
জাতীয় চার নেতা। বাঁ থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
জেলহত্যা দিবস আজ
আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭, ০৯:৩৩
(প্রিয়.কম) জেলহত্যা দিবস আজ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বাঙ্গালি জাতির জন্য দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় ৩ নভেম্বর।
এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলীকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জাতির জনককে তার ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দান করেন জাতীয় এ চার নেতা।
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর দেশের এই চার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয় ষড়যন্ত্রকারীরা। ৩ নভেম্বর ভোর রাতে কারাগারে মধ্যম সারির জুনিয়র সেনা কর্মকর্তারা তাদের প্রথমে গুলি এবং পরে বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এ নির্মম ও বর্বরোচিত ঘটনার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কমিশন গঠন করা হয়।
তবে সেই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের অসহযোগিতার কারণে এবং কমিশনের একজন সদস্যকে ভিসা প্রদান না করায় এ উদ্যোগটি সফল হতে পারেনি। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- শুক্রবার বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রিয় কার্যালয়সহ দেশের সর্বত্র শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ।
এ ছাড়াও বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত।একইভাবে রাজশাহীতে জাতীয় নেতা শহীদ কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত।
শুক্রবার বিকাল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার পাশাপাশি জাতিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কারাবন্দি অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জেলহত্যা দিবস জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন।’
তিনি আরও বলেন, ঘাতকচক্রের উদ্দেশ্য ছিলো দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা। কিন্তু ঘাতকচক্রের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতার স্থপতি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু ও তার আদর্শ চির জাগরুক থাকবে।
এদিকে তার দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে ৩ নভেম্বর কলঙ্কময় ও বেদনাবিধুর একটি দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, তার অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা।’
তিনি বলেন, এ ধরণের বর্বর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। ষড়যন্ত্রকারীরা এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলার মাটি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশুন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। পচাঁত্তরের সেই ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদাতারা পরবর্তী ২১ বছর দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে।
তিনি আরও বলেন, শাসকগোষ্ঠী কখনও সামরিক লেবাসে, কখনও গণতন্ত্রের মুখোশ পরে, অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখে। আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে। হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে। তারা খুনিদের রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে।
সূত্র: বাসস
প্রিয় সংবাদ/শিরিন