তালেবান কেন পাকিস্তানবিরোধী হয়ে উঠল

যুগান্তর মোহাম্মদ হাসান শরীফ প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৬

পাকিস্তান সফরে আমার সবচেয়ে বেশি জানার আগ্রহ ছিল, পাকিস্তান-আফগানিস্তান অবনতিশীল সম্পর্ক নিয়ে ইসলামাবাদের কর্মকর্তাদের ভাবনা। ঠিক কী কারণে পাকিস্তানকে বৈরী গণ্য করে ভারতের দিকে ঝুঁকল তালেবান-শাসিত আফগানিস্তান, এ নিয়ে তারা কী ভাবছেন। দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর বিরুদ্ধে (এমনকি এর আগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধেও) তালেবানের যুদ্ধ পরিচালনার অন্যতম প্রধান অবলম্বন ছিল পাকিস্তান। প্রচলিত মত হলো, বিশেষত পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সহায়তা, নিরাপদ আশ্রয়, অস্ত্র-সরঞ্জাম এবং কূটনৈতিক সমর্থন তালেবানকে টিকে থাকতে এবং শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত থেকে সহায়তা করেছে। ‘হানাদার’ মার্কিন বাহিনীর ‘দোসর’ ভারতকে তালেবান দীর্ঘদিন ‘শত্রু শক্তি’ হিসাবে দেখেছে। মার্কিন মিত্র হিসাবে তালেবানকে ধ্বংস করতে ভারত তখন কী না করেছে। এবং সেই যুদ্ধে পাকিস্তান ছিল তালেবানের কৌশলগত সহযোগী। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান আশা করতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র-ভারতমুক্ত আফগানিস্তানে তালেবান তার ‘কৌশলগত সম্পদ’ হয়ে থাকবে।


কিন্তু ২০২১ সালে কাবুল দখলের পর পরিস্থিতি আমূল বদলে যায়। এখন তালেবান নেতৃত্বাধীন আমিরাত পাকিস্তানবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে, সীমান্তে সরাসরি সংঘর্ষে জড়াচ্ছে, পাকিস্তানের নীতি-অবস্থানকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছে এবং একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, যে শক্তি পাকিস্তানের সহায়তায় টিকে ছিল, সেই তালেবান এখন কেন পাকিস্তানবিরোধী হয়ে উঠল? সাধারণভাবে বলা যেতে পারে, তালেবান-পাকিস্তান সম্পর্কের বর্তমান টানাপোড়েন শুধু সীমান্তবিরোধ বা নিরাপত্তা ইস্যু নয়; এটি গভীর ভূ-রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের ফল। ফলে উপমহাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণ বোঝার জন্য পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ভারত সমীকরণটি বোঝা জরুরি। বাংলাদেশও এ সমীকরণের বাইরে নয়।


পাকিস্তানের সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক কিংবা একান্ত আলাপচারিতায় বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছি। তারা অনেক কথাই বললেন। অনেক কারণ দেখালেন। তাদের পরিচয় প্রকাশ করাটা ঠিক মনে করছি না। কেউ কেউ বললেন, পাকিস্তান-তালেবান সম্পর্কের অবনতির সবচেয়ে বড় কারণ হলো, টিটিপি বা পাকিস্তানি তালেবান। কারও মতে, টাকার কাছে নত হয়েছে তালেবান। নয়াদিল্লির সঙ্গে কাবুলের ঘনিষ্ঠতা বোঝাতে কেউ এতদূর পর্যন্তও বললেন যে, তালেবান অনেক নেতার সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট পরিচালিত হয় ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে।


এটা ঠিক, আফগান তালেবান ও টিটিপির আদর্শগত শিকড় একই এবং তা হলো ‘দেওবন্দি জিহাদ।’ তবে আফগান তালেবান যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তখন টিটিপি পাকিস্তানে অব্যাহতভাবে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। পাকিস্তান বারবার অভিযোগ করেছে, ভারত টিটিপিকে ব্যবহার করছে। দুটি সংগঠন পরস্পরবিরোধী দুটি পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, দুটি পরস্পরবিরোধী পক্ষকে মিত্র মনে করেছে, কিন্তু আফগান তালেবান কখনোই টিটিপিকে ‘শত্রু সংগঠন’ হিসাবে স্বীকার করেনি। একই কথা টিটিপির ব্যাপারেও প্রযোজ্য। বরং পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তায় কাবুল দখলের পর টিটিপির শত শত যোদ্ধা আফগান জেল থেকে মুক্তি পায়, যারা আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে। পাকিস্তান চাইছে, আফগান তালেবান টিটিপিকে দমন করুক বা অন্তত তাদের পাকিস্তানবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করাক। কিন্তু তালেবান সে পথে হাঁটেনি।


আফগান তালেবানের দৃষ্টিতে টিটিপিকে দমন করা মানে নিজস্ব সংগঠনের আদর্শিক ভিত্তিকে দুর্বল করা। টিটিপিকে শত্রু ঘোষণা করলে তালেবানের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ঝুঁকির মুখে পড়বে, এ ভয়ও কাজ করছে। তালেবান এমনটাও মনে করে যে, ভবিষ্যতে কোনোদিন যদি তাদের কাবুল ছেড়ে আবার পালাতে হয়, তবে তাদের আবার টিটিপির সহায়তাই নিতে হবে। কাজেই শেষ অবলম্বনটি হাতছাড়া করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।


অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান আফগানিস্তানকে তার ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ’ হিসাবে দেখে এসেছে। অর্থাৎ এমন একটি প্রভাব বলয়, যেখানে ভারতের প্রভাব কম থাকবে এবং পাকিস্তান নিরাপত্তা সংকটের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক সুবিধা পাবে। মার্কিন নিয়ন্ত্রণে থাকার সময় আফগানিস্তান ছিল ভারতেরও সুবিধাজনক জায়গা। দেশটিতে ভারত যেসব ‘উন্নয়ন’ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল, সেগুলোর প্রায় সবই পাকিস্তানকে টার্গেট করে। অর্থাৎ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য, পাকিস্তানকে কোণঠাসা করাই ছিল আফগানিস্তানে ভারতের কৌশল।


কিন্তু কাবুল দখলের পর তালেবান স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা পাকিস্তানের প্রভাব বলয়ের অংশ নয়, বরং আফগানিস্তান একটি স্বাধীন ইসলামি আমিরাত। তারা সীমান্ত নীতি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা-সব ক্ষেত্রে নিজস্ব রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব মানতে চায়। তালেবান এখন পাকিস্তানের সরকারি উপস্থিতি, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ মানতে নারাজ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও