আরবি ভাষায় লেখা কালেমা শাহাদাত। ছবি : সংগৃহীত

কালেমা শাহাদাতে নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর নাম যুক্ত করা হলো কেনো?

মিরাজ রহমান
সাংবাদিক ও লেখক
প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৭:৩৭
আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৭:৩৭

(প্রিয়.কম) আমরা মুসলিম। ইসলাম আমাদের ধর্ম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপক বলেছেন, ইসলামই হচ্ছে তার কাছে এক মাত্র মননীত ধর্ম। এই ইসলাম ধর্ম পালন করার জন্য আমরা সর্বপ্রথম যেটা করি সেটা হচ্ছে কালেমা শাহাদাত পড়ি। এটাই হচ্ছে ইসলামের প্রথম ভিত্তি।

কালেমা শাহাদাতের বাংলা উচ্চারণ : আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাছুলুহু ।

বাংলাতে অনুবাদ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেহই ইবাদতের উপযুক্ত নাই। তিনি এক এবং তার কোনো অংশীদার নাই।আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রাসূল।

বিভিন্ন কাজের কারণে অনেকের সাথে আমাদের চলতে হয়। এমনকি অন্য ধর্মের লোকদের সাথেও চলতে হয়।  এই কালেমা নিয়ে অন্য ধর্মের লোকদের একটি বড় প্রশ্ন হচ্ছে কালেমাতে আল্লাহর কথা বলা হয়েছে সেটা ভালো কেননা তিনিই তো সবাইকে সৃষ্টি করেছেন।  তিনিই তো সবার প্রতিপালন।  তার আদেশ বা তার হুকুম ছাড়া তো কিছুই হয় না এমনকি গাছের একটি পাতাও নড়ে না। কিন্তু কথা হচ্ছে এই কালেমাতে কেন একজন নবীর নাম দেওয়া হলো? নবী হিসেবে তো আরো অনেককেই দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে কিন্তু কেনো মুহাম্মাদ (সা.)-এর নাম কালেমাতে উল্লেখ করা হলো?

প্রথমত: আল্লাহ পরাক্রমশালী মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তা। তিনিই নিজে মুহাম্মাদ (সা.) এর নাম কালেমাতে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া আমরা রসূলের মাধ্যমে আল্লাহ এবং তার সকল নির্দেশিকা সম্পর্কে জানতে পারি। মুহাম্মাদ (সা.) হলেন আল্লাহর শেষ নবী ও রাসূল। তিনিই পূর্ববর্তী কিতাবের সাথে সমন্বয় সাধন করেন। সুতরাং তিনি অনেকের মধ্যে একমাত্র রসূল নন বরং তিনি তার আগে আল্লাহ সব রসূলদের প্রতিনিধিত্ব করেন।

দ্বিতীয়ত : আল্লাহর নির্দেশনা শুধু আমাদের একাডেমিক অধ্যায়নের জন্য নয় বরং এটা সকল স্থানে এবং সব সময় পালন করার বিষয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তার রসূলের আনুগত্য করো এবং হুকুম শোনার পর তা অমান্য করো না। (সূরা-আল আনফাল, আয়াত-২০)

অন্য একটি আয়াতে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, হে নবী! লোকদের বলে দাও, যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়। তাদেরকে বলো, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করো। (সূরা-আল ইমরান, আয়াত-৩১)

আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রসূলের আনুগত্য করলো সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিলো, যাই হোক, তাদের ওপর তো আমি তোমাকে পাহারাদার বানিয়ে পাঠাইনি। (সূরা-নিসা, আয়াত-৮০)

এই আয়াতে আল্লাহপাক মূলত বলেছেন, যারা আনুগত্য করবে না তারা নিজেরাই নিজেদের কাজের জন্য দায়ী। তাদের কাজের জন্য  (হে নবী) আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। আপনাকে কেবল এতটুকু কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যে, আপনি আল্লাহর নির্দেশ ও বিধানসমূহ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। এ কাজটি আপনি সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছেন। এখন তাদের হাত ধরে জবরদস্তি করে সত্য-সরল পথে পরিচালিত করা আপনার কাজ নয়। আপনার মাধ্যমে যে হিদায়াত পৌঁছানো হচ্ছে তারা যদি তার অনুসরণ না করে, তাহলে তার কোনো দায়-দায়িত্ব আপনার ওপর থাকবে না। তারা কেনো নাফরমানি করেছিল, এর জবাবদিহি করার জন্য আপনাকে পাকড়াও করা হবে না।

এই আয়াতটি আরো একটি বিষয় স্পষ্ট করে দেয় যে, নবী (সা.)-এর গ্রহণযোগ্যতা হল আল্লাহর গ্রহণযোগ্যতা। অতএব, মুহাম্মাদ (সা.) এর নবুওয়াতের সত্যতা আল্লাহর ওপর ঈমানের ঘোষণার ফলাফল। এই কারণেই কালেমা শাহাদাতে নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র : মুসলিমস্টোরিজ.টপ