
ছবি সংগৃহীত
সহজে পানি বিশুদ্ধ করার চারটি পদ্ধতি ও সেগুলোর "ভালোমন্দ"
প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০১৪, ০৭:০১
আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪, ০৭:০১
আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪, ০৭:০১
(প্রিয়.কম) বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। আর অবিশুদ্ধ পানি প্রাণঘাতক। আপনি বিশুদ্ধ জেনে যে পানি পান করছেন প্রতিদিন, তা কি প্রকৃতই বিশুদ্ধ? স্বচ্ছ পানিতেও মিশে থাকতে পারে ক্ষতিকর জীবাণু! অনেকে ফুটিয়ে পানি পান করেন। কিন্তু সঠিক উপায়ে ফুটিয়ে নিচ্ছেন তো আপনার পানের পানি? আসুন জেনে নেই পানি বিশুদ্ধকরণের চারটি সহজ পদ্ধতি ও সেগুলোর ভালোমন্দ।
১. ফুটানো:
পানি ফুটিয়ে (Boiling) জীবানু মুক্ত করার পদ্ধতিটা প্রায় সকলেরই জানা। সরাসরি ডোবা বা জলাশয়ের পানির ক্ষেত্রে অন্তত ২০ মিনিট ধরে ফুটানোর কথা বলা হয়। তবে আমেরিকান সরকারী পরিবেশ সংরক্ষণ এজেন্সির (USEPA) মতে, ফিল্টারকৃত থিতানো পানি ১ মিনিট ধরে পূর্ণমাত্রায় ফুটালেই কাজ হবে (এক মাইলের চেয়ে বেশি উচ্চতার জায়গায় ৩ মিনিট; কারন, উঁচু জায়গায় পানির স্ফুটনাংক কমে যায়)। অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার পানির জন্য ১ মিনিট টগবগ করে ফুটানো যথেষ্ট। এটা পানি ফুটানোর সবচেয়ে অদক্ষ পদ্ধতি। পৃথিবীর কোনো পানির শোধনাগারে জীবানু মুক্ত করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়না। অনেকেই পানি দীর্ঘসময় ধরে ফুটান। এটা খুবই ক্ষতিকর। দীর্ঘ সময় ধরে পানি ফুটালে পানিতে অক্সিজেনের পরিমান কমে যায়। আর পানিতে মিশ্রিত ধাতব উপাদানের মাত্রা বেড়ে যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য অপকারী।২.আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি:
পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানি জীবানু মুক্ত করার জন্য অতিবেগুনি বিকিরণ (ultra violet radiation) খুবই কার্যকরী একটা পদ্ধতি। যে কোনো ধরণের ব্যাকটেরিয়া, সিস্ট এবং স্পোর ধ্বংস করতে এই অতিবেগুনি রশ্মী অত্যন্ত শক্তিশালী একটা অস্ত্র; তবে ঘোলা পানিতে কিংবা পানিতে নাইট্রেট, সালফেট বা ফেরাস (আয়রন) আয়ন একে কাজ করতে বাধা দেয়। এছাড়া অতিবেগুনি রশ্মি পানির বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে না, তাই পানিকে অগভীর ধারায় প্রবাহিত করতে হয় (সর্বোচ্চ ৩০ সেমি বা ১ ফুট)। পানিকে তাৎক্ষনিক ভাবে জীবানুমুক্ত করলেও পরবর্তীতে সেই পানি সরবরাহ লাইনে/পাইপে অন্য কোন জীবানু উৎস থেকে দুষিত হলে সেটা ঠেকানো যায় না; এছাড়া এটার খরচও বেশি। তাই এই পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজে সীমাবদ্ধ। তবে জেনে রাখতে ক্ষতি নাই, হয়তো কখনো কোনো পরিস্থিতিতে কাজে লেগে যেতে পারে।৩. সৌর পদ্ধতি:
দুষিত পানিকে সূর্যালোকে রেখে দিলে সেখানকার ডায়রিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া অকার্যকর হয়ে যায়। ধারণা করা হয় রোগবাহী জীবানুগুলো সূর্যালোকের প্রভাবে দুর হওয়ার পেছনে তিনটি কারণ কাজ করে: ক) অতিবেগুনি-এ রশ্মীর কারণে ব্যাকটেরিয়ার বিপাক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয় এবং কোষ কাঠামো ধ্বংস হয়। খ) ৩২০-৪০০ মিমি তরঙ্গদৈর্ঘের অতিবেগুনি রশ্মি পানিতে দ্রবীভুত অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে