কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মাশরাফি বিন মুর্তজা। ছবি: সংগৃহীত

আজই বিদায় বলছেন মাশরাফি?

সৌরভ মাহমুদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০১৯, ১১:৫৯
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৯, ১১:৫৯

(প্রিয়.কম) লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঐতিহাসিক আর ঐতিহ্যবাহী এক স্টেডিয়ামের ছবি। কেউ কেউ একে ক্রিকেটের মক্কা, আবার কেউ কেউ একে বলে থাকেন ক্রিকেটের তীর্থ স্থান। যাই বলা হোক না কেন, ক্রিকেটের ইতিহাসে গৌরবের একটি স্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড।

এই মাঠে সাদা পোশাকে বাংলাদেশ দুটি ম্যাচে খেললেও রঙিন পোশাকে নামা হয়নি কখনো। ওয়ানডে বিশবকাপের ১২তম আসরে নিজেদের শেষ ম্যাচ দিয়ে লর্ডসে অভিষেক ঘটছে বাংলাদেশের। বর্তমান দলের কয়েকজন অবশ্য আগে এসেছেন এখানে, তবে অনেকের জন্য এবারই প্রথম।

বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা যেন প্রাণ ভরেই উপভোগ করছিলেন লর্ডসের অনন্য আভিজাত্য। কেউ কেউ বিখ্যাত সব ম্যাচের স্মারকে ভরা মিউজিয়ামে ঢু মেরেছেন, কেউ বা লর্ডসের বিখ্যাত সেই ব্যালকনি থেকে স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। ছবি তোলা, ভিডিও করা তো ছিলই। সবমিলিয়ে প্রাণবন্ত এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল গতকাল।

সকলের মনকেই যেন ছুঁয়ে যাচ্ছিল লর্ডসের নান্দিকতা। অবশ্য ব্যতিক্রম ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। অন্যান্যরা যখন লর্ডস চষে বেড়াচ্ছেন, তখন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের এই ওয়ানডে অধিনায়ককে পাওয়া যায় ব্যালকনিতে। আনমনে বসে শূন্য দৃষ্টিতে কী যেন ভাবছেন তিনি। কেন তার এমন বিষণ্নতা?

ভারতের বিপক্ষে হেরে সেমিফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। তবে কি সে কারণেই তার এমন বিষণ্নতা, নাকি চলমান বিশ্বকাপে নিজের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স তাকে ফেলে দিয়েছে ভাবনায়! তা জানার কোনো অবকাশ অবশ্য তিনি রাখেননি। অনুশীলনে তো নামেনইনি, বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই মহাতারকা আসেননি সংবাদ সম্মেলনেও।

ক্রিকেটের তীর্থ স্থানে পা রেখেও নিজেকে কেমন যেন আড়ালে গুটিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাঁকবদলের এই মহানায়ক। এমনটা অবশ্য দিচ্ছে ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত।

কোচ স্টিভ রোডসের সঙ্গে মাশরাফি। ছবি: সংগৃহীত

৩৬ বছর বয়সী মাশরাফি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপই তার শেষ বিশ্বকাপ। এর মাঝে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া, একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হওয়া, ইনজুরি সমস্যা, সবমিলিয়ে বলা হচ্ছিল চলতি বিশ্বকাপ শেষেই ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চলেছেন মাশরাফি। তিনি নিজেও জানিয়েছিলেন এমনটাই। 

তবে বিশ্বকাপ চলাকালীন ক্রিকেটবিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিক ইনফোকে দেওয়া সাক্ষাতকারে মাশরাফি বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ। তবে বিশ্বকাপ শেষে আমি অবসর নিচ্ছি না। ওয়ানডে খেলে যাব। বোর্ড থেকে কোনো নির্দেশনা এলে আলাদা কথা। ব্যক্তিগতভাবে এখন আমার অবসর নেওয়ার চিন্তা নেই।’

বিশ্বকাপ শেষ হতে-না-হতেই আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে মাশরাফির অবসর। বিশ্বকাপে দুই-তিন ম্যাচ যাওয়ার পরই ধীরলয়ে আওয়াজ উঠেছিল। ভারতের কাছে হেরে সেমিফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ার পর সেই আওয়াজ হয়েছে চড়া। এর মাঝেই গণমাধ্যমকে কখনো এড়িয়ে না চলা মাশরাফি টানা দুদিন সংবাদ সম্মেলনেই আসলেন না।

