
শরতে শাপলা বিলে
রাত প্রায় ১২টায় ত্রিশাল বাজার। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলাম আমাদের অন্য এক বন্ধুর বাড়ি, হরিরামপুর গ্রামে। চেলারঘাট সড়ক দিয়ে অল্প কিছুদূর যাওয়ার পরেই দেখি, ভুল রাস্তায় চলেছি আমরা। সেই মধ্যরাতে বেশ একটা উত্তেজনা ভাব ভর করল শরীরে। ফলে ফিরতে হলো ত্রিশাল বাজারের কাছাকাছি এক সিএনজি পাম্পে। গাড়ি রেখে এর আশপাশে থাকা চা-দোকানে আড্ডা জমাই। আহ্, লাল শাপলা! সূর্য ওঠার আগে যেতে না পারলে এর মূল সৌন্দর্য অদেখাই রয়ে যাবে।
সেই ভোররাতে বিলে যাব, তাই ঘুমাতে আর যাওয়াই হলো না। পায়চারি করে রাত পার করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে নিলাম। কিন্তু রাত পারই হতে চাচ্ছে না। কী আর করা। সেই মধ্যরাতে গরম পরোটা আর ডিম ভাজা খাওয়া ছাড়া উপায় কি! গাভির দুধের মালাই চায়ের কাপে চুমুকে চুমুকে ফজরের ওয়াক্ত। নামাজ আদায় করেই মোবাইল ফোনে কল দিলাম বীররামপুর ভাটিপাড়া গ্রামের তরুণ রমজানকে। কল পেয়ে তো সে বিস্মিত।
ত্রিশাল বাজার থেকে মাত্র ২০ মিনিটে পৌঁছে যাই তার কাছে। হাই-হ্যালো পর্ব চুকিয়ে নয়নাভিরাম গ্রামের ভোরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে হাজির হই গলর বিলের খেয়াঘাটে। ডিঙিতে চড়ার আগেই চোখ ধাঁধিয়ে গেল! চারদিক যেন লালের সমুদ্র! মাঝেমধ্যে হঠাৎ চোখে পড়ে ফুটে থাকা সাদা শাপলার ওপর। এক অপার্থিব সৌন্দর্য বিলজুড়ে ভর করে আছে এই ভোরবেলা। আলো ঠিকমতো ফোটেনি তখনো; কিন্তু শাপলা ফুল ঠিকই ফুটে রয়েছে। উঠে বসলাম খেয়ায়।
পানির ওপর ভেসে থাকা শাপলাগাছ দুদিকে সরিয়ে এগিয়ে চলেছে আমাদের নৌকা। যতই এগিয়ে যাই, ততই মুগ্ধতা ভর করে। এর আগেও লাল শাপলা বিলে গিয়েছি। কিন্তু গলর বিলের শাপলার সৌন্দর্য ভিন্নমাত্রার। লাল শাপলার ফাঁকফোকর গলে মৎস্যশিকারিদের টেঁটা, যুইতা গিয়ে বিঁধেছে মাছের গায়ে। প্রাণ যায়, প্রাণ বাঁচে। জগতের এই লীলাখেলা। এসব নিয়ে ভাবতে গেলে পড়ে যাব এক মহা গোলকধাঁধায়। এর চেয়ে ঢের ভালো লাল শাপলা ভেদ করে এগিয়ে যাওয়া।