‘মেয়েকে ছাড়া আমার আর কোন কিছুই ভাল লাগে না’

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ১০ মে ২০১৫, ১২:০৯
আপডেট: ১০ মে ২০১৫, ১২:০৯

(প্রিয়.কম) আজ মা দিবস। মায়ের প্রতি মানুষের যে গভীর প্রেম তা তুলে ধরতে জনপ্রিয় অভিনেত্রী বাঁধনের মুখোমুখি হয়েছিলাম আমরা। তিনি জানালেন মা হিসেবে তার মেয়ে এবং নিজে মেয়ে হিসেবে তার মায়ের প্রতি ভালোবাসার কথা। মাকে নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন সুদীপ্ত সাইদ খান। ছবি তুলেছেন আরিফ আহমেদ
মা দিবসে মাকে উপলক্ষ্য করে কি কি আয়োজন করলেন? শ্যুটিংয়ে থাকার কারণে মাকে নিয়ে খুব একটা আয়োজন করতে পারি নি। রাতে আমার মার জন্য কেক নিয়ে যাবো, গিফট নিয়ে যাবো। এ ছাড়া রাত্রে আমার ভাই মা দিবস উপলক্ষ্যে সবাইকে খাওয়াবে। এর বাইরে আর কিছু করতে পারি নাই। ‘মা’ শব্দটির ব্যখ্যা আপনার কাছে কেমন? মায়ের কোনো সংজ্ঞা নেই। এটার কোনো ব্যাখাও নেই। তবে আমার অবজার্ভেশন বলে যে, অনেকে আল্লার দেওয়া একটা দান বললেও একটা মেয়ে একটা সন্তানের জন্ম দিতে পারেন এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জন্মদাত্রীর সে কষ্ট তার ত্যাগ এটা কোনো সংজ্ঞা দিয়ে বিবেচনা করা যাবে না।
মায়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন? মায়ের সঙ্গে এখন বন্ধুত্বময় সম্পর্ক। তবে ছোটবেলা থেকে এমনটা ছিল না। এটা আমি এখন তৈরি করেছি। আসলে আমরা তো মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে। আপনি সহজেই বিষয়টি রিয়ালাইজ করতে পারবেন। আমরা কিন্তু এমন সময়ে বড় হয়েছি যখন বাচ্চার সঙ্গে ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক হওয়া, বাচ্চাকে নিয়ে খেলাধুলা করার এই বিষয়গুলো খুব একটা ছিল না। এই জিনিসগুলো নিয়ে মানুষ এখন সচেতন। তবে আমার মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক এখন ফ্রেন্ডলি। কিন্তু আগে এমন ছিল না। এটা আস্তে আস্তে হয়েছে। মা থেকে দূরে থাকতে কেমন লাগে? আমি তো আসলে দূরে থাকি না। আমি মাকে ছাড়া কোথাও যাই না। আর মাকেও কোথাও যেতে দেই না। কোথাও যাওয়ার দরকার হলে মাকে সঙ্গে নিয়েই যাই। আমি মাকে ছাড়া থাকতে পারি না। ধরেন দেশের বাইরে যখন যাই তখন যদি বাবা মা আমার সঙ্গে না থাকেন তাহলে তিন চারদিনের মধ্যেই আমি দেশে ব্যাক করি নইলে আমার হাউ মাউ করে কান্না হয়। আমি কান্না করি। আমার মনে হয় আমি মারা যাচ্ছি।
মা যখন শাসন করতেন, বকা দিতেন তখন কেমন লাগতো? ঐ সময় তো ভাল লাগতো না। তবে এখন মনে করি মায়ের ঐ বকাগুলির জন্যই আমি আজ বাঁধন। মা যদি ঐ বকাগুলো না দিতো তাহলে আমি আজ বাঁধন হতে পারতাম না। আপনি নিজেও এখন মা, এই অনুভূতিটা কেমন? এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এটা আমি খুবই এনজয় করি। আমার একটাই মেয়ে। মিশেল আমান। আমার মেয়ের সঙ্গে আমার খুব ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক। আমি বলবো আমার একমাত্র ফ্রেন্ড হচ্ছে আমার মেয়ে। আমার একমাত্র খেলার সাথীও আমার মেয়ে। আমি যদি এখন খেলি তাহলে আমার মেয়ের সাথেই খেলি। মেয়েকে ছাড়া আমার আর কোনকিছুই ভাল লাগে না, বাইরের কোন এন্টারটেইনমেন্টও ভাল লাগে না। বাইরে ঘুরতে গেলেও আমি ওর সঙ্গেই যাই।
মা হিসেবে মেয়ের কোন দিকগুলোর প্রতি বেশি নজর দেন? মেয়ের যাতে কোনকিছুতেই কষ্ট না হয়। তার খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই সমান নজর দেই। বলতে পারেন ওর প্রতিটি ব্যাপারেই আমি সমান সজাগ। কাজের ব্যস্ততায় যখন মেয়ের যত্ন নিতে পারেন না তখন আসলে কেমন লাগে আপনার? আমি কখনো আমার মেয়েকে সেটা বুঝতেই দেই না। আমি আটটার পরে কোন কাজ করি না। আমি তাড়াতাড়ি চলে যাই। আমি কাজ সেরেই বাসায় যাই কারণ আমার মেয়ে যেন আমার অভাব না বোঝে।
মাকে কি কখনো কষ্ট দিয়েছেন? অনেকদিনই মাকে কষ্ট দিয়েছি। এর জন্য অবশ্যই অনুসূচনা হয়। কিন্তু আমার মনে হয় মা বলে তার নিজগুণে সেটা বুঝতে পারেন। তিনি ক্ষমা করে দেন। আর যখন কষ্ট দিয়েছি তখন তো আর মায়ের দুঃখ সেভাবে অনুভব করতে পারতাম না। আপনার মা এবং আপনি যখন মা-এই দুই প্রজন্মের মায়ের ভেতর পার্থক্য কতটুকু? মা তো মা-ই। সব প্রজন্মের মা প্রায় একই। তবে এই দুই প্রজন্মের মায়ের মধ্যে পার্থক্য শুধু চিন্তা চেতনার। কারণ আমার মায়ের ভাবনা আর আমার ভাবনা এক নয়। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তাই মায়ের পার্থক্য এই একটা জায়গাতেই।