
ছবি সংগৃহীত
শিক্ষার সুযোগ চায় ওরা
আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০২:২০
শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে এসব শিশু। ছবি: প্রিয়.কম
(আবদুল লতিফ লায়ন, জামালপুর) ‘মোরা এক ঘাটেতে রান্ধি-বাড়ি, আর এক ঘাটে খাই’ বাংলা লোক গানের সুরে বেদে জীবনের এই রং মিইয়ে এসেছে বেশ আগেই। তবে বদলায়নি তাদের শৈশব। ভাসমান এই সম্প্রদায় যুগ-যুগান্তর ধরে বংশানুক্রমে ভেসে বেড়ায় নদীতে। জীবিকার প্রধান অবলম্বন বন্দর, গ্রামগঞ্জ, শহর-নগরে সাপ খেলা, বানর খেলা দেখানো, কখনও কবিরাজি চিকিৎসা।
আর বহরের চারপাশে দুরন্তপনা, কানামাছি, কুতকুত আর এক্কাদোক্কায় খেলাসহ গ্রামীণ খেলায় মেতে থেকে সাপের খেলা, বানর খেলার প্রশিক্ষণ নিয়ে কাটতে থাকে শিশুদের শৈশব। বাবা-মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে হাটে-বাজারে সাপ, বাদর খেলায় সহযোগিতা করতে করতে এক সময় নিজেই হয়ে ওঠে সাপুড়ে।
তবে এইসব শিশুদের জীবনে কখনও মেলে না শিক্ষার সুযোগ। মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে সাপ, বাদর খেলার মতো পেশায় জড়িয়ে পড়ে এসব শিশু। তারা বেড়ে উঠছে অশিক্ষা কুশিক্ষায়। দেশ উন্নত হলেও বেদে বহরে আজও পৌঁছায়নি শিক্ষার আলো। পরিচয় হয়নি অক্ষর-জ্ঞানের সঙ্গেও। ফলে তারা নিরক্ষরই থেকে যাচ্ছে বংশ পরম্পরায়। যাযাবর জীবনে একেক স্থানে একেক সময় অবস্থান করায় সুযোগ নেই শিক্ষা গ্রহণের। অক্ষর কি, স্কুল দেখতে কেমন, সেখানে কি হয় তাও জানে না এসব শিশুরা। শিক্ষা গ্রহণের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওরা।
এরকম খুপড়ি ঘরে জীবন কাটে বেদে সম্প্রদায়ের। ছবি: প্রিয়.কম
জামালপুর শহরের ফেরিঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বেদের বহর এসেছে সপ্তাহ খানেক আগে। বহরে ৪২ জন নারী-পুরুষ রয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে ২২ জন শিশু। এই শিশুরা শিক্ষার সুযোগের আবেদন জানিয়ে এ প্রতিবেদকের কাছে তাদের দুর্বিষহ জীবন কাহিনী তুলে ধরে।
জাতিসংঘের শিশু অধিকার ও জাতীয় শিশু সনদ নীতিমালা অনুযায়ী, প্রত্যেক শিশুই রাষ্ট্র কর্তৃক লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। দুর্ভাগ্য, এটি কার্যকর না থাকায় বেদে শিশুদের মতো দেশের অসংখ্য শিশু শিক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
বেদে বহরের সর্দার মোহাম্মদ মন্টু সর্দার জানান, আমরা পেটের তাগিদে জায়গায় জায়গায় ঘুরে বেড়াই। সাপ বানর খেলা, শিঙ্গা লাগিয়ে, তাবিজ-কবচ বেঁচে যা পাই, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। আধুনিক যুগের এই সময়ে মানুষ আর আমাদের খেলা, শিঙ্গা লাগানো, তাবিজ-কবচ নিতে চায় না। বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছি। বাড়িতে রেখে এসে বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখানো, তাদের দেখাশোনা করা আর লেখাপড়ার খরচ যোগানোর মতো অবস্থা নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা আমরা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করি। সরকার যদি বিশেষ ব্যবস্থা নেয় তাহলে শিক্ষা আমাদের কপালে জুটবে। আমাদের এসব আক্ষেপমাখা কথাগুলো তুলে ধরেন।
সমাজ সচেতনরা বলেছেন, শিক্ষক, উদ্যেমী যুবক ও নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক টিম গঠন করে যদি বেদে শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে বেদে শিশুরা মুক্তি পাবে নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে।
মানবাধিকার ও উন্নয়ন কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, যাযাবর মানুষগুলোও এ দেশের নাগরিক। শিক্ষা গ্রহণের মৌলিক অধিকার তাদেরও রয়েছে। তারাও খণ্ডকালীন শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়ে একপর্যায়ে চলে আসতে পারে মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থায়। স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভূমিকা রাখতে পারে দেশ গঠনে। প্রয়োজন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসা।
স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে আপনার একটু শ্রম নিরক্ষর বেদে শিশুদের দিতে পারে অক্ষর জ্ঞান এমন আবেদন জানান তিনি। এনজিও ও সোস্যাল ওর্য়াকারদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা নিরক্ষর বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন খান বলেছেন, এটি নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও আমাদের মৌলিক দায়িত্ব। তাদের শিক্ষার আওতায় আনার জন্য জামালপুরের জেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রিয় সংবাদ/জন/রিমন