ছবি সংগৃহীত

হাঁপানি দূর করতে জীবন্ত মাছ ওষুধ- সত্য নাকি প্রতারণা?

জুলকারনাইন মেহেদী
লেখক
প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০১৩, ১৩:৪৪
আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০১৩, ১৩:৪৪

হাঁপানি একটি শ্বাসকষ্ট সম্বলিত রোগ। কার্যতঃ এটি শ্বাসনালীর অসুখ। এর ইংরেজি নাম অ্যাজমা যা এসেছে গ্রিক শব্দ Asthma থেকে। বাংলায় হাঁপানি। যার অর্থ হাঁপান বা হাঁ-করে শ্বাস নেয়া। হাঁপানি বলতে আমরা বুঝি শ্বাসপথে বায়ু চলাচলে বাধা সৃষ্টির জন্য শ্বাসকষ্ট (Dyspnoea) । সারা বিশ্বের প্রায় ১৫ কোটিরও বেশী মানুষ অ্যাজমা বা হাঁপানীতে আক্রান্ত হন। এই যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা থেকে মুক্ত হতে মানুষের চেষ্টার শেষ নেই। চলছে গবেষণা, নিত্যনতুন ওষুধের ব্যবহার। কেমন হবে, যদি আপনাকে হাঁপানির উপশমের জন্য ইনহেলার না দিয়ে ধরিয়ে দেয়া হয় জীবন্ত মাছ এবং বলা হলো একটি বিশেষ ওষুধের সাথে মাছটিকে জীবন্ত অবস্থায় মুখে পুরে দিতে হবে!

বংশ পরম্পরায় হাঁপানীর এরকম অদ্ভূত চিকিৎসা করে আসছেন ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের হায়দ্রাবাদ শহরের বাথিনী গৌড় পরিবার। তাদের দাবি তাদের এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে হাঁপানি রোগের প্রতিকার হয়। এই পদ্ধতিতে গৌড় পরিবারেরই তৈরি বিশেষ এক ওষুধের সাথে রোগীকে ২ ইঞ্চি লম্বা জীবন্ত মাছ গিলে ফেলতে হয়। ১৬০ বছর ধরে এই পদ্ধতিতে হাঁপানির চিকিৎসা করে আসছে গৌড় পরিবার। বিশেষ গোপনীয় ফর্মূলায় তৈরি “বাথিনী মাছ ওষুধ” প্রথমে জীবন্ত শোল মাছের মুখে ঢোকানো হয়। এরপর হাঁপানিতে আক্রান্ত রোগীকে সেই মাছটিকে জীবন্ত অবস্থায়ই গিলে ফেলতে বলা হয়। শোল মাছগুলো দৈর্ঘ্যে ৫-৬ সে মি হয়ে থাকে। যেহেতু শোল মাছ খুবই পিচ্ছিল তাই এটি গিলে ফেলতে তেমন সমস্যা হয় না। গলা দিয়ে নামার সময় মাছটি নড়তে থাকে , পাখা ও লেজ নাড়াতে থাকে। ফলে হাঁপানীর মূল কারণ শ্বাস নালীর ঝিল্লি (মিউকাস মেমব্রেন)তে সৃষ্ট কফের মত জামাট বাধা তরল (Phlegm) পদার্থ গুলো এলোমেলো করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। গৌড় পরিবারের মতে এর ফলে হাঁপানির উপশম হয়। তবে হাঁপানি থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে হলে রোগীকে বিশেষ খাদ্যাভাসের সাথে ওষুধটি টানা তিন বছরে মোট ৪৫ দিন ধরে খেতে হবে এবং অবশ্যই জীবন্ত শোল মাছ গিলে ফেলার পদ্ধতিতে।
বিশেষ এই ওষুধ যেটা শোল মাছের মুখে দেয়া হয় তা জুন মাসের ১ম বা ২য় সপ্তাহে জ্যোতিষীদের পরামর্শক্রমে রোগীদেরকে খেতে দেয়া হয়। তবে এই ওষুধের উপাদান কি কি সে ব্যপারে কাউকে কোন কিছু জানাতে নারাজ গৌড় পরিবার। তাদের মতে এটা করলে ওষুধের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাবে। পরবর্তীতে ভারতীয় মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্ধ্র প্রদেশের একটি আদালত গৌড় পরিবারকে তাদের তৈরিকৃত ওষুধের নমুনা প্রেরণ করার নির্ধেশ দেয়। পরীক্ষাতে কোন ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায় নি। শেষ পর্যন্ত অন্ধ্র প্রদেশের হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেন,”মাছ ওষুধের কোন উপকারিতা নেই। কিন্তু পরীক্ষাতে এতে কোন ক্ষতিকারক উপাদান-ও পাওয়া যায় নি। কিছু মানুষ যদি শুধু বিশ্বাসের কারণে এ ধরণের কোন দ্রব্য পেতে চায় তবে সেক্ষেত্রে আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করবে না ।“ ফলে এই অদ্ভূত মাছ ওষুধের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে ।