যে বীরের জন্মে ধন্য দেশ
কোভিড-১৯ এর ব্যাপক সংক্রমণ সংক্রান্ত নানামুখী জটিলতার মাঝে যখন আমি সাহসীদের মধ্যে অতি সাহসী শহীদ ভ্রাতা সেলিম এবং তাঁকে নিয়ে মায়ের কষ্ট, বাবার কষ্ট তথা পারিবারিক বিপর্যয় নিয়ে ভাবছি, যখন জীবাণু আক্রমণে বিপর্যস্ত সন্তান ডা. আদিবকে নিয়ে ভাবছি তখন সুরা বাকারার ১৫৩ ও ১৫৪ আয়াত কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনে।
ওই আয়াতে বলা হয়েছে- ‘হে বিশাসীগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন, যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বোঝো না।’
এটি যাকে নিয়ে লিখছি তিনি মিরপুর মুক্তিদাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লে. সেলিম। আগামীকাল ১৯ মে এই অকুতোভয় বীর তথা কৃতি অ্যাথলেট ও অংকবিদের জন্মদিন। আজ তাঁর সকল অবদান আড়াল করার চেষ্টা চলছে। বেলোনিয়া যুদ্ধে তাঁর অবদানও মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। এর কারণ খুঁজে দেখছে তার সহযোদ্ধারা, কী কারণে কোন শত্রুতা বা স্বার্থের কারণে এটা হচ্ছে তাও তারা দেখছে।
অথচ এই বীরযোদ্ধা ৭০-এর নির্বাচন থেকে বাংলার মুক্তিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। স্থানে স্থানে তাঁকে স্মরণ করে তার সহযোদ্ধারা। যে শিশুটি ১৯৫৪-এর এক শীতের সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুনিয়র হাইস্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফল দেখিয়ে শিক্ষকদের মুগ্ধতায় ডুবিয়ে দিয়েছিল এবং ওই মফস্বল শহরে ভুখা মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল সেই শিশুটিই সেলিম। শৈশব থেকে সে হয়ে উঠেছিল অংকের জাদুকর।
শিশুবয়স থেকেই মা ও মাতৃভূমি একটি বড় জায়গা করে নেয় শিশু সেলিমের মনে। লেখাপড়া ও খেলাধুলায় চৌকস শিশুটি বড় হয়ে ১৯৬৪ সালে ঢুকে পড়ে ফাদার টিমের স্নেহছায়ায়, নটরডেম কলেজে। সেখান থেকে ১৯৬৭ সালে সে ভর্তি হয় রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে; মাঝখানে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েও শেষে তা ছেড়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে বেছে নেয় নিজের ভবিষ্যৎ হিসেবে। জ্যাভলিন, হ্যামার, ডিসকাস, হার্ডেল, সাঁতার; ফিল্ড ও ট্র্যাক- ইনডোর ও আউটডোরের একাধিক গেমসে চ্যাম্পিয়ন ছিল সেলিম।
ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে যেমন ৬৯-এর আন্দোলনে সে অসাধারণ ভূমিকা রাখে, তেমনি মানবিকগুণে বন্ধুবাৎসল্যে রাজশাহীর মতিহারে সবার প্রাণের মণি হয়ে ওঠে; প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠে নিজ কলেজের শিক্ষক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আসগর ও ড. জোহার কাছে। এই সেলিম নিজেকে উজাড় করে দেয় ৭০-এর নির্বাচনে এবং ওই সালের প্রলয়ঙ্করী জলোচ্ছ্বাসে মানুষের সেবায়।