
ছবি সংগৃহীত
শাশুড়ির কারণে দাম্পত্যে অশান্তি, কিংবা ডিভোর্স!
আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০১৪, ১৭:১৮
(প্রিয়.কম) লেখার শিরোনামটা পড়তে যতটা খারাপই লাগুক না কেন, কঠিন বাস্তবতা এটাই যে আজকাল অনেক সংসারেই "শাশুড়ি" বা শাশুড়ির সাথে সম্পর্ক একটি বড় সমস্যার নাম। ভাবছেন কেবল নারীদের কথা বলছি? ধারণাটা একদম ভুল! কেবল নারীরাই নন, প্রচুর পুরুষও শাশুড়িকে নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। তবে সমস্যা নারী কিংবা পুরুষ যার-ই হোক না কেন, দিনশেষে পরিণাম হচ্ছে সেই একটাই-দুজন মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত দাম্পত্যে অশান্তি। দুজন নারী-পুরুষের দাম্পত্যে শাশুড়িও তৃতীয় ব্যক্তি বৈকি, কেননা দাম্পত্য এমন একটি সম্পর্ক যেখানে মাত্র দুজন মানুষের অস্তিত্ব থাকতে পারে। আর যখনই তৃতীয় ব্যক্তি নাক গলায়, সমস্যা শুরু সেখান থেকেই। আমাদের সমাজে "মা" পরম পূজনীয় একজন, এবং শাশুড়িও মাতৃস্থানীয়া। তাছাড়া তিনি যেহেতু আপনার স্বামী কিংবা স্ত্রীর "মা", তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁর অন্যায় থাকলেও কিছু বলা হয়ে ওঠে না কিংবা বলা যায় না।

কী ধরণের সমস্যা মূলত হয়?
সমস্যা কেমন হয়, সেটা কমবেশি সকলেরই জানা। শাশুড়ি-বউয়ের সমস্যায় সাধারণত এক তরফা বউটিকেই দোষারোপ করা হয়। অথচ সত্যি কথা বলতে কি, শাশুড়িদের দোষও থাকে সমান সমান। শাশুড়ি বয়সে বড়, সবদিক সামলে নেয়ার দায়িত্ব তাঁরই। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বউটিকে সাহায্য করার বদলে পদে পদে তাঁর ভুল ধরতেই ব্যস্ত থাকেন শাশুড়ি। প্রেমের বিয়ে তো বটেই, আরেঞ্জ ম্যারেজেও এই সমস্যা অহরহ দেখা যায়। আর বউ কর্মজীবী হলে তো কথাই নেই! নারীরা শাশুড়িকে নিয়ে যেসব সমস্যা মোকাবেলা করেন সেগুলো মূলত হচ্ছে- ছেলের কাছে বউয়ের নামে গোপনে দুর্নাম করা, বউকে অতিরিক্ত কাজের চাপ দেয়া, এমন কিছু সব সময় করতে বলা যেগুলো কষ্টকর, সারাক্ষণ কথা শোনানো, বাইরের মানুষের সামনে অপদস্থ করা, যৌতুকের জন্য চাপ দেয়া, ব্যক্তিগত দাম্পত্য জীবন ও সন্তানধারণ বিষয়ে নাক গলানো, শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে বাঁধা ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও আসলে অসংখ্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় নারীদেরকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট আবার ভিন্ন। তাঁদের ক্ষেত্রে মূল সমস্যাটি আছে কুচক্রী শাশুড়ির ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। অনেক মেয়েই আছে যারা বিয়ের পরেও নিজের মায়ের পরামর্শ অনুযায়ী চলে এবং তাঁর প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। তাঁরা এটা ভুলে যায় যে এটি তাঁর সংসার, এখানে তাঁর মায়ের কথা খাটবে না। নিজের মায়ের কথা শুনে সংসারে নানান রকমের ভুল পদক্ষেপ নেয় স্ত্রী, এবং সেগুলো ভুক্তভোগী হন স্বামী বেচারা। আর এক্ষেত্রে শাশুড়ি যদি সাথেই থাকে, তাহলে সমস্যা হয় আরও ভয়াবহ। অনেক শাশুড়িই আছেন যারা কন্যা ও জামাইয়ের সংসারে নিজের মতামত চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেন, কন্যার সাথে শ্বশুরবাড়ির ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান, কন্যাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার বদলে কূটকৌশল ও স্বার্থপর হতে শেখান।
কী করবেন?
