
ঋণ নিয়ে ৮ হাজার কৃষকের পাশে রয়েছে ‘উইগ্রো’
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ফেনীতে নানাবাড়িতে যান উইগ্রোর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহমুদুর রহমান। ছোটবেলায় নানাবাড়িতে গিয়ে দেখেছেন কীভাবে নিজের জমিতে বর্গা চাষ করাত তাঁর নানার পরিবার। তখন থেকেই মাহমুদুর রহমানের মাথায় গেঁথে যায় এই বর্গা চাষ পদ্ধতি। পরে ঢাকায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন তিনি। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার।
মাহমুদুর রহমান ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এ ধরনের পরিবার থেকে সরাসরি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখা তাঁর জন্য কঠিনই ছিল। তাই ২০১৫ সালে পড়াশোনা শেষে বেছে নেন চাকরি। টানা ছয় বছর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। চাকরি করলেও মনে মনে ছিল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন থেকে একসময় বিনিয়োগ করেন চুয়াডাঙ্গায় বন্ধুর এক গরুর খামারে। সেখান থেকে হাতেকলমে উদ্যোক্তা হওয়ার শিক্ষা নেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৯ সালে ‘গোশত’ নামে একটি স্টার্টআপ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। নতুন এই কোম্পানি গঠনের পরপর শুরু হয় করোনা। তখন অনলাইনে ভালো ক্রয়াদেশ পেলেও পণ্য সরবরাহ করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়। তাই ব্যবসাটি আর বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
নতুন কোম্পানি গঠনের আগে মাহমুদুর চাকরি করতেন অনলাইনে দেশীয় পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘খাসফুড’-এ। তখন পরিচয় হয় আলভী রহমানের সঙ্গে। পরে আলভী রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ২০২১ সালে চালু করেন কৃষি খাতনির্ভর স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘উইগ্রো’। সম্প্রতি রাজধানীর নিকেতনে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে উইগ্রো নিয়ে কথা হয় মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, শুরুতে ২০০ বর্গফুটের কার্যালয় ছিল তাঁদের। এখন সেই আয়তন বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার বর্গফুট। শুরুতে উইগ্রোতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ টাকা। পরে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের (গণ অর্থায়ন) মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। প্রথম মাসেই পরিচিত ও আত্মীয়স্বজন থেকে প্রতিষ্ঠানটি দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ পায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ৪০টির বেশি উপজেলায় ৮ হাজার কৃষককে ৮০ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে। বর্তমানে উইগ্রোতে কাজ করছেন ১১০ জন কর্মকর্তা।
আলাপকালে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষিঋণের সীমা বেঁধে দেয়। তবে বেশির ভাগ ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ করে বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কারণ, দেশের ৯০ শতাংশ কৃষকের কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। আবার ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে গুনতে হয় চড়া সুদ। কৃষকের জন্য ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। তাই সহজে কৃষকের হাতে ঋণ পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ থেকে উইগ্রো গড়ে তুলি। বর্তমানে উইগ্রোর নিবন্ধিত কৃষকের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। তাঁদের প্রত্যেকের ৫০ ধরনের তথ্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কাছে। সেই তথ্য ব্যবহার করেই ইউসিবি, ব্র্যাক ব্যাংকসহ মোট সাতটি ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ৪ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। উইগ্রোর মাধ্যমে কৃষক চাইলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেও ঋণ নিতে পারেন।’