
বাম থেকে ১৯৯৫, ১৯৮৭, ১৯৯২ ও বর্তমান ট্রফি। ছবি: সংগৃহীত
ক্রিকেট বিশ্বকাপের যত ট্রফি
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯, ১৪:৩২
(প্রিয়.কম) ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপের বিজয়ী দলকে ‘বিশ্বকাপ ট্রফি’ দেওয়া হয়। বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে এই ট্রফি একটি স্থায়ী রূপ পায়। এর আগে প্রতিটি বিশ্বকাপে ট্রফির নকশা, ধরন ও সাইজ ছিল ভিন্ন।
১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপের সপ্তম আসর বসে ইংল্যান্ডে। ওই আসর থেকেই বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার হিসেবে বর্তমান ট্রফিটি দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটিই প্রথম স্থায়ী পুরস্কার। এর আগে ১৯৭৫ সালের প্রথম আসর থেকে প্রত্যেকটি প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের ট্রফি তৈরি করে বিজয়ী দলকে প্রদান করা হতো।
বর্তমান ট্রফির নকশাকার ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পেয়েছিল লন্ডনের গারার্ড এন্ড কোং প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাত্র দুই মাস পূর্বে।

১৯৭৫ সালে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় কোনো নির্দিষ্ট ট্রফি ছিল না। সাধারণত পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের তৈরি করে দেওয়া ট্রফিই ব্যবহৃত হতো চূড়ান্ত পুরস্কার হিসেবে। ১৯৭৫, ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ এই তিনটি আসরেরই আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। ওই তিনটি আসরে দেওয়া হয় বিমা প্রতিষ্ঠান প্রুডেন্সিয়ালের দেওয়া ট্রফি। বিশ্বকাপের প্রথম তিন আসরে তিনটি ভিন্ন ট্রফি ব্যবহার করা হলেও, ট্রফিগুলোর নকশা ছিল একই।

১৯৮৭ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দলকে দেওয়া হয় ভারতের রিলায়েন্স শিল্পগোষ্ঠীর ট্রফি। এরপর ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। বেনসন এন্ড হেজেস কর্তৃক ওই বিশ্বকাপে দেওয়া হয়েছিল স্বচ্ছ স্ফটিকের তৈরি এক ট্রফি। শ্রীলঙ্কাসহ ভারত ও পাকিস্তান যৌথভাবে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকের দায়িত্ব পায়। আইটিসি ব্র্যান্ডের উইলস কর্তৃক ওই বিশ্বকাপেও পৃথক পৃথক ট্রফি প্রদান করা হয়।

ছয়টি বিশ্বকাপ শেষে আইসিসি প্রথমবারের মতো চিন্তা করে একটি নির্দিষ্ট নকশার ট্রফির প্রয়োজনীয়তা। ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফির মতো যাতে ক্রিকেটেও একটি নির্দিষ্ট ট্রফি থাকে এবং যার মালিকানা কারও কাছে হস্তান্তর করা হবে না। সেই ভাবনা থেকেই আজকের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ট্রফি।

সোনা ও রুপার সমন্বয়ে তৈরি ট্রফিটির উচ্চতা ৬০ সেন্টিমিটার। তিনটি রৌপ্য দণ্ডের ওপর একটি সোনালী গোলক স্থাপন করা হয়েছে। দণ্ড তিনটিকে স্ট্যাম্প ও বল সদৃশ্য করে সাজানো হয়েছে যা ক্রিকেটের মৌলিক বিষয়- ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও গোলককে ক্রিকেট বলরূপে চিত্রিত করা হয়েছে।
১১ কেজি (কিলোগ্রাম) ওজনের এই ট্রফিটি সাধারণত দুবাইয়ে আইসিসির ভল্টেই সংরক্ষিত থাকে। আগের বিশ্বকাপ বিজয়ী দলের নাম ট্রফিতে খোদাই করা আছে। ট্রফিটিতে সর্বমোট বিশটি নাম লিপিবদ্ধ করা যাবে। মূল ট্রফিটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে। ১৯৯৯ সাল থেকে এই ট্রফির একটি রেপ্লিকা তুলে দেওয়া হয় বিজয়ী দলের হাতে।

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ১২ বছরব্যাপী অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্যের সূচনা ঘটে। এ প্রতিযোগিতাটি ইংল্যান্ডে চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়াই প্রথম ওই ট্রফিটি ধরার অর্জন অধিকার করে। পরবর্তী দুই বিশ্বকাপ ২০০৩ ও ২০০৭ সালেও অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১১ সালে এসে অস্ট্রেলিয়ার পর ট্রফি উঠেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারতীয় দলের হাতে।
২০১৫ বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। এই দুই দলই ফাইনালে ওঠে। কিন্তু শেষ হাসি হাসে আবারও অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অবস্থিত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয় ফাইনাল। ৭ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফিটি জয় করে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ কে কতবার নিয়েছে
গত বিশ্বকাপ পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি দল বিশ্বকাপ নেওয়ার গৌবর অর্জন করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল ১৯৭৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত খেলায় বিজয়ী হয়ে ট্রফি জয় করার সক্ষমতা দেখিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া দল প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সফলতম দলের মর্যাদা উপভোগ করছে। এ পর্যন্ত দলটি পাঁচবার শিরোপা ও দুবার রানার্স-আপ হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে দুইবার জয় লাভ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যথাক্রমে ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালের প্রথম দুই আসরে। অস্ট্রেলিয়া ১৯৮৭ সালে একবার পরে ধারাবাহিকভাবে ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ সালে তিনবার শিরোপা জয় করে। এরপর সর্বশেষ ২০১৫ সালেও তারা বিশ্বকাপ ট্রফি জয় করে। অস্ট্রেলিয়া এগারোটি ফাইনালের মধ্যে ৭টিতে (১৯৭৫, ১৯৮৭, ১৯৯৬, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১৫) অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া ১৯৮৩ সালে ভারত, ১৯৯২ সালে পাকিস্তান ও ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড ফাইনালে গেলেও বিশ্বকাপ জয় করতে পারেনি একবারও। ইংল্যান্ড তিনটি ফাইনালের প্রত্যেকটিতে রানার্স-আপ হয়। অপরদিকে নিউজিল্যান্ড একবার রানার্স-আপ হয়। প্রথম তিনটি বিশ্বকাপ আসরের চূড়ান্ত খেলা ৬০ ওভারের ছিল। এরপর থেকে প্রতিটি আসরই ৫০ ওভারের অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৯ বিশ্বকাপ একেবারেই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গ্রুপ পর্বের বাধা পেরিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে- অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড। এই চার দলের কোনো একটি দল ২০১৯ সালে ঘরে তুলবে স্বপ্নের বিশ্বকাপ ট্রফিটি।
সূত্র: ক্রিকিইনফো, উইকিপিডিয়া
প্রিয় খেলা/রিমন