বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস পড়ে আছে
বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি স্থাপন করা হয়েছে। সে কারণে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাত্র ৪৩ শতাংশ ব্যবহার করা হয়, বাকি ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্র ভাড়া দেওয়া হয়। এ কারণে বাংলাদেশে বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। গত অর্থ বছরে অলস বসিয়ে রেখে এসব বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। এ কারণে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না করার সুপারিশ করা হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সোমবার। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের প্রকৃত চাহিদনা পুনরায় নিরুপ করার সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ সংস্থাটি, তার আগে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা অর্থনীতির জন্য ভাল হবে না বলে মত দিয়েছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনোমিকস ফাইনান্সিয়াল অ্যানালিসিস (আইইইএফএ) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক গবেষণা করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি সোমবার তাদের ওয়েব সাইটে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের ওপর 'বাংলাদেশ পাওয়ার রিভিউ ওভার ক্যাপাসিটি, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট, সাবসিডিজ অ্যান্ড ট্যারিফ আর সেট টু রাইজ ইভেন ফাস্টার' শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আইইইএফএ। গত বছরের ২৩ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলো 'চাহিদা নেই, তবু নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র' একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, দেশের মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের পঞ্চাশ শতাংশ অলস বসে থাকছে। এসব অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্র ভাড়ার কারণেই বাড়ছে বিদ্যুতের দাম।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া বেসরকারি ও সরকারি কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্রলোর বিদ্যুৎ কেনার স্বল্প (রেন্টাল) ও দীর্ঘমেয়াদি (আইপিপি বা ইন্ডিপেডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) চুক্তি করে থাকে। এসব কেন্দ্রগুলোতে ব্যবহৃত তেল, গ্যাস, কয়লা বা জ্বালানির মূল্য দেয় পিডিবি, দেওয়া হয় বিদ্যুতের দাম, সারা বছর কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি ইউনিট অর্থ বরাদ্দ থাকে। এ ছাড়া কেন্দ্রটির একটি ভাড়া দেওয়া হয় যা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নামে পরিচিত। যখন কোনো কেন্দ্র থেকে সরকার বিদ্যুৎ নেয় না তখন এনার্জি ও বিদ্যুতের দাম দেওয়া বন্ধ থাকে কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জ বা কেন্দ্রভাড়া ও রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ ঠিকই পরিশোধ করতে হয়। একটি ১০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রকে বছরে শুধু কেন্দ্র ভাড়াই দিতে হয় প্রায় ৯০ কোটি টাকা। সে কারণে বিদ্যুতের প্রয়োজন না থাকলে কেন্দ্র অলস বসে থাকলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারের লোকসান হয়। দেশে এখন বিদ্যুৎখাতের সর্বমোট উৎপাদন সক্ষমতা ১৯ হাজার ৬৩০মেগাওয়াট। গড়ে এ সময় উৎপাদন হচ্ছে সাত থেকে আট হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা না থাকায় বাকি ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো বসে থাকছে। অথচ একই সময় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে সারা দেশে বিশেষত গ্রাম ও মফস্বলে বিদ্যুৎ এখনো অনেক লোডশেডিং হয়।
আইইইএফএ'র প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ২০১০ সালে একটি বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা করে। এটি ২০১৬ সালে ফের এটি সংশোধন করে। এই মহাপরিকল্পনায় দেশটিতে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা বাড়াতে আমদানিকৃত কয়লা এবং তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি ) ওপর জোর দিয়েছে। এ ধরণের পরিকল্পনা অন্যান্য দেশে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতের আর্থিক সক্ষমতা তলানিতে নিয়ে যাবে। করোনাভাইরাস মহামারি এ পরিস্থিতি আরও শোচনীয় করে তুলবে। বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুসারে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ অব্যাহত থাকলে ২০২৯-৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হবে প্রকৃত চাহিদার চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। অলস পড়ে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেন্দ্রের বিপুল পরিমাণ কেন্দ্রভাড়া গুনতে হবে। বিশ্বের বিভিন্নদেশে প্রয়োজনের তুলনায় বাড়িত বিদ্যুৎ বড় উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ কারণে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প বাতিলের নজির তৈরি হচ্ছে।
সম্প্রতি চীনা বিনিয়োগে মিশরে ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎপ্রকল্প অনির্দিষ্টকালের জন্যস্থগিত করেছে দেশটি। গবেষণার প্রধান বিশ্লেষক সাইমন নিকোলাস বলেন, অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব আমলে নিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির যে পূর্বাভাস আমরা করেছি, সে অনুসারে হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রয়োজনের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি থাকবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও কমে যাবে এবং ২০২৯-৩০ সাল নাগাদ চাহিদা আগের পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক কম হবে। এতে অলস বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্র অর্থনীতির জন্য অসনীয় হয়ে উঠবে।কোভিড-১৯ মহামারীর আগে থেকেই পিডিবি ব্যাপক লোকসানে ছিল। গত অর্থ বছরে পিডিবিকে দেওয়া সরকারের ভর্তুকি আট হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কমদামে বিদ্যুৎ বিক্রি এবং লোকসান সামলানো ও নগদ অর্থের ঘাটতি মেটানোর জন্য এই ভর্তুকি দিতে হয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য তিন শিক্ষা: আইইইএফএ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়লাবিদ্যুতের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতার জন্য ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিদ্যুৎ কোম্পানী পিএলএন আর্থিক খেসারত দিচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। ইন্দোনেশিয়ার পরিণতি থেকে বাংলাদেশের তিনটি বিষয় শেখার আছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। এক. ইন্দোনেশিয়ায় কয়লাভিত্তিক আইপিপিগুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়। এতে ব্যাপকভাবে সরকানি ভর্তুকি বাড়তে থাকে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
We use cookies to ensure you get the best experience on our website.