অনেকেই মনে করেন এই পরিস্থিতিতে করার কিছুই নেই। সমস্যা বাড়তে, বাড়তেই থাকে... এবং বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে এমন পরিস্থিতিতে পৌঁছে যায় যে দুজনের সংসারে হয়ে যায় চিরস্থায়ী ফাটল। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সরাসরি ডিভোর্স হয় না, কিন্তু সম্পর্ক যেটুকু অবশিষ্ট থাকে সেটা অশান্তির নাগপাশ বৈ আর কিছুই নয়। শুধু শাশুড়ির কারণে ডিভোর্স হয়ে গেছে, এমন বিবাহের সংখ্যাও কম নয় আজকাল। আপনি নারী বা পুরুষ যেই হন না কেন, যদি শাশুড়ির কারণে সংসারে অশান্তি মোকাবেলা করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য রইলো কিছু পরামর্শ-- -আপনার পরিস্থিতি কতটা গুরুতর সেটা এত দূর থেকে আমাদের বোঝার কোন উপায় নেই। তাই ব্যাপারটা আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে। শাশুড়ি কি আপনার গায়ে হাত তোলে? বা শারীরিকভাবে আঘাত করার চেষ্টা করে? কিংবা আপনাকে নানান কারণে মেরে ফেলার বা গায়ে হাত তোলার হুমকি দেয়? কিংবা গোপনে অন্য লোক দ্বারা আপনাকে নানান রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করে? এবং এই সব কিছুতে কি আপনার স্বামী নির্বিকার? তাহলে অবিলম্বে সেই বাড়ি ত্যাগ করুন। যদি একান্তই ত্যাগ করতে না পারেন তাহলে গোপনে থানায় একটি জিডি করিয়ে রাখুন। এবং সে বিষয়ে বিস্তারিত নিজের কাছের বন্ধুকে বা ভাইবোনকে জানিয়ে রাখুন।
- -যদি পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ না হয়, তাহলে প্রথমেই নিজের স্বামী বা স্ত্রীর সাথে কথা বলুন। তবে বাড়িতে বসে নয়, বাইরে কোথাও। কথা শুরুর আগে তাঁকে ভালমত জানান যে আপনি তাঁকে কতটা ভালোবাসেন। এবং তারপর সুন্দর করে গুছিয়ে বুঝিয়ে বলুন যে তাঁর মা যা করছে সেটা আসলেই ঠিক নয়, এবং এই অন্যায় আপনার পক্ষে মেনে নেয়া খুব কষ্টকর একটি বিষয় হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকতে আপনাদের সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি হবে।
- -বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন "আমার মা ঠিক, আমার মা কখনো ভুল হতে পারেন না"! এবং দাম্পত্য সমস্যার শুরু আসলে এই ভাবনা থেকেই। আপনার স্বামী বা স্ত্রীও কি তাই মনে করেন? আপনার বারবার বুঝিয়ে বলাতেও কি কাজ হচ্ছে না? তাহলে এবার পালা পরিবারের বড়দের দারস্থ হওয়ার। নিজের ও শ্বশুরবাড়ির সিনিয়র ব্যক্তিদের শরণাপন্ন হন। যেমন নিজের মা বাবা ও বড় ভাই বোন, শ্বশুর, ভাসুর, ননাস। তাঁদের সবাইকে একত্রিত করুন এবং শাশুড়ি ও স্বামী/স্ত্রীর সামনেই বিষয়গুলো খুলে বলুন। কোন প্রকার লুকোচুরি রাখবেন না। আপনি কী চান, কী অনুভব করছেন সবকিছু অকপটে বলুন। এতে একটা ঝামেলা হবে ঠিকই, কিন্তু বড়দের হস্তখেপে একটা সমাধানও বের হয়ে আসবে।
- -এসবের পরেও সমাধান হয়নি? এবং আপনি চাইলেও ডিভোর্স দিতে পারছেন না সন্তান বা অন্য কোন কারণে? তাহলে যে পদ্ধতি অবলম্বন করবেন সেটা হলো, নির্বিকার চিত্তে এড়িয়ে যাওয়া। কাজটা ভীষণ কষ্টের, তবু যেহেতু আপনার অন্য কোন উপায় নেই তাই এটাই করতে হবে। শাশুড়ি যাই বলুন বা করুন না কেন গায়ে মাখবেন না, তবে স্বামী বা স্ত্রীকে অবশ্যই বুঝিয়ে দেবেন যে তাঁর মায়ের কাজটা ঠিক নয়। সন্তানদেরকেও কুচক্রী শাশুড়ি হতে দূরে রাখুন।