লেখক (বামে) ও আনোয়ার স্যার। ছবি: লেখক
শিক্ষকের চির বিদায়, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮, ১২:১২
(প্রিয়.কম) অফিসে ঢুকে যে ব্যক্তি প্রথমেই বলতেন, ‘আমার ক্লাসটা নিয়ে আয়’। দুপুরে খাবারের সময় বলতেন, ‘চল খেতে চল’। কোনো ভুল করলে সেটাও সংশোধনের জন্য অবিরাম উৎসাহ দিয়ে যেতেন যিনি, তিনি আমার প্রিয় শিক্ষক আনোয়ার স্যার। ১৪ এপ্রিল, শনিবার আনোয়ার স্যার পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে, না ফেরার দেশে চলে গেলেন। তিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন।
স্কুল জীবনে স্যারের আদর, স্নেহ আর ভালবাসা পেয়ে বড় হয়েছি। দুরন্তপনা করলেও স্যারের পড়া ঠিক-ঠাক শিখে আসতাম। ২৫ বছরের কর্ম জীবনে তিনি প্রায় সব শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন। শিক্ষক হিসেবে আনোয়ার স্যার ছিলেন একজন প্রকৃত মানুষ গড়ার কারিগর। সেই সুদূর চাঁদপুর থেকে অজোপাড়া গাঁয়ে এসে শিক্ষার আলো ছড়াতেন তিনি।
স্যারের সরাসরি ছাত্র ছিলাম। ভাগ্য আমাকে স্যারের সহকর্মী হওয়ারও সুযোগ করে দিয়েছিল। প্রায় তিন বছরের মতো স্যারের সাথে কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরি করার সৌভাগ্য হয় আমার। স্যার সব সময় আমাকে সুযোগ করে দিতেন। আমাদের ভাগ্যই খারাপ, গত দুবছরে আমরা তিনজন সিনিয়র শিক্ষককে হারিয়েছি। প্রথমজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে,দ্বিতীয়জন স্ট্রোক, তৃতীয়জনও স্ট্রোক করে মারা যান।
আনোয়ার স্যারের প্রতি ভালোবাসাটা বেশি ছিল। কর্মজীবনে এসেও স্যার আমায় খুব আদর করতেন। ভালোবাসার কমতি ছিল না। ঠাট্টা-মশকরা, শাসন সবই ছিল মিশে।
স্যার সব সময় বলতেন, ‘যা শেখাবি তা যেন শিক্ষার্থীরা মনযোগ দিয়ে শেখে। খেয়াল রাখবি আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষৎ।’
সব সময় আমাকে আলাদা চোখে দেখতেন। ভালোবাসেন বলেই হয়তো এভাবে আমাদের কাঁদিয়ে পরপারে চলে গেলেন। স্যারকে নিয়ে ইদানীংকালে কিছু লোক কটূক্তি ছড়ালেও আমি ছিলাম সেই সবের বিরুদ্ধে সোচ্চার। একজন শিক্ষকের মর্যাদা কখনোই আমি থাকতে বিনষ্ট হতে দিব না বলেও স্যারকে বলেছিলাম।
স্যারের এ চিরবিদায়ে আমরা কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা হারালাম একজন গুণী ব্যক্তিকে। আমরা হারালাম প্রকৃত একজন মানুষ গড়ার কারিগরকে। আমাদের হৃদয়ে আজ বইছে রক্তক্ষরণ। মেনে নিতে পারছি না আনোয়ার স্যার আর নেই। স্কুলজীবন থেকেই স্যারকে দেখেছি সর্বদা শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে কথা বলতে। স্যার ক্লাসে নিজেকে উজাড় করে দিতেন বলে প্রাইভেটও পড়তে হতো না।
শনিবার অসংখ্য মানুষ স্যারে জানাজায় অংশ নিয়েছেন। স্যারের পক্ষ হয়ে সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি। ভালো মানুষেরা মৃত্যুর পরও অমর হয়ে থাকেন। কেননা ‘কীর্তিমানের মৃত্যু নেই’।
[প্রকাশিত লেখা ও মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রিয়.কম লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত মতামতের সঙ্গে প্রিয়.কমের সম্পাদকীয় নীতির মিল না-ও থাকতে পারে।]
প্রিয় মতামত/ইতি/রুহুল