
প্রতীকী ছবি : সংগৃহীত।
নিফাক কী এবং মুনাফিক কারা?
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭, ১২:৩৬
(প্রিয়.কম) ‘নিফাক’ একটি আরবি শব্দ। এর মানে হলো কপটতা, অন্তরে এক রকম ধারণা পোষণ করা এবং বাইরে অন্য রকম প্রকাশ করা। ইসলামী পরিভাষায় এর অর্থ হলো, অন্তরে কুফরি গোপন রেখে মুখে ঈমানের কথা বলা বা স্বীকার করা এবং লোক দেখানোর জন্য বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠানাদি বা ইবাদত পালন করা। যে ব্যক্তি এরূপ করে তাকে ইসলামী পরিভাষায় ‘মুনাফিক’ বলা হয়। নিফাক মূলত দুই প্রকার। ১. নিফাকে ইতিকাদি (বিশ্বাসগত নিফাক)। ২. নিফাকে আমলী (আমল-ইবাদতগত নিফাক)।
বিশ্বাসগত নিফাক কুফরের চেয়েও মারাত্মক। কারণ মুনাফিক ব্যক্তি বাহ্যত ইসলামের কাজ করে মুসলিম সমাজকে প্রতারিত করে এবং তাদের কাছ থেকে আইনগত আর্থিক ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। আর শত্রুর গুপ্তচর হিসাবে কাজ করে এবং মুসলমানদের গোপন বিষয়ের ব্যাপারে দুশমনদের অবহিত করে দেয়। প্রকাশ্য শত্রু থেকে আত্মরক্ষা করা সহজ কিন্তু গোপন শত্রুর চক্রান্ত থেকে বাঁচা খুবই দুঃষ্কর। এই মুনাফিক সম্প্রদায়ের দ্বারা ইসলামের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
এ কারণে কুরআন মাজিদের বহু স্থানে তাদের সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এবং স্বরূপ উন্মোচন করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান এনেছি; কিন্তু তারা মুমিন নয়। আল্লাহ ও মুমিনদেরকে তারা প্রতারিত করতে চায়। অথচ তারা যে নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকেও প্রতারিত করে না, তা তারা বুঝতে পারে না। তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তারপর আল্লাহ্ তাদের ব্যাধি বৃদ্ধি করেছেন ও তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, যেহেতু তারা মিথ্যা বলে। তাদেরকে যখন বলা হয়, পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না, তারা বলে আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান! তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা বুঝতে পারে না।
যখন তাদেরকে বলা হয়, যে সকল লোক ঈমান এনেছে তাদের মতো ঈমান আনো, তারা বলে নির্বোধগণ যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরূপ ঈমান আনব? সাবধান! তারাই নির্বোধ, কিন্তু তারা তা জানে না। তারাই হিদায়েতের বিনিময়ে ভ্রান্তি ক্রয় করেছে। সুতরাং তাদের ব্যবসা লাভজনক হয়নি, তারা সৎ পথেও পরিচালিত নয়। (সূরা বাকারা, ২ : ৮-১৩-১৬)
হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে সে মুনাফিক। আর যার মধ্যে এই স্বভাবগুলোর কোনো একটি পাওয়া যাবে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত সেও মুনাফিক বলে বিবেচিত হবে। স্বভাবগুলো হলো- ১. তার কাছে কোনো আমানত রাখলে খিয়ানত করে ২. সে কথা বললে মিথ্যা বলে ৩. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে ৪. ঝগড়া করলে গাল-মন্দ করে। (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
মুনাফিকরা ঈমান গ্রহণের দাবীতে মিথ্যাবাদী। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকগণ অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (সূরা মুনাফিকূন, ৬৩ : ১) এছাড়া মুনাফিকদের পরিণাম হবে জাহান্নামের নিন্মতম স্তর। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, মুনাফিকরা তো জাহান্নামের নিন্মতম স্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য তুমি কোনোও সহায় পাবে না। (সূরা নিসা, ৪ : ১৪৫) পবিত্র কুরআন মাজিদের বহু আয়াতে মুনাফিকদের অপতৎপরতা ও অপকর্মের বর্ণনা রয়েছে। এমনকি এ ব্যাপারে একটি সূরাও নাজিল হয়েছে। কাজেই মুনাফিকদের থেকে সচেতন থাকা আবশ্যক।
প্রিয় ইসলাম/গোরা