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করে ফলাফলের অপেক্ষায় থাকা এমন একজন প্রার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একসময় ভয়াবহ সেশনজট ছিল। এখন আর সেটি নেই। চার বছরেই এখন স্নাতক শেষ হচ্ছে। কিন্তু এরপরে বিসিএসে পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় চলে যাচ্ছে। যেটা ফের আবার অনার্স-মাস্টার্সের সমান। এতো দীর্ঘ সময় পৃথিবীর আর কোনো দেশে লাগে বলে আমাদের জানা নেই।’
আরেক প্রার্থী বলেন, ‘পিএসসি বিসিএসে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পেরেছে। এটা যেমন সত্যি, তেমনি দীর্ঘসূত্রতা কমাতে পারেনি সেটাও সত্যি। বিসিএসের এই দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনতেই হবে। আর ৩৮ এর ফল এই মাসেই দিতে হবে।’
৩৮তম বিসিএসের ফল প্রকাশের দীর্ঘসূত্রতার কারণ জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘গত বছরের জুলাইতে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার পর ৯ হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থীর ভাইভা নিতে হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমরা মার্চের শেষ বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ফল প্রকাশের লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু করোনার লম্বা ছুটিতে আটকে গেছে সেই ফল।’
কবে নাগাদ ফল প্রকাশ করা হবে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘যদি রাত-দিন জেগে থেকে কাজ করে কালই ফল দেওয়া যেত সেটাই আমি করতাম। কিন্তু করোনার কারণে চাইলেও অনেক কিছু করা যায় না। তবে আমরা উপায় খুঁজছি। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই আমরা ৩৮তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করব।’