ছবি সংগৃহীত

মারাত্মক রোগ হুপিং কাশি থেকে রক্ষা করুন আপনার শিশুকে

সাবেরা খাতুন
লেখক
প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৪:৩৬
আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৪:৩৬

ফটো সোর্স : www.texilaconnect.com

(প্রিয়.কম)- হুপিং কাশি খুবই গুরুতর রোগ যার ফলে শিশুর শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। টিকার মাধ্যমে ছোট শিশুকে এই রোগটি থেকে রক্ষা করা যায়। তাই শিশুর টিকা দেয়ার ব্যপারে নিশ্চিত হন। হুপিং কাশিকে পার্টুসিস ও বলে। হুপিং কাশি (বা খুংরি কাশি বা ঘুংড়ি কাশি) যেকোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে তবে শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। ৬ মাস বয়সের শিশুদের যাদের টিকা দেয়া শুরু হয়নি তারা আক্রান্ত হয় বেশি। এটি শিশুর খুব মারাত্মক ও সংক্রামক রোগ। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের ফলে হুপিং কাশি হয়ে থাকে। অনেক শিশুই হুপিং কাশিতে আক্রান্ত হয় বাবা-মা, সহোদর বা পরিচারিকার কাছ থেকে, যা হয়ত তারা নিজেরাই জানেন না যে এই রোগটি তাদের মাঝে আছে।

শিশু হুপিং কাশিতে আক্রান্ত হলে তার লক্ষণগুলো ঠাণ্ডার লক্ষণের মতই দেখায়, যেমন- সর্দি, হাঁচি, হালকা কাশি, নিম্ন মাত্রার জ্বর ইত্যাদি। এক বা দুই সপ্তাহ পরে শুষ্ক ও যন্ত্রণা দায়ী কাশি আস্তে আস্তে দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকে বিরতি দিয়ে এবং এক মিনিটের ও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয় যার ফলে শিশু লাল বা বেগুনী বর্ণের হয়। একেকবার কাশির শেষে শিশু বড় করে শব্দ করে শ্বাস নেয় বা বমি করতে পারে। যখন হুপিং কাশি বৃদ্ধি পায় তখন নবজাতক শিশুর রক্তাভ মুখ বাতাস গ্রহণের জন্য অস্থির হয়ে উঠে এবং এক সময় শ্বাস নেয়া বন্ধ হয়ে যায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য একে অ্যাপনিয়া বলে। প্রাপ্ত বয়স্ক ও কিশোরদের মধ্যে অন্যরকম লক্ষণ প্রকাশ পায়, যেমন- বিরতি দিয়ে দিয়ে কাশি হওয়ার পরিবর্তে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হয় ও কাশির সময় শব্দ ও হয় না।           

হুপিং কাশির ফলে শিশুর ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া হতে পারে। এক বছরের কম বয়সি শিশুদের হসপিটালে থাকতে হতে পারে এবং এমনকি অনেক শিশুই এই রোগে মৃত্যুবরণও করে। শিশুর সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও এমডি James Cherry  বলেন, “অধিকাংশ ক্ষেত্রে চার মাস বয়সের শিশুদের হুপিং কফের কারণে মৃত্যু হয়ে থাকে”। তিনি আরো বলেন, “অধিকাংশ শিশু বাবা-মায়ের কাছ থেকে এটি পেয়ে থাকে, বিশেষ করে মায়েদের কাছ থেকে পায়”।   

দুই ধরণের পার্টুসিস টিকা আছে –

১। DTaP টিকা সাত বছরের নীচের শিশুদের জন্য।

২। Tdap  টিকা বয়স্ক ও কিশোরদের জন্য।

DTaP  ও  Tdap  এই উভয়   ধরণের টিকাই ডিপথেরিয়া ও টিটেনাস থেকেও রক্ষা করে। শিশুর ষষ্ঠ জন্মদিনের আগে ৫ বারে DTap টিকা দেয়া হয়। ১১ থেকে ১২ বছর বয়সের মধ্যে Tdap  টিকা নেয়া যায়। যারা কৈশোরে এই টিকা নিতে পারেননি তারা এই টিকা নিয়ে নিতে পারেন। গর্ভবতী মহিলাদের এই টিকা অবশ্যই নিতে হয়। শিশুদের  DTaP টিকা যে সময় গুলোতে দেয়া হয় – ২ মাস, ৪ মাস, ৬ মাস, ১৫ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে এবং ৪ থেকে ৬ বছর বয়সের মধ্যে। চার জনের মধ্যে এক জন শিশুর DTaP টিকা দেয়ার ফলে জ্বর, ব্যথা, ফুলে যাওয়া ও লাল হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে বিশেষ করে শেষ ডোজ দেয়ার পরে। কিছু ব্যাতিক্রম ক্ষেত্রে শিশুকে টিকা দেয়ার প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে সেক্ষেত্রে টিকা দেয়া বন্ধ করতে হবে।

যেহেতু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে শিশু খুব দুর্বল হয়ে পরে তাই তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। হুপিং কফের কোন লক্ষণ দেখামাত্র আপনার শিশুকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। শিশু বিশেষজ্ঞ রক্ত পরীক্ষা, এক্সরে ও মিউকাস টেস্টের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ দিবেন। অনেক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে যদি নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। যদি আপনার শিশুকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করার সুযোগ থাকে তাহলে ডাক্তারের দেয়া নির্ধারিত সময়েই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াতে হবে। সেরে উঠার সময়ে শিশুকে বিশ্রামে রাখুন। ঘরের ভিতরে এরোসল স্প্রে করা, ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন। শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও ধুলাবালি মুক্ত রাখুন। অল্প অল্প করে অনেকবারে খাবার দিন, অনেক বেশি তরল পান করান। রোগটি সম্পূর্ণ নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।      

লিখেছেন-

সাবেরা খাতুন

ফিচার রাইটার, প্রিয় লাইফ

প্রিয়.কম