
হলি আর্টিজান হামলায় ৮ আসামীর কে কিভাবে সম্পৃক্ত
৮ আসামীর বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে দাবি করেছন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সহকারি পিপি এডভোকেট গোলাম সরোয়ার জাকির। তিনি আশা করছেন, আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তিই হবে। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্যে আসামীদের সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। পুলিশের ভাষ্য আসামিদের সবাই নব্য জেএমবির প্রথম সারির নেতা। জাহাঙ্গীর হোসেন (২৮ বছর): তিনি রাজীব গান্ধী, টাইগার, আদিল, সুভাষ নামে জঙ্গি সংগঠনটিতে পরিচিত ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য। তার বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পশ্চিম রাঘবপুরে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০১৭ সালের ১৩ই জানুয়ারি। গুলশান হামলা ঘটাতে জাহাঙ্গীরের ‘গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা’ ছিলো বলে মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়। তাতে বলা হয়, ২০০৩ সালে জেএমবিতে যোগ দেয়া জাহাঙ্গীর ২০১৪ সালে নব্য জেএমবি সংগঠনে ভূমিকা রাখেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে গাইবান্ধার সাঘাটায় যে বৈঠকে গুলশান হামলার পরিকল্পনা হয়েছিলো, তাতে তামিম, জাহিদ, সরোয়ার জাহান, রায়হান, মারজান, শরিফুলের সঙ্গে জাহাঙ্গীরও ছিলেন। গুলশান হামলার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সংগ্রহ, হত্যাকাণ্ডে সক্রিয় সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে দেয়া বক্তব্যে জাহাঙ্গীর জঙ্গি সংগঠনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও গুলশান হামলায় যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি করেন। রাকিবুল হাসান রিগেন (২০): দলে রাফিউল ইসলাম রাফি, রিপন, হাসান, অন্তর নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য। বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিমপাড়ায়। হলি আর্টিজানে হামলার পর ঢাকার কল্যাণপুরে জাহাজবাড়ির আস্তানায় অবস্থান করছিলেন তিনি। ওই বাড়িতে ২০১৬ সালের ২৭শে জুলাই অভিযানে ১১ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ধরা পড়েন রিগেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, রিগেন নব্য জেএমবির প্রশিক্ষক ছিলেন, অর্থ লেনদেনের দায়িত্বও ছিলো তার। নিষিদ্ধ সংগঠনের পদ গ্রহণ করে অর্থ গ্রহণ, হামলায় জড়িতদের প্রশিক্ষণ দিয়ে হত্যাকা- সংঘটনে সহায়তা ও প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। মিজানুর রহমান (৬০): বড় মিজান নামে পরিচিত। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের হাজারবিঘি চাঁনপুরে। ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর ঢাকার দারুস সালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। গুলশান হামলার আগে ২০১৬ সালের মার্চ মাসের শেষ দিকে নাচোলের কসবা এলাকায় নিজের ইজারা নেয়া পুকুর পাড়ের ঘরে মিজান বিস্ফোরকসহ এক জঙ্গিকে রেখেছিলো বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। গুলশান হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরক সরবরাহে সহায়তা করে হত্যাকা- সংঘটনে ভূমিকা রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে মিজানের বিরুদ্ধে। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে মিজান আদালতে বলেছিলেন, তিনি একজন মাছ ব্যবসায়ী, শুধু নামের মিলের কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে। আবদুস সবুর খান হাসান (৩৩): সোহেল মাহফুজ, মুসাফির, জয়, নসুরুল্লাহ নামে সংগঠনে পরিচিত বলে পুলিশের ভাষ্য। বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সাদিপুর কাবলিপাড়ায়। ২০১৭ সালের ৮ই জুলাই গ্রেপ্তার হন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০২ সালে জেএমবিতে যোগ দিয়ে রাজশাহীর বাগমারায় ‘সর্বহারা নিধন অভিযানে’ সম্পৃক্ত হন সবুর। তখন বোমা বানানোর সময় তার ডান হাতের কবজি উড়ে যায়। কিছুদিন ভারতে থাকার পর ২০১০ সালে দেশে ফিরে আসার পর জেএমবির উত্তরাঞ্চলের দায়িত্ব নেন। পরে তামিমদের সঙ্গে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন তিনি। গুলশান হামলায় লোক, অস্ত্র, গ্রেনেড সরবরাহ করে হত্যাকা- সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে সবুর ওরফে সোহেল মাহফুজের বিরুদ্ধে। আসলাম হোসেন সরদার (২০): সংগঠনে র্যাশ, রাশেদ, মোহন, আবু জাররা নামে পরিচিত ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য। বাড়ি রাজশাহীর পবার নওহাটা মথুরায়। ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই গ্রেপ্তার হন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসলাম ২০১৪ সালে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন শরিফুল ইসলাম খালেদের মাধ্যমে। গুলশান হামলার পরিকল্পনায় ছিলেন। গুলশান হামলাকারীদের নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেন তিনি। হামলাকারীদের মনোবল চাঙ্গা রাখা ও গ্রেনেড বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। হামলার আগে বুড়িগঙ্গা নদীতে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রশিক্ষণও তিনি দিয়েছিলেন। হামলাকারীদের প্রশিক্ষকের কাছে পৌছে দেয়া এবং অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয়া, ঘটনাস্থল রেকি, হামলার পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে আসলামের বিরুদ্ধে। হাদিসুর রহমান (৩৫): তিনি সাগর, জুলফিকার, সাদ-বিন আবু ওয়াক্কাস, আবু আল বাঙ্গালী, আব্দুল্লাহ স্যার, আমজাদ, তৌফিক ইত্যাদি নামে সংগঠনে পরিচিত ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য। বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার কাদোয়া কয়রাপাড়া। ২০১৮ সালের ২১শে মার্চ বগুড়ার শিবগঞ্জে গ্রেপ্তার হন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০১ সালে হাদিসুর রহমান আলিম অধ্যয়নরত অবস্থায় জেএমবিতে যোগ দেন। সংগঠনে দায়িত্বশীল হলে তার নাম ‘সাদ-বিন আবু ওয়াক্কাস’ দেয়া হয়। ২০১৩ সালে যোগ দেন নব্য জেএমবিতে। সংগঠনের জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে চাঁদা আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সংগঠনের সদস্যদের মোটরসাইকেল চালানোও শেখাতেন। নব্য জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের সামরিক কমান্ডার ছিলেন তিনি। গুলশান হামলাকারীদের ঝিনাইদহে মেস ভাড়া করে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দেয়া, অর্থ লেনদেন, অস্ত্র-গ্রেনেড সরবরাহ করে হত্যাকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে হাদিসুরের বিরুদ্ধে। শরিফুল ইসলাম খালেদ (২৭): খালিদ, রাহাত, নাহিদ, আবু সুলাইমান নামে সংগঠনে পরিচিত ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য। বাড়ি রাজশাহীর বাগমারার শ্রীপুরের খামারপাড়ায়। ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জে গ্রেপ্তার হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন শরিফুল। তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় ২০১৩ সালে জেএমবিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে এলাকা থেকে পালিয়ে যান। অভিযোগপত্রে বলা হয়, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন শরিফুল। আত্মঘাতী হামলার জন্য জন্য তরুণদের তৈরির কথা তিনিই বলেছিলেন। গাইবান্ধায় যমুনার চরে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির চালাতেও তার ভূমিকা ছিলো। গুলশান হামলা সংঘটনে প্রশিক্ষণে সহায়তা এবং হামলা পরিকল্পনায় ছিলেন তিনি।