এবং অক্সিজেনের অত্যন্ত সক্রিয় রূপ উৎপাদন করে (ফ্রি রেডিক্যাল, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড); এগুলোও রোগ-জীবানুগুলো নষ্ট করে দেয় বলে ধারণা করা হয়, এবং গ) সৌরশক্তি সঞ্চয়ে পানির তাপমাত্রা বেড়ে যায়, ৫০°সে. এর অধিক তাপমাত্রায় এই জীবানুনাশী প্রক্রিয়াগুলো তিনগুন দ্রুততর হয়। সৌর পদ্ধতিকে ইংরেজিতে SODIS বলে। এই পদ্ধতিতে জীবানুমুক্ত করতে ৩০°সে. তাপমাত্রায় প্রায় ৫ ঘন্টা পূর্ণ সূর্যের আলোতে রাখতে হয় পানিকে। এসময়ে সৌর বিকিরণের মাত্রা থাকতে হয় ৫০০ ওয়াট/বর্গমিটার (সব তরঙ্গদৈর্ঘ মিলিয়ে)। ৪৫°সে. এর অধিক তাপমাত্রায় অতিবেগুনি রশ্মি এবং তাপমাত্রার সম্মিলিত ক্রিয়ায় জীবানুনাশী দক্ষতা আরো বৃদ্ধি পায়। এই পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় পানি শোধন করা যাবে না, কিন্তু যেসব প্রত্যন্ত স্থানে পরিশোধিত পানির অন্য কোনো উপায় নেই সেখানে এটা জীবন রক্ষা করতে পারে। দূর্গম এলাকায় ভ্রমনকারী এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্থ অঞ্চলে দূষিত পানি জনিত রোগ ঠেকাতে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।৪. ক্লোরিন দ্বারা:
ক্লোরিন বিভিন্ন রূপে পানির জীবানুনাশ করার জন্য বহুল ব্যবহৃত একটি কেমিকেল। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে পানিশোধণে ক্লোরিন ব্যবহার শুরুর করার পর সারা বিশ্বে পানিজনিত রোগে মৃত্যূহার অনেক হ্রাস পেয়েছে। জরুরি অবস্থায় পানি শোধন কাজে হ্যালোট্যাব বা ক্লোরিনের ট্যাবলেট ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। কত পরিমাণ পরিষ্কার পানিতে একটি ট্যাবলেট দিতে হবে সেটা ট্যাবলেটের মোড়কে লেখা থাকে। এভাবে পরিশোধিত পানিতে কিছুটা ক্লোরিনের গন্ধ থাকে। তবে, সেই পানিকে সামান্য গরম করলেই সমস্ত গন্ধ চলে যাওয়ার কথা। আমাদের দেশে মানুষ পানিতে ক্লোরিন তথা ব্লিচিং-এর গন্ধ পেলে নাক সিটকায়, অথচ উন্নত বিশ্বে এই গন্ধ পেলেই পানি পান করতে নিরাপদ বোধ করে মানুষ, আর সরবরাহকৃত পানিতে ক্লোরিনের গন্ধ না থাকলেই সেই পানি পান করতে ইতস্তত করে। ঢাকা শহরে সরবরাহকৃত পানির একটা বড় অংশ ডিপ টিউবওয়েলের পানি, যাতে জীবানু থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে সরবরাহ লাইনে লিক দিয়ে দূষণ হওয়া অসম্ভব নয়। অনেক এলাকাতেই পানির লাইন পয়ঃনিষ্কাশন নালার মধ্যদিয়ে গিয়েছে – যা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। এছাড়া বাসা-বাড়ির পানির ট্যাংকিগুলো পানিতে জীবানু প্রবেশের অন্যতম পথ। তাই এই ট্যাংকিগুলো এবং ব্যবহারের শুরুতে পুরা পানি সরবরাহ পাইপগুলোকে জীবানুমুক্ত করে নেয়া জরুরি। অনেকেই ফিল্টারের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করে নিচ্ছেন। কিন্তু ফিল্টারগুলো মানসম্মত ও বিশুদ্ধকরণে কার্যকর কিনা সেটাও যাচাই করে দেখবেন। পত্র-পত্রিকায় নকল ফিল্টার তৈরির সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে প্রায়ই। যাইহোক, পানি বিশুদ্ধ করে পান করুন, সুস্থ থাকুন।
যুগান্তর
| আমেরিকা / যুক্তরাষ্ট্র
৫২ মিনিট আগে
১ ঘণ্টা, ১৪ মিনিট আগে
১৫ ঘণ্টা, ৫৪ মিনিট আগে
১৫ ঘণ্টা, ৫৬ মিনিট আগে
১৫ ঘণ্টা, ৫৬ মিনিট আগে
১৬ ঘণ্টা, ১ মিনিট আগে
১৮ ঘণ্টা আগে
১৮ ঘণ্টা, ৩ মিনিট আগে
২১ ঘণ্টা, ২১ মিনিট আগে
২১ ঘণ্টা, ২৩ মিনিট আগে
২১ ঘণ্টা, ২৪ মিনিট আগে
২১ ঘণ্টা, ২৪ মিনিট আগে