নির্বাচন ভবন। ফাইল ছবি

নির্বাচনি তফসিল আসলে কী?

আবু আজাদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ২২:১২
আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ২২:১২

(প্রিয়.কম) দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ ২৮ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবিধানিক দায়িত্ব হিসেবে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। অর্থাৎ নির্বাচন কত তারিখ হবে সেটি ঘোষণা। কিন্তু তফসিল মানে শুধুই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নয়। নির্বাচনের সাথে জড়িত খুঁটিনাটি আরও অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত জড়িত এই তফসিলের সাথে। কী সেগুলো?

বিবিসি বাংলার সাথে আলাপকালে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন সেগুলো ব্যাখ্যা করছিলেন।

নির্বাচনের তফসিলে কী থাকে?

খুব সহজ ভাষায় এটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখের একটি আইনি ঘোষণা।

নির্বাচন আয়োজন করার জন্য যেসব কাজকর্ম জড়িত রয়েছে, তার সবকিছুর জন্যেও একটি সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

যেমন প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতার মনোনয়নের কাগজ কত তারিখ জমা দেওয়া শুরু করতে পারবেন সেটি ঘোষণা করা হয়।

মনোনয়নের কাগজ নির্বাচন কমিশন কতদিনের মধ্যে বাছাই করবে, বাছাই প্রক্রিয়ায় যদি সেটি বাতিল হয়ে যায়, তাহলে প্রার্থিতা প্রত্যাশী ব্যক্তি কতদিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন, তার সময় বেঁধে দেয় কমিশন।

যারা প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাবেন তাদের তালিকা কবে নাগাদ ছাপানো হবে, নির্বাচনি প্রচারণা কবে থেকে শুরু করা যাবে আর কতদিন পর্যন্ত তা চালানো যাবে, সেটির উল্লেখ থাকে।

সাধারণত প্রার্থীর নির্বাচনি প্রতীক ঘোষণার সাথে প্রচারণা শুরুর তারিখ সম্পর্কিত থাকে।

নির্বাচন কয় তারিখ হবে, ক’টায় শুরু হবে আর ক’টা পর্যন্ত চলবে—সেটির বিস্তারিত এবং ভোটের পর তার গণনা কীভাবে ও কোথায় হবে সেটিরও বৃত্তান্ত থাকে।

এই পুরো বিষয়টিকেই নির্বাচনের তফসিল বলা হয়।

এসব সিদ্ধান্ত কারা নেয়?

কিছু বিষয় সংবিধানে একদম নিশ্চিত করে বলা আছে। তাই সেগুলো নিয়ে আদৌ কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ারই দরকার হয় না।

যেমন সংবিধানে বলা আছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। অর্থাৎ ২৮ জানুয়ারি সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কিন্তু এই ৯০ দিনের মধ্যে কবে নির্বাচনের তারিখ সেটি ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।

কমিশনারদের মধ্যে সেটি নিয়ে এবং নির্বাচনের তফসিলের অন্যান্য সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তারপর বেশির ভাগ কমিশনার যে সিদ্ধান্ত দেন, সেটি গৃহীত হওয়ার কথা।

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর কি বদল করা যায়?

নির্বাচন কমিশন চাইলে সংসদ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ওই ৯০ দিনের মধ্যে দেওয়া নির্বাচনের তারিখ বদলাতে পারে। যদি সেটি দরকার হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনের সেই এখতিয়ার রয়েছে।

সে ক্ষেত্রে তফসিল সংশোধন করে দেওয়া যায়। এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য তারিখ পরিবর্তন করে দিতে পারে কমিশন।

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন একটি নমুনা দিয়ে বলছিলেন, ২০০৮ সালে ড. এটিএম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ নির্বাচনের তারিখ দিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তখনো নির্বাচনে আসবে কি না সে নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছিল। এরপর বিএনপির সাথে আলোচনার পর তাদের দাবির ভিত্তিতে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে ২৯ ডিসেম্বর করা হয়েছিল।

এবারও যে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট তৈরি হয়েছে, সেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংলাপের মাধ্যমে সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

২০০৬ সালে একবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক সংকটের মুখে নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছিল। কিন্তু নির্বাচনের তারিখটি রয়ে গিয়েছিল। সেই তারিখ পরে বাতিল করেছিল আদালত।

অন্য একটি দেশের তফসিলের নমুনা

সাধারণত বাংলাদেশের তফসিলে যেসব কার্যক্রম দেওয়া থাকে, তা করার জন্য সব মিলিয়ে পুরো সময়কাল ৪৫ দিন হয়ে থাকে। সেটাই সাধারণত বাংলাদেশের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ব্রিটেনে তফসিলের সময়কাল হলো সব মিলিয়ে ১৭ দিন। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ১৭ দিনের মধ্যে সেখানে নির্বাচনসহ তার আগের সবকিছু শেষ করতে হবে।

সেখানে আইন করে স্থায়ী একটি তফসিল তৈরি করাই রয়েছে। আর নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজন করে না। সেটি করে থাকে স্থানীয় কাউন্সিল।

প্রিয় সংবাদ/আজাদ চৌধুরী