এর ফলে মাশরাফির অবসর নিয়ে উঠেছে গুঞ্জন। তবে কি পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেই ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছেন তিনি? এমন প্রশ্নের উত্তর এখনো অবশ্য জানা নেই কারো।

বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচের আগে কেন সংবাদ সম্মেলনে এলেন না অধিনায়ক? ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ দলের মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম জানিয়েছেন, স্বস্তি বোধ করেননি বলে মাশরাফি আসেননি। ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধান কোচ স্টিভ রোডসকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। যদিও কোনো উত্তর তিনি দিতে পারেননি।

মাশরাফির অবসর নিয়ে জোরালো যুক্তি অবশ্য রয়েছে। দেশের মাঠে চলতি বছর নেই কোনো নির্ধারিত ওয়ানডে সিরিজ। মাশরাফি যদি দেশের মাঠে অবসর নিতে চান, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে লম্বা সময়। তবে চলতি মাসেই শ্রীলঙ্কায় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের। সেখানেও তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেন।

তবে অবসরের জন্য বিশ্বকাপের মতো বড় আসর, লর্ডসের মতো ঐতিহ্যবাহী মাঠের চেয়ে শ্রীলঙ্কা কখনোই ভালো কোনো মঞ্চ নয়। হয়তো ঘরের মাঠে একটা বিদায়ী সিরিজ আয়োজন করা যেতে পারে। তার জন্য কি অপেক্ষা করবেন মাশরাফি?

বিশ্বকাপে এবার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে অনুজ্জ্বলই ছিলেন মাশরাফি। ছবি: সংগৃহীত

যেহেতু কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি সেহেতু আপাতত মাশরাফির অবসর নিয়ে গুঞ্জনই সারকথা। কোচ স্টিভ রোডসও বললেন বিষয়টি অধিনায়ক ও বোর্ডের ওপর ছেড়ে দিতে। এ নিয়ে রোডসের ভাষ্য, ‘মাশরাফি নিজেই বোর্ডকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমার মনে হয়, সবার উচিত তাদের ওপর সিদ্ধান্তের ভার দেওয়া। আমার মনে হয়, মিডিয়ার অনেক বড় বড় খবর সত্ত্বেও তাকে যেন সম্মানটা দেওয়া হয় সে কি করবে বা কি করবে না।’

বলা যায়, অনেক উত্থান আর পতনের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে মাশরাফির ক্যারিয়ার। দুর্ভাগ্যজনক কিছু ভয়াবহ ইনজুরির শিকার হয়ে বারবার ছিটকে পরেছেন ক্রিকেট দুনিয়া থেকে। ক্যারিয়ারের এই ১৫ বছরে দুই হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে সাতবার। তবুও দমে যাননি তিনি। প্রতিবারই দুঃসময়ের সঙ্গে লড়াই করে যখনই ফিরেছেন, প্রমাণ করেছেন নিজেকে।

১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন মাশরাফি। তার নেতৃত্বে সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। এবারের বিশ্বকাপেও সাফল্য দেখিয়েছে টাইগাররা। মাশরাফির নেতৃত্বে সাত পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে মাশরাফির নেতৃত্বে ত্রিদেশীয় সিরিজও জিতেছে বাংলাদেশ।

যদিও বিশ্বকাপে মোটেও ভালো সময় কাটেনি মাশরাফির। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে এবারের মতো বাজে সময় খুব কমই এসেছে তার ক্যারিয়ারে। ৭ ম্যাচের মাত্র একটিতে নিয়েছেন ১ উইকেট। ১০ ওভার শেষ করেছেন মাত্র একবার! অথচ বিশ্বকাপের আগেও ছিলেন সেরা ছন্দে। বিশ্বকাপে এমন পারফরম্যান্সের জন্য অবশ্য হ্যামস্ট্রিং চোটও কিছুটা দায়ী।

২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে হুট করেই টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন মাশরাফি। কাউকে কিছু না বলে, টস করতে গিয়ে ঘোষণা দেন অবসরের। এবারও এমন কিছু হলে অবাক হওয়ার থাকবে না। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা না দিলেও বিশ্বকাপে আজ শেষ ম্যাচ খেলছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আজই মাশরাফির শেষ ম্যাচ বলে চারদিকে যে গুঞ্জন ডালপালা মেলেছে, তার উত্তর অবশ্য পাওয়া গেছে অধিনায়কের কাছে। এ বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলোকে মাশরাফি বলেছেন, ‘লোকে অনেক কথাই বলে। সব কথা কানে দিতে হয় না!’

প্রিয় খেলা/রিমন