ছবি সংগৃহীত

স্বর্গীয় গুণে অপরূপ ডালিম

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০২:৫১
আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০২:৫১

ডালিমকে বলা হয় স্বর্গীয় ফল। কারণ এর রয়েছে বিভিন্ন রোগ সারানোর জাদুকরী গুণ! ডালিম বা বেদানা ফল মোটামুটি সারা বছর পাওয়া গেলেও এখন চলছে ডালিমের ভরা মৌসুম। আপেলের মতো ডালিমও রোগীর পথ্য হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। ডালিমের ইংরেজি নাম Pomegranate। এর বৈজ্ঞানিক নাম Punica granatum। বাংলায় ডালিম নামটি এসেছে সংস্কৃত 'দাড়িম্ব' থেকে। সারা বিশ্বে ডালিমকে ডাকা হয় নানা নামে। হিন্দি, উর্দু, ফারসি ও পশতু ভাষায় ডালিমকে ডাকা হয় 'আনার', কুর্দি ভাষায় 'হিনার' এবং আজারবাইজানি ভাষায় ডাকা হয় 'নার' বলে। নেপালে ডালিমকে ডাকা হয় 'দারিম' নামে এবং পাঞ্জাবের সীমান্ত অঞ্চলে এর নাম 'বেদানা'।

ডালিমের আদি নিবাস হল পারস্য অর্থাত্‍ বর্তমান ইরান ও ইরাকের কিছু অঞ্চল। সুপ্রাচীন কাল থেকেই ককেশাস অঞ্চলে ডালিমের চাষ হয়ে আসছে। পরে সেখান থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে এই ফল তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরাক, লেবানন, মিশর, চীন, মায়ানমার, সৌদি আরব, ইসরাইল, জর্ডান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুষ্ক অঞ্চল, দক্ষিণ ইউরোপ এবং আফ্রিকার ক্রান্তীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ হয়। ডালিম পাতাঝরা চিরহরিত্‍ বৃক্ষ। লম্বায় ৫-৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। অসংখ্য ডালপালা ছড়িয়ে ঝাঁকড়া আকার হয় গাছের। গাছে মে মাসে লাল রঙের চমত্‍কার ফুল আসে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে এবং কোনো কোনো প্রজাতির ডালিম গাছ থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। একটি গাছ একটানা ৩০ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে। ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী গাছে ফলন ভালো হয়। ডালিম গোলাকার ফল। কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে লাল রং ধারণ করে। ফলের ভেতর স্ফটিকের মতো লাল রঙের দানা থাকে। দানার মাঝে সাদা বা গোলাপি বীজ থাকে। ডালিম মিষ্টি এবং টক উভয় স্বাদেরই হয়। সারা বিশ্বেই ডালিম ফল হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ফলের দানা ফ্রুট সালাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়া জুস, ফালুদা, কাস্টার্ড ইত্যাদি তৈরিতে ডালিম ব্যবহার করা হয়। বিশেষ ধরনের কাবাবের উপকরণ হিসেবে ডালিমের রস ব্যবহার করা হয়। ডালিম ফল হিসেবে খুবই গুণের। বিশেষ করে রোগ সারাতে রোগীর পথ্য হিসেবে ডালিমের জুড়ি নেই! ডালিমের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে -
খাদ্যশক্তি- ৬৫ কিলোক্যালরি জলীয় অংশ- ৭৮ গ্রাম চিনি- ১৩.৬৭ গ্রাম শর্করা- ১৪.৬ গ্রাম চর্বি- ০.১ গ্রাম থায়ামিন- ০.০৬ মিলিগ্রাম রিবোফ্লেভিন- ০.১ মিলিগ্রাম নিয়াসিন- ০.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি- ১৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম- ১০ মিলিগ্রাম ফসফরাস- ৩৬ মিলিগ্রাম আয়রন- ০.৩ মিলিগ্রাম ফোলেট- ৩৮ আইইউ ভিটামিন ই- ০.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন কে- ১৬.৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম- ২৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম- ৩ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম- ১২ মিলিগ্রাম জিংক- ০.৩ মিলিগ্রাম পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ডালিমের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুণও! যেমন -
  • ডালিমগাছের শেকড়, ছাল, ফলের খোসা আমাশয় ও উদরাময়ের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • ডালিমের ফুল ঋতুস্রাবজনিত সমস্যার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • ডালিম ঠান্ডাজনিত রোগ উপশম করে। শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বাতের ব্যথা দূর করতে ডালিমের জুড়ি নেই।
  • ডালিম অরুচি দূর করে ও খিদে বাড়ায়।
  • ডালিমের রস বমি বন্ধ করে এবং অনবরত বমির ফলে শরীরে যে ক্লান্তি আসে তা দূর করে।
  • ডালিমে উপস্থিত ভিটামিন সি ও বি দাঁত এবং মুখের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • ডালিমের আয়রন, ফসফরাস, ক্যালসিয়া ও ফোলেট শরীরে রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে।
  • ডালিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া ডালিম বার্ধক্য বিলম্বিত করতেও সহায়তা করে।
  • ডালিমের গুণাবলি রক্তের তারল্য ঠিক রাখে এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
  • ডালিমের রস খুবই ভালো ত্বক পরিষ্কারক। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও ডালিমের রস কার্যকর।