সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলেই সবাই জানে। কারণ এতে বেশ ভালো ব্যায়াম হয়, শরীরে রক্তচলাচল ভালো হয়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জড়তা কাটে। কিন্তু এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে কি করে? হতে পারে, যদি আপনি নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে বা কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত করে থাকেন। ঢাকার রাস্তায় যে ভয়াবহ বায়ু দূষণ তার পুরো ক্ষতিটাই যে আপনার ওপর পড়ছে!
খুব বেশি ট্রাফিক জ্যামের মাঝে বাস অথবা রিকশায় বসে থাকা চরম বিরক্তিকর। এ কারণে অনেকেই সাইকেল কিনে ফেলেন। স্থবির হয়ে থাকা গাড়িঘোড়ার ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যাওয়া যায় সহজেই। কিন্তু এ অবস্থায় আপনার ফুসফুসে কি পরিমাণ কালো ধোঁয়া প্রবেশ করছে তা কি বুঝতে পারছেন? বিশেষ করে বাস বা ট্রাকের পেছনে থেকে সাইকেল চালানো অবস্থায় তো ধোঁয়া দিয়েই চমৎকার ব্রেকফাস্ট সেরে ফেলা যায়। এই পরিস্থিতি শুধু বিরক্তিকরই নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্যেও মারাত্মক ক্ষতিকর।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রেজার ভ্যালি থেকে কয়েকজন গবেষক এক হয়ে একটি পরীক্ষা করেন। কয়েকজন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবী তাদের ল্যাবে এসে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। স্থির বাইসাইকেলে বসে আধা ঘন্টা সাইকেল চালাতে বলা হয় তাদেরকে। এ সময়ে তাদের মুখে লাগানো মাস্কে বিশুদ্ধ অথবা ডিজেল-পোড়া বায়ু সরবরাহ করা হয়। এই বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া অবস্থায় তাদের অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ, হৃদস্পন্দনের গতি এবং অন্যান্য শারীরিক অবস্থার তথ্য নেওয়া হয়।
গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য বেশ অদ্ভুত। ধীর গতিতে সাইকেল চালানো অবস্থায় শরীরে বেশ খারাপ প্রভাব ফেলে ডিজেল-পোড়া ধোঁয়া। কিন্তু যখন সেই ব্যক্তি জোরসে সাইকেল চালাচ্ছেন, তখন শরীরের ওপর বিশুদ্ধ বায়ু আর দূষিত বায়ুর প্রভাব প্রায় কাছাকাছি।
গবেষণার সাথে জড়িত ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার মিশেল কোয়েল বেশ অবাক হন এই ফলাফল দেখে। কারণ তারা এর ঠিক উল্টোটা হবে আশা করেছিলেন। কারণ জোরে সাইকেল চালানোর সময়ে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। আবার অনেক সময়ে মানুষ নাকের বদলে মুখ দিয়ে নিশ্বাস নেয়। এতে শরীরে বেশি পরিমাণে দূষণ ঢোকার কথা। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। ফলাফল হয়েছে একেবারেই বিপরীত। “আমরা যা ফল পেয়েছি তাতে বোঝা যায়, বেশি দূষণের মাঝে ধীরে সাইকেল চালানো যাবে না”, বলেন কোয়েল।

কি কারণে ধীরে সাইকেল চালালে ক্ষতি বেশি হয় আর দ্রুত চালালে ক্ষতি কম হয় সে ব্যাপারে সঠিক জানা যায়নি এই গবেষণা থেকে। কিন্তু গবেষকরা কিছু তত্ব দাঁড় করিয়েছেন। একটা ব্যাখ্যায় বলা হয়, সাইকেল চালানোর সময় শরীরের এত বেশি ব্যায়াম হয় যে এর ফলে শরীরে দূষণ তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারে না।
এই গবেষণা থেকে কিন্তু এটা ধরে নেবেন না যে বায়ু দূষণ আপনার ক্ষতি করবে না। অতীতের অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, বছরের পর বছর বায়ু দূষণের আওতায় থাকার ফলে মানুষের হৃদরোগ এবং ফুসফুসের জটিলতার পরিমাণ বেড়ে যায়। মাত্র আধা ঘণ্টার এই গবেষণায় সেই প্রভাব দেখা যায়নি, তারমানে এই নয় যে ক্ষতি হয় না। বিভিন্ন ফুসফুসের সমস্যা (যেমন অ্যাজমা) যাদের নেই তাদের জন্য এই দূষণ এড়ানোর পন্থা বলে দেওয়া হয়েছে এই গবেষণায়। সম্ভব হলে এমন সময় সাইকেল চালান যখন রাস্তায় গাড়িঘোড়া কম থাকে। এ কারণে ভোরের দিকে সাইকেল চালানো ভালো। গাড়ির ধোঁয়া থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
সর্বোপরি, দূষণের মাঝে সাইকেল ধীরে চালালে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে। এই ক্ষতির পরিমাণ কমাতে চাইলে বেশ দ্রুত সাইকেল চালানোই উত্তম। আর দূষণ থেকে দূরে থাকাটা সবচাইতে বুদ্ধিমানের কাজ।