
ছবি সংগৃহীত
স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ইসলামি শরিয়তসম্মত নিয়ম-পদ্ধতি!
আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫, ০৪:৫৬
প্রশ্ন : স্ত্রীকে তালাক দেয়ার শরীয়তসম্মত পদ্ধতি কি? এক সাথে তিন তালাক দিলে তার ফায়সালা কি? রাগের সহিত তালাক দিলে তালাক হবে কিনা? উত্তর : তালাক শব্দের অর্থ হচ্ছে জুদা, বর্জন, ত্যাগ, পৃথক ইত্যাদি। অর্থাৎ স্বামী থেকে স্ত্রীকে বা স্ত্রীকে কিছু নির্দিষ্ট শব্দ দ্বারা আলাদা করে দেয়া বা বিবাহ ভঙ্গ করে দেয়াকে ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় তালাক বলে। স্ত্রীর উপর তালাক আরোপিত হওয়া সম্পর্কে শরীয়তে তিনটি পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। (১) তালাকে আহ্সান। (২) তালাকে হাসান বা সুন্নত এবং (৩) তালাকে বিদ্য়ী বা বিদ্য়াত। তালাকে আহসান হলো : বিবাহিতা স্ত্রীকে এক তুহুর বা পবিত্রতাকালে (যাতে জেমা ও ওতি হয়নি) এক তালাক দিয়ে ইদ্দত পর্যন্ত রেখে দেয়াকে তালাকে আহসান বলে। তালাকে হাসান বা সুন্নত তালাক হলো : বিবাহিতা আহলিয়াকে তিন তুহুরে তিন তালাক দেয়া আর নাবালেগা, ছন্নে আয়েছা, হামেলদার বা গর্ভবতী আহলিয়াকে তিন মাসে তিন তালাক দেয়া। এটাকেও হাসান তালাক বলে। আর যে স্ত্রীর সাথে জেমা ও ওতি করা হয়নি তাকে তুহুরে অথবা অপবিত্রাবস্থায় এক তালাক দেয়াকে হাসান তালাক বলে। তালাকে বিদয়ী হলো : এক কথায় তিন তালাক দেয়াকে তালাকে বিদয়ী বলে। আর এক তুহুর বা এক অপবিত্রতার মধ্যে তিন তালাক দেয়াকে তালাকে বিদয়ী বলে। হাদিসে এসেছে ابغض الحلال الى الله الطلاق অর্থ : মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট হালালের মধ্যে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল হচ্ছে তালাক দেয়া। (মিশকাত শরীফ) অতএব, ইসলামি শরীয়ত কখনো কাউকে তালাক দেয়ার জন্য উৎসাহিত করেনা। হ্যাঁ, যদি স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে কোন অবস্থাতেই একত্রে বসবাস করা সম্ভব না হয় তাহলে পরস্পর পরস্পর থেকে আলাদা বা জুদা হবে। এই জুদা হওয়াকেই তালাক বলা হয়। এই তালাক দেয়ার মধ্যে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে আহসান তালাক দেয়া অথবা হাসান তালাক দেয়া যা তালাকে বিদয়ী নয়। হ্যাঁ, এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হবে। চাই তা রাগ হয়ে দিক বা খুশি হয়ে দিক অথবা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দিক। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে ثلث جدهن جد هزلـهن جد النكاح والطلاق والرجعة অর্থ : তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যা গোস্বায় হোক বা হাসি ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় কার্যকরী হয়ে থাকে। বিবাহ্, তালাক ও রজয়াত।” (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ/২৮৪) এ বিষয়ে সম্মানিত চার ইমামই একমত পোষণ করেছেন। অনেকে বলে থাকে যে, গোস্বা হয়ে তালাক দিলে তালাক হয়না। এর জাওয়াবে বলতে হয়, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে কখনোই খুশি হয়ে তালাক দেয়না। কারণ কেউ যখন বিবাহ করে তখন সে খুশি মনেই করে। আর তালাক দেয়ার নিয়তে কেউ বিয়ে করেনা। কারণ এসেছে, তালাক দেয়ার নিয়তে বিবাহ করলে তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লানত বর্ষিত হয়। কাজেই কেউ যখন তার স্ত্রীকে তালাক দেয় তখন সে রাগ হয়েই তালাক দিয়ে থাকে। অর্থাৎ মনমালিন্য হওয়ার কারণেই তালাক দিয়ে থাকে। তাই এ কথা বলার অবকাশ নেই যে, গোস্বা হয়ে তালাক দিলে তালাক বর্তাবেনা। সূত্র : (১) তাফসীরে তাবারী, (২) রূহুল মায়ানী, (৩) ইবনে কাছীর, (৪) কবীর, (৫) খাযিন, (৬) বাগবী, (৭) কুরতুবী, (৮) মাযহারী, (৯) আহকামুল কুরআন, (১০) আহমদী, (১১) বায়যাবী, (১২) শায়খেযাদাহ, (১৩) মা’আরিফুল কুরআন, (১৪) বুখারী, (১৫) মুসলিম, (১৬) মিশকাত, (১৭) ফতহুল বারী, (১৮) উমদাতুল ক্বারী, (১৯) মিরকাত, (২০) আশয়াতুল লুময়াত, (২১) লুময়াত, (২২) তা’লীকুছ্ ছবীহ্, (২৩) ত্বীবী, (২৪) মুযাহেরে হক্ব, (২৫) মাবসুত, (২৬) ফতহুল ক্বাদীর, (২৭) বেনায়া, (২৮) আলমগীরী, (২৯) শামী, (৩০) আইনী, (৩১) বাহরুর রায়িক, (৩২) কুদুরী, (৩৩) হেদায়া, (৩৪) আইনুল হিদায়া, (৩৫) নিহায়া, (৩৬) ইনায়া, (৩৭) গায়াতুল আওতার, (৩৮) শরহে বিকায়া, (৩৯) কানযুদ্ দাক্বায়িক্ব, (৪০) ফতওয়ায়ে আমিনী ইত্যাদি। গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : মাওলানা মিরাজ রহমান