পৃথিবীর সব মানুষকেই চার ধরণের ব্যক্তিত্বের ছকে ফেলে দেওয়া যায়। ছবি: সংগৃহীত

আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন? জেনে নিন বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৫১
আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৫১

(প্রিয়.কম) মানুষ হিসেবে আমরা সবাই আলাদা, আমাদের ব্যক্তিত্বও আলাদা। আসলেই কী তাই? হিউম্যান বিহেভিয়র জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, পৃথিবীর সব মানুষকেই চার ধরণের ব্যক্তিত্বের ছকে ফেলে দেওয়া যায়।

এই গবেষণায় জন্য ১৫ লাখ মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে।  এসব মানুষ অনলাইনে একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করেন। এর আগে এত বেশি মানুষের ওপর এ ধরণের পরীক্ষা করা হয়নি।

ব্যক্তিত্ব নির্ণয়ের জন্য গবেষকরা পাঁচটি বৈশিষ্ট্য বেছে নেন। এগুলো হলো-

  • এক্সট্রাভার্শন- মানুষটি সামাজিক কিনা, বাচাল কিনা এবং অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পছন্দ করেন কিনা
  • নিউরোটিসিজম- তিনি নেতিবাচক অনুভূতি যেমন রাগ ও দুশ্চিন্তা বেশি করেন কিনা
  • অভিজ্ঞতা নিতে আগ্রহী- তিনি নতুন নতুন আইডিয়া, অভিজ্ঞতা এবং আচরণের প্রতি আগ্রহী কিনা
  • অ্যাগ্রিয়েবলনেস- তিনি অন্যদের সাথে অমায়িক কিনা এবং তাদের সাথে ঐক্যমত প্রকাশ করেন কিনা
  • কনসেনশাসনেস- তিনি সাবধানি, সময়ানুবর্তি এবং পরিশ্রমী কিনা

অনলাইনে প্রশ্নপত্র পূরণের পর বিশেষ এক অ্যালগরিদম ব্যবহার করেন গবেষকরা। প্রথমে ১৫ লাখ মানুষকে ১৬টি ভাগে ভাগ করা হয়। এরপর আরও কমিয়ে তাদের সবাইকে ৪ ধরণের ব্যক্তিত্বের ছকে ফেলা হয়। গবেষকরা ধারণা করছেন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে ব্যক্তিত্বের এই শ্রেণীবিভাগ কাজে আসবে।

এই ৪ ধরণের ব্যক্তিত্ব কী কী?

প্রথম ধরণের ব্যক্তিত্বকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘অ্যাভারেজ’ বা ‘গড়পড়তা’। এই ব্যক্তিত্বের মানুষই সবচেয়ে বেশি। তাদের মাঝে বিশেষ কিছু নেই। তারা বেশিরভাগ সময়ে বহির্মুখী, তারা নেতিবাচক চিন্তাও করেন, অন্যদিকে তারা অমায়িক এবং পরিশ্রমী। তবে এ ধরণের মানুষ নতুন অভিজ্ঞতাকে তেমন একটা পছন্দ করেন না। এ কথাটা আসলেই বেশিরভাগ মানুষের জন্য খাটে, কারণ তারা জীবনে নতুন পরিবর্তনকে মেনে নিতে চান না সহজে।

দ্বিতীয় ধরণটিকে বলা হচ্ছে ‘রিজার্ভড’ বা ‘সেকেলে’। তারা অন্যদের তুলনায় বেশি অন্তর্মুখী, চাপা স্বভাবের মানুষ। তারা নেতিবাচক চিন্তা খুব একটা করেন না। তারা যথেষ্ট অমায়িক এবং কর্মঠ। তাদের মানসিক অবস্থাও থাকে ভালো।

তৃতীয় ধরণটিকে বলা হচ্ছে ‘রোল মডেল’। এ ধরণের মানুষ অন্যদের তুলনায় আলাদা, সবাই তাদেরকে পছন্দ করে এবং তাদের মতো হতে চায়। তারা নেতিবাচক চিন্তা তেমন করেন না, তারা বহির্মুখী, অমায়িক, দিলখোলা এবং পরিশ্রমী। তারা নেতা হিসেবে খুবই ভালো। তাদের ওপর অন্যরা ভরসা করতে পারে। তারা নতুন অভিজ্ঞতা নিতেও পছন্দ করেন।

সবশেষের ধরণটি হলো ‘সেলফ-সেন্টার্ড’ বা ‘আত্মকেন্দ্রিক’। তারাও খুবই বহির্মুখী। কিন্তু তারা অমায়িক নন, তারা পরিশ্রমীও নন। তারা নতুন অভিজ্ঞতা নিতেও পছন্দ করেন না।

গবেষণার ফলাফল সঠিক কিনা, তা দেখার জন্য গবেষকরা টিনেজ ছেলেদের ওপর আরেকটি পরীক্ষা করেন। এই বয়সের ছেলেরা সাধারণত খুব আত্মকেন্দ্রিক হয়।  পরীক্ষায় দেখা যায়, আসলেই এ বয়সের ছেলেদেরকে আত্মকেন্দ্রিক শ্রেণীতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে আত্মকেন্দ্রিক ধরণটাতে নারীদেরকে তেমন দেখা যায় না।

আপনি যদি আত্মকেন্দ্রিক ধরণের মাঝে পড়ে যান, তাহলে চিন্তিত হবার কিছু নেই। গবেষকরা বলছেন, সময়ের সাথে ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আসে। কম বয়সে এক রকম ব্যক্তিত্ব থাকলেও বেশি বয়সে অন্য ব্যক্তিত্ব থাকতে পারে। ২০ বছরের বেশি বয়সী মানুষরা সাধারণত বেশি অমায়িক, পরিশ্রমী এবং ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হয়ে থাকেন।

সূত্র: আইএফএলসায়েন্স

প্রিয় বিজ্ঞান/ আর বি