হরিপদ কাপালী। ফাইল ছবি

কেন বিখ্যাত ছিলেন হরিপদ কাপালী?

জাহিদুল ইসলাম জন
জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, নিউজ এন্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০১৭, ১৮:০২
আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৭, ১৮:০২

(প্রিয়.কম) বৃহস্পতিবার দুপুরে সমাহিত হয়েছেন হরিধানের উদ্ভাবক হরিপদ কাপালী। নিজের জমিতে উচ্চ ফলনশীল এক নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করে সারা দেশে পরিচিতি পেয়েছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বঞ্চিত এই গ্রামীণ কৃষক।
০৫ জুলাই বুধবার গভীর রাতে মারা যাওয়া ঝিনাইদহের এই কৃষক তার উদ্ভাবিত ফসলের জন্য একাধিক পুরস্কার জিতেছেন।

কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া হরিপদ নিজের জমিতে নতুন জাতের ধানের সন্ধান পান ১৯৯৬ সালে। সারা দেশে পরিচিতি পাওয়ার পর ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায় নিষ্ঠার সঙ্গে তার ধান আবিষ্কারের কাহিনী।

সেবছর নিজরে জমিতে বোনা ধানে নতুন একটি গাছ দেখতে পান হরিপদ। জমির অন্য ধানগাছ থেকে কিছুটা বাড়ন্ত আর শক্তপোক্ত ওই গাছটি নিয়ে কৌতুহলী হয়ে ওঠেন তিনি। ধানের শীষ বের হওয়ার পর দেখা গেল ওই গাছটিতে ধানের সংখ্যা আর শাখা প্রশাখাও বেশি। ফলে কৌতুহলী হয়ে আলাদা করে সংরক্ষণ করেন ওই গাছের ধান।

পরের বছর আলাদা করে ওই ধানগুলোর চারা তৈরি করে রোপণ করেন তিনি। ফলাফলে অবাক হয়ে দেখেন অন্য ধানের চেয়ে ফলন অন্তত কয়েক মণ বেশি ফলেছে ওই ধান। আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। আরও বেশি জমিতে রোপণ করেন। তার লাভ দেখে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরাসহ পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদে লাভবান হন। স্থানীয়ভাবে ওই ধান পরিচিত হয় হরিধান নামে।

২০০২ সালে তার এই উদ্ভাবনের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে হইচই পড়ে যায় দেশে। সরকারিভাবে হরিধানের স্বীকৃতির পাশাপাশি তিনি চ্যানেল আই কৃষি পদকও লাভ করেন। এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সংগঠন থেকে অন্তত ১৬টি পদক পান।

ঝিনাইদহের সাধুহাটি ইউনিয়নের আসাননগরে জন্ম নেওয়া হরিপদ কাপালীর জন্ম ১৯২২ সালে। দারিদ্রের কারণে প্রথম শ্রেণির পর আর স্কুলে বারান্দা মাড়ানোর সুযোগ হয়নি। ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর তার রেখে যাওয়া ২ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে সংসারের হাল ধরেন তিনি। ১৭ বছর বয়সে নিজ গ্রামের মেয়ে সুনীতি রাণীকে বিয়ে করলেও সারাজীবন নিঃসন্তান ছিলেন তিনি। তবে ওই দম্পত্তি পালক নিয়েছিলেন রুপকুমার নামে এক বালককে।

ওই রুপকুমার জানিয়েছেন, মুত্রনালীর সংক্রমণে বেশ আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন তিনি। বেশি বয়সের কারণে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। অবশেষে ৯৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

হরিপদর স্ত্রী সুনীতি বিশ্বাস বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া না জানলেও কাজ ছাড়া কিছুই বুঝতে চাইতেন না তিনি। সব সময় ফসলের উন্নয়নের চিন্তায় থাকতেন তিনি।’
হরিপদের মৃত্যুতে ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ছাড়াও শোক জানিয়েছেন স্থানীয় সুধীজনেরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে  তাকে ঝিনাউদহের বদরগঞ্জ শ্মশানে সমাধিস্থ করা হয়।

প্রিয় সংবাদ/কামরুল