(প্রিয়.কম) - ভারতবর্ষে রেলগাড়ির যাত্রা শুরু ১৮৫৩ সালে। ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড ডালহৌসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালক পর্ষদের কাছে ভারতবর্ষে রেলওয়ে স্থাপন কাজ শুরু করার জন্য অনেকগুলি প্রস্তাব পাঠান। ১৮৪৪ সালে আর.এম স্টিফেনসন কলকাতার সন্নিকটে হাওড়া থেকে পশ্চিম বাংলার কয়লাখনি সমৃদ্ধ রানীগঞ্জ শহর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি গঠন করেন। তবে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেতে ও সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে বেশ কয়েক বছর লেগে যায়। ইতোমধ্যে, ১৮৫০ সালে গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে নামক কোম্পানি মুম্বাই থেকে থানা পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন স্থাপন করতে থাকে। লাইনটি উদ্বোধন করা হয় ১৬ এপ্রিল ১৮৫৩ সালে। এটিই ছিল ব্রিটিশ ভারতে রেলওয়ের প্রথম যাত্রা। ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রেললাইনের উদ্বোধন হয় ১৮৫৪ সালে এবং এর মাধ্যমে চালু হয় বাংলার প্রথম রেললাইন।
দেড় শতাধিক বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ ভারতীয় এই রেলওয়ের রয়েছে নানা জানা-অজানা তথ্য। আজ ‘প্রিয়’ পাঠকদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে এমনই ২৩টি মজার তথ্য। আসুন তবে জেনে নেওয়া যাক তথ্যগুলো-
১. ভারতীয় রেলওয়ে জুম্মু এবং কাশ্মিরের চেনাব নদীর উপর সবচেয়ে উঁচু রেলসেতু তৈরি করছে, যা কুতুব মিনারের চেয়ে পাঁচগুণ উঁচু। আইফেল টাওয়ারের চেয়েও লম্বা হবে এই সেতু।

২. ট্রেনচালকদের বলা হয় ‘লোকো পাইলট’। তাদের বেতন ভারতে একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের চেয়েও বেশি। জানা গেছে, এই লোকো পাইলটরা এক লাখ বা তার বেশি রুপি বেতন পেয়ে থাকেন।
৩. আজ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনার কারণে কোনো লোকো পাইলটকে বরখাস্ত বা চাকরি হারাতে হয়নি। এমনকি সে দুর্ঘটনায় শতাধিক নিহতের ঘটনা ঘটলেও না।
৪. ভারতীয় রেলওয়ের ওয়েবসাইটে প্রতি মিনিটে প্রায় ১২ লাখ ক্লিক পড়ে।
৫. মেটাপালায়াম উটি নিলগিরি প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি ভারতে সবচেয়ে ধীরে চলা ট্রেন। এটি ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার বেগে চলে। একজন যাত্রী চাইলে চলন্ত ট্রেন থেকে নেমে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আবার এই ট্রেনে উঠে যেতে পারবেন।
৬. ভারতীয় রেলওয়ের লাইনগুলো যদি এক লাইনে বসানো হয়, তাহলে তা দিয়ে ব্যাস বরাবর দেড়বার পৃথিবী মোড়ান যাবে।
৭. যাত্রা শুরুর ৫০ বছর পর ভারতীয় রেলে টয়লেট যোগ করা হয়। এর আগে চলন্ত ট্রেনে কোনো যাত্রীর প্রকৃতির ডাক আসলে পরবর্তী স্টেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। সর্বপ্রথম অখিল চন্দ্র নামে এক যাত্রী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট এসংক্রান্ত একটি চিঠি লেখেন, যার কারণে ১৯০৯ সালে ট্রেনে টয়লেট যোগ করা হয়। নীচে চিঠিটি দেওয়া হলো-
৮. অতীতে হাতী দিয়ে ঠেলে রেলওয়ে কম্পার্টমেন্ট সঠিক জায়গায় নেওয়া হতো।
৯. ১৬ এপ্রিল ১৮৫৩ সালে ভারতীয় রেলের যাত্রা। পার গয়ে গেছে ১শ’ ৬১ বছর।
১০. সবচেয়ে লম্বা নামের স্টেশন হলো- ভেনকাটানারাসিমহারাজুভারিপেটা।
১১. ভারতীয় রেলওয়েতে সবচেয়ে অস্বস্তিকর ট্রেন হলো গোয়াহাটি-ত্রিভানড্রাম এক্সপ্রেস। ট্রেনটি গড়ে দশ থেকে বার ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে।
১২. জুম্মু এবং কাশ্মিরে ভারতীয় রেলের সবচেয়ে লম্বা টানেলটি অবস্থিত। এটির দৈর্ঘ ১১ দশমিক ২১৫ কিলোমিটার।
১৩. সবচেয়ে ছোট নামের স্টেশন হলো- ‘ইব’। এটি ওড়িষ্যায় অবস্থিত।
১৪. অটোমেটিক পয়েন্ট সিস্টেমের প্রচলনের আগে ম্যানুয়ালি অপারেট করতে গিয়ে শত শত গার্ড দুর্ঘটনায় হাত-পা হারিয়েছেন।
১৫. সবচেয়ে লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় বিবেক এক্সপ্রসের। এটি দিব্রুগড় থেকে কণ্যাকুমারি পর্যন্ত ৪ হাজার ২শ’ ৭৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়।
১৬. সবচেয়ে কম দূরত্বের স্টেশন হলো নাগপুর এবং অজনি। স্টেশন দু’টির মধ্যবর্তী দূরত্ব ৩ কিলোমিটার।
১৭. কোনোরকম না থেমে সবচেয়ে লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় রাজধানী এক্সপ্রেসকে। ত্রিভানড্রাম থেকে হযরত নিজামউদ্দিন স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনটিকে না থেমে ৫শ’ ২৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়।
১৮. লখনৌ জংশন সবচেয়ে ব্যস্ত স্টেশন। প্রতিদিন এই স্টেশনে ৬৪টি ট্রেন আসে এবং যায়।
১৯. ভারতীয় রেলওয়ে এতো বড় একটি সংস্থা, যে সংস্থা দিনে ১১ হাজার ট্রেন পরিচালনা করে থাকে। এটি মোটেই কোনো কৌতুক নয়।
২০. ভারতীয় রেলওয়ে প্রতিদিন গড়ে আড়াই কোটি যাত্রী পরিবহণ করে। এই সংখ্যা নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং তাসমানিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান।
২১. দিল্লিতে রেল জাদুঘর এশিয়াতে সবচেয়ে বড় জাদুঘর।
২২. নবপুর স্টেশনটি দুটো রাজ্যের মাঝে পড়েছে। অর্ধেক অংশ পড়েছে মহারাষ্ট্রে, বাকি অর্ধেক গুজরাটে।
২৩. ভারতীয় রেলওয়ের একটি মাসকট আছে- ভলু। ‘ভলু’ হলো প্রহরী হাতী।
সূত্র: টপইয়াপস.কম