
ছবি সংগৃহীত
লালন সাঁইয়ের স্মরণে বাউল উৎসব
আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬, ২১:৩৫
(প্রিয়.কম) কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের আখড়া বাড়িতে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে বাউল উৎসব ও গ্রামীণ মেলা। এ আয়োজনকে ঘিরে ছেঁউড়িয়ায় মরা কালিগঙ্গা নদীর তীরের আখড়া বাড়িতে এখন সাজ সাজ রব।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুজিব-উল ফেরদৌস জানান, বাউল সম্রাট লালন শাহের আখড়া বাড়িতে তিনদিনের দোলপুর্ণিমা উৎসবে সব ধরনের আয়োজন করা হয়েছে। তিন বেলার খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ আইনশৃংলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে তিনি জানান। মহান স্বাধীনতা দিবস ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে এবার উৎসবের কলেবর ছোট করে তিন দিনের করা হয়েছে। বাসস
স্মরণোৎসবের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শেষ করেছে লালন একাডেমি। এ ব্যাপারে লালন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক বলেন, এ উৎসবে সাধুদের রীতিনীতি সাধুরা পালন করবেন। তাদের পাশাপাশি লালন একাডেমি তাদের কার্যক্রম চালাবে।
চলবে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ মেলা। তবে এবার আয়োজনটা একটু কম করা হয়েছে। একেতো স্বাধীনতা দিবস তারপর ইউনিয়ন পরিষদ ভোট এসবের জন্য কর্মসূচি কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। বিগত দিনের ন্যায় এবারও লালন একাডেমি এছাড়াও এ উৎসব উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
মরমি সাধক ফকির লালন সাঁইজি জীবদ্দশায় শিষ্যদের নিয়ে দোল পূর্ণিমায় ছেঁড়িয়ার কালীগঙ্গা নদীর তীরে সারা রাত ধরে তত্ত্ব কথা আলোচনা ও গান বাজনা করতেন। আজ আর কালী গঙ্গায় স্রোত নেই, মানুষ তাই নাম দিয়েছে মরাকালী গঙ্গা। তবে নদীর স্রোত থেমে গেলেও সাঁইজির ভক্তরা থেমে যাননি। তাঁর মৃত্যুর পরও ভক্ত-শিষ্যরা এ বিশেষ দিনটি পালন করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। তবে এবার স্বাধীনতা দিবসের কারণে ৫দিনের উৎসবকে কাটছাট করে ৩ দিনের করা হয়েছে।
এ উৎসবে যোগ দিতে এরই মধ্যে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বাউল তীর্থভূমি ছেঁড়িয়ার আখড়া বাড়িতে ছুটে এসেছেন সাধু-গুরু-বাউল, ভক্তরা। ছোট দলে ভাগ হয়ে দরদ ভরা গলায় গেয়ে চলেছেন লালনের গান। আবার কেউ বা মেতে উঠেছেন গুরুবাদি বাউল ধর্মের নিগূঢ় তত্ত্ব কথার আলোচনায়। এসেছেন দেশ বিদেশের নানা বয়সী দর্শনার্থী। এ আয়োজনে যোগ দেয়ার জন্য বাউলদের কোন চিঠি দেয়া হয় না, জানানো হয় না নিমন্ত্রণ। তারপরও এক অদৃশ্য সুতোর টানে এরা দলে দলে ছুটে আসেন এ বাউল ধামে।
আখড়া বাড়ির আঙ্গিনায় বসার জায়গা হবে না বলে অনুষ্ঠান শুরুর ১০ দিন আগেই এসে আসন পেতেছেন সিরাজগঞ্জের লালন ভক্ত ষাটোর্ধ্ব কলিম শাহ। আলাপকালে এই প্রবীণ বাউল সাধক বলেন, বছরে দুবার সাঁইজির বারামখানায় সাধু-গুরুদের মিলন মেলা বসে। এ সময়ে কিছুতেই বাড়িতে মন টেকে না। সংসারের সব মায়ার সুতো ছিঁড়ে চলে আসেন আখড়া বাড়ি, গত ৩০ বছর ধরে এমনটি করে আসছেন কলিম শাহ।
আরেক বাউল সাধক ফকির জিল্লু শাহ বলেন, আগে আসলে সাঁইজির মাজারের কাছাকাছি বসার জায়গা মেলে। আবার অনেক দিন ধরে এখানে কাটানো যায়। এর যে কি আনন্দ, কি স্বাদ তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।