
প্রতীকী ছবি
চলুন না লিখেই ফেলি ভালোবাসার মানুষকে একটি ছোট্ট চিঠি...
আপডেট: ০৮ মে ২০১৮, ১৮:২৩
চিঠি- দুই অক্ষরের এই কথাটির অর্থ অনেক গভীর। আজকের যুগে আমাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের অনেকেই জানেই না চিঠি কি? কখনো কেউ কারো কাছ থকে কোনো চিঠি পেয়েছে কি না, সেটাও সন্দেহ। চিঠির ভালোলাগার অনুভূতি সম্পূর্ন আলাদা। কিন্তু এই চিঠির জন্যেই একসময় শুরু হয়েছিল হয়তবা অনেকের অনেক স্বপ্ন, ভালোলাগা আকাশে ওড়ার ভাবনা, চাঁদনি রাত ভালোলাগা, একা একা মনে মনে গুনগুন করে গান গাওয়া। আজও তাদের অনেকে হয়তো এখনো একই ছাদের নিচে বসবাস করছেন। সেই যুগে তাদের দেখা হতো কম, কথা হতো কম। তারপরেও ছোট্ট একটু কাগজে অনেক ভালোবাসা মিশিয়ে কিছু শব্দ লেখা আর সেই শব্দের সাথে আরেকজনের কতটুকু আত্মার বাঁধন জড়িয়ে রয়েছে, তা শুধু দু’জনেই জানত। আহা, কি শান্তি!
একটা সময় ছিল, যখন একটি ছেলে আমায় চিঠি লিখত। অদ্ভুতভাবে তার ভালোলাগার কথাগুলো কাগজে কলমের কালি দিয়ে ফুটিয়ে তুলত। আর আমি বোকার মতো ভাবতাম, এখনো এমন হয় নাকি, চিঠি দেয় কেউ? সত্যি! ছেলেটা পাগল নাতো…? এই মোবাইল ফোনের যুগে, চিঠি! ভাবতে অবাক লাগত, তারপরেও এটা সত্যি যে, পরবর্তী সময়ে তার চিঠি না পেলে আমারই ভালো লাগত না। অনেক অনেক কথা লিখতে হবে, চিঠির দৈর্ঘ্যও বড় হতে হবে, যেন একটা চিঠি আমি অনেক সময় ধরে যেন পড়তে পারি, এটাই আবদার হয়ে গিয়েছিল আমার। হাসিমুখে আবদার পূরণও করত সে। বোকা ছেলেটা সত্যি সত্যি আমার আবদার রাখতে, চিঠি লেখার জন্যে রাতভর জেগে থাকত, ক্লাস-পরীক্ষা কিছুই খেয়াল করত না।
কিন্তু কত দিন হয়ে গেল, তোমার চিঠি পাই না? এই ভার্চুয়াল যুগের ব্যস্ততায় তুমিও কি হারিয়ে গেলে! এখন কি আর মনে পড়ে না, আমায় চিঠি লেখার কথা? সাত-আট দিন ধরে লেখা অনেক কথার চিঠি! আমি যে এখনো চাই, তুমি আমায় চিঠি লেখ। তোমার চিঠির অপেক্ষায় থাকতে আজও আমার ভালো লাগে। কবে লিখে পাঠাবে আমায় আবার তোমার রাত জেগে জেগে লেখা চিঠি? যা আমি এতবার পড়েও মনে হয়নি যে, অনেকবার পড়েছি। প্রতিবার পড়তে গিয়ে নতুন মনে হয়। তোমার চিঠির আশায় আমি আজও চেয়ে আছি।
আজ এখন এই সময়ে আমাদের সম্পর্ক কত ঠুনকো হয়ে গিয়েছে। আমরা একজন আরেক জনকে মূল্যায়ন করি না। এসএমএস করে জানিয়ে দেয়, অনেক সময় ফোন করে কথা বলারও সময় পাই না। আর কারো জন্যে অপেক্ষা! হুহ্! সেটা তো আদৗ সম্ভব নয়। আমরা শুধু নিজেদের ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিতে চাই, যুদ্ধে জড়াতে চাই, কারো কাছে ছোট হওয়া যাবে না, নিজেকেই বড় করে দেখতে হবে। কখনো কি একবারও ভেবেছি, একসাথে পাশাপাশি পথচলার আনন্দ কতটুকু! সেটা মনকে কতটুকু প্রশান্তি দেয়? ঝড়-ঝাপটা যাই আসুক না কেন, একসাথে পথ না হয় চলেই দেখি দুজনে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ছোট্ট একটু চিরকুটে লেখা, ‘শুভ সকাল’। একটু দূরে গেলে, কিছু চিঠি লেখা। নাহ্! সেটা অবশ্যই ভার্চুয়াল মাধ্যমে নয়। নিজ হাতে, কাগজ-কলম ধরে অনেক ভালোবাসায় লেখা ছোট্ট একটি চিঠি।
আগেও তো সবাই সংসার করত। কই, ছিল না তো কোনো ভাঙনের সুর! তবে আজ কেন? এখন কি মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেছে? একটু প্রচেষ্টা নিয়েই দেখি না কেন- ছোট্ট চিঠির পাতায় লেখা ‘কেমন আছ? অনেক ভালোবাসি তোমায়’ দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারে কি না?
পুরনো ভালোবাসার জিনিস কখনোই পুরনো হয় না, তা হয় খাঁটি সোনা। আজকের কথাও পুরনো হবে, তবে খাঁটি সোনা হতে যে তার কত সময় লাগবে, কে জানে? অনেক দিবসই তো আমরা পালন করি, একদিন না হয় নিজেদের মতো করে ‘চিঠি দিবস’ পালন করি।
[প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রিয়.কম লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।প্রকাশিত মতামতের সঙ্গে প্রিয়.কমের সম্পাদকীয় নীতির মিল না-ও থাকতে পারে।]