দেশের স্বনামধন্য অভিনেত্রী দিলারা জামান প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। রক্ষণশীল বাঙালি পরিবারে জন্ম নিয়েও সকল বাধা ও প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন সফলতার যাত্রায়। বর্তমান সময়ের শিল্প ও সংস্কৃতিতে নারীদের স্বাধীনতার পেছনে দিলারা জামানের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। দিলারা জামান অভিনয়ের পাশাপাশি শিক্ষকতাও করেছেন অনেকদিন। আসুন একনজরে দেখে নেয়া যাক দিলারা জামানকে-
জন্মঃ ১৯৪৩ সনের ১৯ জুন
বাবাঃ আলহাজ্ব রফিকউদ্দিন আহমেদ
মাঃ সিতারা বেগম চৌধুরী
স্বামীঃ ফখরুজ্জামান চৌধুরী
প্রকাশিত গ্রন্থঃ
অস্তরাগ (গল্পগ্রন্থ) প্রকাশকাল- ১৯৬২
আকাশে অনেক নীল (উপন্যাস)-১৯৬৪
আর্শিতে আমি (গল্পসংকলন)-১৯৭৬
মৃগয়ায় শরবিদ্ধ (গল্প সংকলন)- ১৯৮৬
গল্পসমগ্র (গল্প সংকলন)- ২০১০
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
স্বদেশ সমাজকল্যাণ সংঘ, বর্ণ (খুলনা), সৃজনী সাংস্কৃতিক সংঘ, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ওস্তাদ আমিনুল ইসলাম পদক, যায়যায় দিন (২বার), চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘ, টেলিভিশন কালচারাল ফোরাম পদক, একতা লাইফ টাইম পারফর্মেন্স এওয়ার্ড, তারকালোক পদক, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, তারকাঙ্গন স্বর্ণপদক, ঢাকা কালচারাল রিপোর্টারস ইউনিট, শিশুকন্যা এডভোকেসি ফোরাম, টেনাসিনাস পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং একুশে পদকসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননা।
প্রিয় ডট কম পরিবার থেকে আমরা দিলারা জামানের কাছে গিয়েছিলাম তাঁর ঈদ উদযাপন সম্পর্কে জানার জন্য। আসুন জেনে নেই কেমন কাটে সকলের প্রিয় অভিনেত্রী দিলারা জামানের ঈদ। তাঁর সাথে কথোপকথনের চুম্বক অংশটি তুলে ধরা হলো।
কেমন আছেন প্রশ্ন করতেই সদা হাস্যমুখী মানুষটি মিষ্টি হেসে উত্তর দিলেন- ‘এই বুড়ো বয়সে যতটুকু ভালো থাকা যায় আর কি’।
প্রিয় ডট কম- 'ঈদ কোথায় করছেন এবার?'
দিলারা জামান-‘ঢাকাতেই করা হয় ঈদ অনেক দিন ধরেই। আর তাছাড়া আমার স্বামীতো অসুস্থ তাই তেমন কোথাও যাওয়া হয়না’।
প্রিয় ডট কম-'ঈদের দিনটা কিভাবে কাটাবেন?'
দিলারা জামান-‘দুই মেয়েই দেশের বাইরে থাকে। ওদের সাথে ফোনে অথবা স্কাইপে কথা বলি। আর বাসায় মেহমান আসলে আপ্যায়ন করি। রাতে টিভিতে ঈদের অনুষ্ঠান দেখি। এই হলো আমার ঈদ’।
প্রিয় ডট কম- 'ঈদের দিন নিশ্চয়ই রান্না করবেন নিজের হাতে? আপনার রান্নার তো ভীষণ সুনাম নাটক পাড়ায়... '
দিলারা জামান- ‘মেয়েরা দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর ঈদে রান্না করতে তেমন আর ইচ্ছে হয়না। তবুও ঈদে তো মেহমানদেরকে খালি মুখে রাখা যায় না। তাই একটু ফিরনী করি আর সঙ্গে ঝাল কিছু আইটেম রাখা হয় যেমন চটপটি, কাবাব ইত্যাদি। আগে অনেক নাস্তা বানাতাম। ভারী খাবারের আয়োজন করতাম। এখনতো স্বামী অসুস্থ, আমার নিজেরও বয়স হয়েছে। এখন আর আগের মত রান্না করতে পারিনা। অল্প কিছু যা পারি তাই করি’।
ছেলেবেলার ঈদ সম্পর্কে জানতে চাইলে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তাঁর চোখমুখ। বলেন-
‘ছোটবেলার ঈদের তো মজাই আলাদা ছিলো। এখনকার মতো বিলাসবহুল আয়োজন হতো না তখন। ঈদের আগে একটা জামা পেলে সেটাই লুকিয়ে রাখতাম। কেউ দেখলে পুরানো হয়ে যাবে তাই। ঈদের দিন সকালে গোসল করে নতুন জামা পরেই বের হয়ে যেতাম বেড়াতে। এই বাড়ি ঐ বাড়ী যেয়ে যেয়ে সালামী জোগাড় করে পকেট ভারী করতাম। দিন শেষে গুনতে বসতাম কার কত টাকা হয়েছে। এখনকার বাচ্চারা তো এই মজাগুলো পায় না। ঈদও এখন যান্ত্রিক হয়ে গেছে’।
ছোটবেলার ঈদের মজার ঘটনা প্রসঙ্গে জানালেন-
‘মজার ঘটনা বলতে যশোরে থাকতে একবার আমার ঈদের জুতা লুকিয়ে রেখেছিলাম। ঈদের দিন সেই জুতা আর খুঁজে পাইনা। পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও সেই জুতা আর পেলাম না। ঈদের জুতা লুকোতে গিয়ে ঈদের নতুন জুতাই পরা হলো না। বেশ কয়েকদিন পরে সেই জুতো জোড়া উদ্ধার হলো রান্নাঘরের লাকড়ির পেছন থেকে’।
প্রিয় ডট কম- 'এবার ঈদে আপনার কি কি নাটক পাচ্ছি আমরা?'
দিলারা জামান-‘ঈদে বেশি নাটক করা হয়নি এবার। শুধুমাত্র উত্তরায় শুটিং হয়েছে যেগুলো সেগুলোতে কাজ করেছি। স্বামী অসুস্থ থাকাতে দূরে যেয়ে কাজ করা হয়নি। চ্যানেল আই, এস এ টিভি ও এনটিভিতে সব মিলিয়ে ৫/৬টা নাটক করেছি এবার’।
প্রিয় ডট কম- 'ঈদে নাটক ছাড়া আর কোনো অনুষ্ঠানে দর্শক আপনাকে পাবে কি?'
দিলারা জামান-‘এনটিভিতে ঈদ আড্ডায় আসবো। এছাড়া দুটি বিজ্ঞাপনের কাজ করেছি। ফোন কোম্পানি, পোলাওর চাল এবং সেমাইয়ের’।
আড্ডার এক ফাঁকে চেখে দেখার সুযোগ হলো দিলারা জামানের নিজ হাতে রান্না করা কোফতা ও ফ্রুট মিল্ক শেক। এত নামী একজন অভিনেত্রী, অথচ কি ভীষণ আন্তরিক তাঁর ব্যবহার। ফিরে এলাম অসম্ভব সুন্দর কিছু স্মৃতি আর তাঁর তরফ থেকে একরাশ দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে। প্রিয় ডট কমের সকল পাঠকদের জন্যও তিনি জানিয়েছেন ঈদের শুভেচ্ছা।