
জি সি দেব ও তাঁর স্মৃতিস্তম্ভ। ছবি : সংগৃহীত
'গুড সেন্স গুড সেন্স' : শহীদ বুদ্ধিজীবী গোবিন্দ চন্দ্র দেব
আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:২৩
(প্রিয়.কম) ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। পৃথিবীর ভূখণ্ডে এই মানচিত্রের স্বীকৃতি পেতে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে পুরো জাতিকে। ৭ কোটি জনতা একাত্তরে যা হারিয়েছেন তার ক্ষতিপূরণ পাওয়া অসম্ভব। পাকিস্তান পরিকল্পিতভাবেই বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিতে চেয়েছে আর এ জন্যই হত্যা করা হয়েছে জাতির মস্তিষ্ক অর্থাৎ বুদ্ধিজীবীদের।
রক্তস্নাত সেই ইতিহাসের পাতায় পাই গোবিন্দ চন্দ্র দেব ওরফে জিসি দেবের নাম। খ্যাতিমান এই ব্যক্তি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দার্শনিক বিভাগের অধ্যাপক। পেনসেলভেনিয়ার উইল্কস বেয়ার কলেজে শিক্ষকতা করার সময় তার দর্শন ভাবনা জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। জিসি দেবের মানবিক দর্শন প্রচারের লক্ষ্যে 'দ্যা গোবিন্দা দেব ফাউন্ডেশন ফর ওয়ার্ল্ড ব্রাদারহুড' প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে তিনি তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
২৫ মার্চের সেই কালো রাতে পাক বাহিনী আর ক্ষুধার্ত হায়েনার মাঝে কোনো পার্থক্য ছিল না। গুলিবর্ষণ করে নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছিল তারা। জিসি দেবের বাড়ির ওপর সারারাতই গুলি করতে থাকে একদল পাকসেনা। এখানে জিসি দেবের সাথে অবস্থান করছিলেন তার পালিত কন্যা ও কন্যার স্বামী। তাঁরা সবাই বুঝতে পারছিলেন, মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে। তবু মাথা ঠান্ডা রাখেন জিসি দেব। ভোরের দিকে মেয়েকে বলেন চা করতে। নিজে বসেন প্রার্থনায়। সে সময়ই দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী।
একাত্তরে ধর্মকে অস্ত্রের মতো ব্যবহারের যে নজির দেখিয়েছে পাকিস্তানিরা, তার কোনো দ্বিতীয় উদাহরণ হয়তো পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। জিসি দেব ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী। “কাঁহা মালাউন কাঁহা” বলে চিৎকার করতে করতে তাকে হত্যা করতে আসে পাকিরা। পালিত মেয়ে রোকেয়া বেগমের স্বামী সামনে এগিয়ে এসে জিসি দেবকে বাঁচানোর জন্য পাকিস্তানিদের মন গলাতে কালেমা পড়েন। কিন্তু এতে তাদের মধ্যে কোনো ভাবান্তর হয় না। জিসি দেব দুই হাত উপরে তুলে 'গুড সেন্স গুড সেন্স' বলে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হয়নি। পাকিস্তানি বাহিনী ব্রাশ ফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করে সদা হাস্যোজ্জ্বল জিসি দেব এবং তাঁর মেয়ের জামাইকে। তাঁর মেয়ে রোকেয়া বেগম ঘটনার আকস্মিকতায় জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান বিধায় বেঁচে গিয়েছিলেন।
২৬ মার্চ বিকেলে জগন্নাথ হলের পশ্চিম পাশে জিসি দেবের মরদেহ মাটিচাপা দেয়া হয়।
গুণী এই বুদ্ধিজীবীর স্মরণে তাঁর নিজ গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা গ্রামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সংস্কারের অভাবে এর অবস্থা জরাজীর্ণ। তাঁর বাড়ির মালিকানা নিয়েও আছে নানান জটিলতা। আর এসবের পিছনে কারণ হলো বুদ্ধিজীবী দিবস ছাড়া এখানে তেমন কোনো পদচারণ থাকে না।
গুগল ম্যপে লাউতার অবস্থান
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জ্বীবিত রাখতে, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে এইসব স্মৃতিস্তম্ভের সংস্কার প্রয়োজন। শুধু নির্দিষ্ট দিবসে নয়, শহীদরা যেন শ্রদ্ধার অর্ঘ্য পান সারা বছরই।
প্রিয় ট্রাভেল/জিনিয়া/আজাদ চৌধুরী
প্রিয় ট্রাভেল সম্পর্কে আমাদের লেখা পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেইজে। যেকোনো তথ্য জানতে মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। ভ্রমণবিষয়ক আপনার যেকোনো লেখা পাঠাতে ক্লিক করুন এই লিংকে - https://www.priyo.com/post।