ছবি সংগৃহীত

সাদা বাঘের রহস্য

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ১৩:০৪
আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ১৩:০৪

সাদা রঙের ওপর কালো ডোরাকাটা বাঘ এখন দুর্লভ। হলুদ বা কমলা রঙের ওপর কালো ডোরাকাটা বাঘই এখন চোখে পড়ে। বাঘের এই রঙের পার্থক্যের কারণ নিয়ে গবেষণা করেছেন চীনের একদল বিজ্ঞানী। তাঁরা দেখেছেন,একটি জিনের (বংশগতির নিয়ন্ত্রক) সামান্য পার্থক্যের কারণেই বাঘ কখনো সাদার ওপর ডোরাকাটা,কখনো বা কমলার ওপর ডোরাকাটা হয়ে থাকে। কমলা বাঘের মতো সাদা বাঘও বেঙ্গল সহপ্রজাতির। একসময় আসাম, বাংলা ও বিহারে দুর্লভ সাদা বাঘের দেখা মিলতো। চীনের বিজ্ঞানীরা জানান,কোনো প্রাণীর শরীরের রঙের জন্য দায়ী জীবদেহের কোষের স্বাভাবিক রঞ্জন বা পিগমেন্ট। এটা মানুষসহ প্রায় সব প্রাণীর মধ্যেই থাকে। এই কোষের জিনের সামান্য পার্থক্যেই বাঘের শরীরের রং পরিবর্তন হয়। পিকিং ইউনিভার্সিটির সু-জিন লুয়ো ও তাঁর দলের গবেষণার প্রতিবেদনটি কারেন্ট বায়োলোজি সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়েছে।

চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী সু-জিন লুয়ো ও তার সতীর্থরা পরীক্ষা করে দেখেছেন জিনের একটি বিশেষ রঞ্জক পদার্থের পরিবর্তনই এই সাদা রঙের জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীদের মতে কোনো প্রাণীর কোষের স্বাভাবিক রঞ্জক পদার্থই দেহবর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানীরা সাদা বাঘের দেহকোষের জিন পরীক্ষা করে দেখেছেন কোষের মধ্যে বিশেষ রঞ্জক জিন ‘এসএলসি৪৫এ২’ আছে। বিশেষত মানুষসহ ঘোড়া, মুরগি ও মাছের দেহের হাল্কা রঙের জন্যও এই রঞ্জক পদার্থটি দায়ী। এই বিশেষ রঞ্জকটি কালো-হলুদ রং তৈরিতে বাধা দেয়। কিন্তু সাদা বাঘের গায়ে হাল্কা কালো ডোরার কারণ ‘এসএলসি৪৫এ’ জিনের মধ্যে ‘এ৪৭৭ভি’ নামক অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিবর্তন। সম্প্র্রতি ‘কারেন্ট বায়োলজি’ নামক একটি জার্নালে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণা পত্রটি প্রকাশ করেছেন। মেন্ডেলের সূত্র অনুযায়ী জিনের ভিন্নধর্মী উপাদানের মধ্যে যেটি প্রকাশিত হয় না তাকে প্রচ্ছন্ন উপাদান বা ‘রিসেসিভ ফ্যাক্টর’ বলে। অর্থাৎ সাদা বাঘের ক্ষেত্রে হলুদ রঞ্জক সৃষ্টিকারী জিনটি প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন বাঘের দেহবর্ণ সৃষ্টিকারী রঞ্জক দুটি হলো ফিওমেলানিন ও ইউমেলানিন। এদের মধ্যে কালো-হলুদ রং তৈরি করে ফিওমেলানিন রঞ্জক। কিন্তু সাদা বাঘের ক্ষেত্রে এই রঞ্জক তৈরির প্রক্রিয়াটি অ্যামাইনো অ্যাসিড পরিবর্তনের ফলে বা ‘পয়েন্ট মিউটেশন’-এর কারণে রাসায়নিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সাদা বাঘ এখন বিলুপ্ত প্রায়।
বিরল প্রজাতির সাদা বাঘটি সংগ্রহ করেছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রামকৃষ্ণ মিশন রোডের সৌখিন প্রাণী সংরক্ষণবিদ সিতেশ রঞ্জন দেব। তার মিনি চিড়িয়াখানায় প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বাঘটি দেখতে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। সূত্র জানায়, ৭/৮ বছর আগে ৬ মাস বয়সি এ সাদা বাঘটি শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। সিতেশ দেব খবর পেয়ে সাদা বাঘটি সংগ্রহ করে তার মিনি চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসেন। বর্তমানে বাঘটি লম্বায় ৪ ফুট, উচ্চতা আড়াই ফুট এবং ওজন ২৫ কেজি। অত্যন্ত হিংস্র এ সাদা বাঘটি মাংস ছাড়া অন্য কোনো খাবার খায় না। প্রতিদিন বাঘটি দেড় কেজি মুরগির মাংস খেয়ে থাকে। এ বাঘের সবচেয়ে আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- প্রতি মুহূর্তে এর চোখের রঙ বদলায়। কিছুক্ষণ পরপর এর চোখ লাল, হলুদ, সাদা ও কমলা রঙ ধারণ করে।