অনেকেই চিন্তা করেন তারা বেশী বার মলত্যাগ করছেন বা যথেষ্ট করছেন না। ছবি: নূর

দিনে কতবার মলত্যাগ করা স্বাভাবিক?

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:০০
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:০০

(প্রিয়.কম) একজন মানুষের বাথরুমে যাতায়াতের অভ্যাস থেকে তাদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে বেশ কিছু জানা যায়। হ্যাঁ, এ ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে বিব্রতবোধ করেন না এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। কিন্তু শরীরে কী ঘটছে তা জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো মলত্যাগের অভ্যাসের দিকে নজর দেওয়া। অনেকেই চিন্তা করেন তারা বেশী বার মলত্যাগ করছেন বা যথেষ্ট করছেন না। কিন্তু এসব চিন্তার কথা আবার লজ্জার কারণে কাউকে জিজ্ঞাসাও করতে পারেন না। মলত্যাগ নিয়ে আপনার বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর পাবেন আজকের এই ফিচারে-

একজন মানুষ দিনে কতবার মলত্যাগ করাটা স্বাভাবিক?

এক্ষেত্রে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে একটা সংখ্যা ধরে দেওয়াটা কঠিন, কারণ স্বাভাবিকের সংজ্ঞা বদলে যায় মানুষ থেকে মানুষে। যে খাবারটুকু হজম হয় না এবং শরীর যে বর্জ্য উৎপাদন করে তা বের করে দেওয়াই হলো মলত্যাগ। মাঝে মাঝে এই অভ্যাসে পরিবর্তন আসাটা স্বাভাবিক। খাদ্যভ্যাসসহ বেশ কিছু ব্যাপার এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। একজন মানুষের জন্য যে মলত্যাগের অভ্যাস স্বাভাবিক, অন্যের ক্ষেত্রে সেটা অস্বাভাবিক হতে পারে। তবে ২০১০ সালের একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, এতে অংশ নেওয়া ৯৮% শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে সপ্তাহে তিনবার থেকে দিনে তিনবার মলত্যাগ করাটা স্বাভাবিক বলে ধরা যায়।

অনেক মানুষই এক্ষেত্রে একটা রুটিন মেনে চলেন। তারা দিনে কয়বার টয়লেটে যাচ্ছেন এবং কখন যাচ্ছেন, তা মোটামুটি একটা নিয়মের মাঝেই থাকে। মাঝে মাঝে এই অভ্যাসের ব্যতয় হতে পারে, কিন্তু বেশী ব্যতিক্রম হতে থাকলে তা হয়তো কোন সমস্যার লক্ষণ।

fluid intake

যথেষ্ট পানি পান না করলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। ছবি: রিপন

মলত্যাগের অভ্যাস কীসের ওপর নির্ভরশীল?

বেশকিছু ব্যাপারের ওপর নির্ভর করে বদলাতে পারে আপনার মলত্যাগের অভ্যাস। যেমন-

তরল গ্রহণ

 আমাদের বৃহদান্ত্র যেহেতু অতিরিক্ত পানি টেনে নেয়, তাই যথেষ্ট পানি পান না করলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে এবং মলত্যাগ কম হতে পারে।

বয়স

বয়সের সাথে সাথে বাড়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা। কারণ বয়স বাড়লে অন্ত্র ধীর হয়ে যায়, মল আগের মত দ্রুত শরীরের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। এছাড়াও বয়স বাড়লে বিভিন্ন ওষুধ খেতে হয় যা স্বাভাবিক মলত্যাগের অভ্যাসে বাঁধা তৈরি করতে পারে।

শারীরিক সক্রিয়তা

নিয়মিত শরীরচর্চা করলে কোলন সুস্থ থাকে এবং অন্ত্র মলত্যাগে সহায়তা করে বেশী। যাদের হজমে সমস্যা অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে, তাদের হাঁটা বা জগিং করলে উপকার হতে পারে।

fiber

ফল ও সবজিতে আছে ফাইবার। ছবি: রিপন

খাদ্যভ্যাস

হাই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের কারণে নিয়মিত মলত্যাগ হয়। ফাইবারের ঘাটতি হলেই নিয়মে ছেদ পড়বে এবং আপনার হজমেও সমস্যা হবে। যথেষ্ট পরিমাণে ফল, সবজি এবং হোল গ্রেইন খেলে আপনার ফাইবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

মেডিকাল হিস্ট্রি

কিছু কিছু অসুস্থতা, শারীরিক অবস্থা এবং ওষুধ সেবনের কারণে মলত্যাগের অভ্যাসে প্রভাব পড়তে পারে।

হরমোন

প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেনের মত কিছু হরমোনের কারণে নারীর বাথরুমের অভ্যাস পাল্টাতে পারে। যেমন পিরিয়ডের শুরুর কিছু সময়ে অনেকেই বলেন তাদের বারবার বাথরুমে যাবার দরকার হয়।

সামাজিকতা

অনেকেই পাবলিক প্লেসে বাথরুমে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। ফলে দেখা যায় বাসার বাইরে বেশী সময় থাকলে তাদের মলত্যাগ কম করা হয়। তবে এটা নিয়মিত হলে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্তত অস্বস্তি হতে পারে।

কোনটি স্বাভাবিক?

হেলদি বাওয়েল মুভমেন্ট সেটাই, যখন আপনার নিয়মিত, সহজে মলত্যাগ হবে এবং মল নরম হবে।

কোনটি অস্বাভাবিক?

যখন দেখবেন আপনার মল অতিরিক্ত তরল বা খুব দ্রুত শরীর থেকে নিষ্কাশিত হচ্ছে, সাধারণত তা কোন ইনফেকশন বা ইনফ্লামেশনের কারণে হয়।

ক্রনিক ডায়ারিয়া থেকে দ্রুত হতে পারে ডিহাইড্রেশন অথবা ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স। খুব দ্রুত শরীর থেকে বের হয়ে যাবার কারণে খাবার থেকে যথেষ্ট পুষ্টি নিতে পারে না শরীর, ফলে পুষ্টিহীনতাও দেখা দিতে পারে।

ছোট ছোট গুটি আকারের মলত্যাগও অস্বাভাবিক। সাধারণত তা কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ। এর থেকে অনেক সময়ে হেমরয়েডের সমস্যাও হতে পারে।

doctor

স্বাস্থ্য নিয়ে যে কোন চিন্তায় অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। ছবি: রিপন

কখন যাবেন ডাক্তারের কাছে?

সাধারণত মলত্যাগে কোন পরিবর্তন এলে তা কয়েক সপ্তাহের মাঝে ঠিক হয়ে যায়। যদি তা না হয়, বা এর পাশাপাশি অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার। এমন উপসর্গ হতে পারে-

-      মলের সাথে রক্ত

-      কালো মল

-      চিকন হয়ে মলত্যাগ

-      ওজন কমে যাওয়া বা জ্বর, তার পাশাপাশি ডায়ারিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য

-      পেটে প্রচন্ড ব্যথা

-      বমির সাথে রক্ত বা কফি গুঁড়োর মত পদার্থ বের হওয়া

একদিনে অতিরিক্ত মলত্যাগ হতে পারে কী?

আপনার যদি নিয়মিত প্রতিদিন কয়েকমার মলত্যাগ হয় সহজে, এবং মল হয় নরম, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। তবে মল বেশী নরম, তরল হলে ডাক্তারের সাথে কথা বলা দরকার।

মলত্যাগ নিয়মিত না হলে কী করবেন?

স্বাস্থ্য নিয়ে যে কোন চিন্তায় অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। আপনার জীবনযাত্রায় কোন পরিবর্তন আনা দরকার কিনা তিনিই ভালো বুঝবেন। অনেক সময়ে আপনার খাদ্যভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলেই এই সমস্যা ঠিক হয়ে যায়। এর পাশাপাশি শরীরচর্চাও কাজে আসে।

সূত্র: Medical News Today

প্রিয় লাইফ/ আর বি