
এক বছরেও হদিস মেলেনি নিখোঁজ ১৮২ জনের, কোনো তৎপরতাও নেই
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার্স কারখানার ছয়তলা ভবনে গত বছরের ২৫ আগস্ট আগুনে অন্তত ১৮২ জন নিখোঁজের দাবি করেন স্বজনেরা। সরকারি তদন্তেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। তবে গত এক বছরে তাঁদের উদ্ধারে কোনো তৎপরতা চালায়নি কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান।
পোড়া হাড় হলেও চান স্বজনেরা
ঘটনার এক বছর পর এসে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা বলছেন, শুরুতে তাঁরা প্রিয়জনের লাশ চেয়েছিলেন, এখন কেবল পোড়া হাড়গোড়গুলো চান।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার নূর হোসেন (৪২) রূপগঞ্জে ট্রাকচালকের কাজ করতেন। স্ত্রী পারভীন বেগমের সঙ্গে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে রূপগঞ্জের কাজীপাড়া এলাকায় দুই কক্ষের একটি পাকা বাসায় ভাড়া থাকতেন। ঘটনার দিন কাজ থেকে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন নূর। প্রতিবেশী আরেক ট্রাকচালক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে নিয়ে স্থানীয় একটি হাসপাতালে যান। রাত ৯টার দিকে বাসায় ফিরে বোনের স্বামী মো. রাসেলের (৩৪) সঙ্গে যান গাজী টায়ার্স কারখানায়। তারপর দুজনের কেউই আর বাড়ি ফেরেননি।
সম্প্রতি নূর হোসেনের কাজীপাড়া এলাকার ভাড়া বাসায় গিয়ে তাঁর পরিবারকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা যায়, বাসাভাড়া দিতে না পারায় দুই কক্ষের বাসা ছেড়ে একই এলাকায় এক কক্ষের একটি টিনশেড ঘরে তিন সন্তানকে নিয়ে থাকেন নূরের স্ত্রী পারভীন। সেই বাড়িতে কথা হয় পারভীনের সঙ্গে। বলেন, নূর ও রাসেলের সন্ধান পেতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ করেছেন তাঁরা। কারাগারেও খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু কোথাও তাঁদের সন্ধান মেলেনি।
একদিকে স্বামী হারানোর শোক, অন্যদিকে অভাবের তাড়না। দিশাহারা পারভীন সন্তানদের বড় করতে স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরি নিয়েছেন। সে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। তাঁর ছয় বছরের ছেলে আবদুল্লাহ মায়ের পাশেই খেলাধুলা করছিল। মায়ের কান্না দেখে কোলে এসে বসে। পারভীন মনে করেন, তাঁর স্বামী ও ননদের স্বামীর মতো নিখোঁজ ব্যক্তিদের কেউ আর বেঁচে নেই। তাঁরা সবাই গাজী টায়ার্স কারখানায় গিয়ে মারা গেছেন। এক বছর ধরে তাঁদের হাড়গোড় ওই পোড়া ভবনে আটকে আছে।
হাড়গোড়গুলো উদ্ধার করার দাবি নিয়ে এক বছর ধরে স্বজনদের সঙ্গে মিলে আন্দোলন করেছেন পারভীন। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েছেন। তবে ভবনটিতে উদ্ধারকাজ চালানো হয়নি। সরকারিভাবে তাঁদের মৃত্যুর বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে সরকারি-বেসরকারি নানা সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা।