ছবি সংগৃহীত

বহু গুনের বেগুন

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০১৩, ১৭:১২
আপডেট: ১৯ জুন ২০১৩, ১৭:১২

বাঙালির পাতে ভর্তা-ভাজির উপস্থিতি যেন অপরিহার্য। আর যদি এই ভর্তা বা ভাজিটি যদি হয় বেগুনের, তাহলে তো কথাই নেই! নাম বেগুন তো কী হয়েছে, বাঙালির রসনাবিলাসের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে নানা গুণসমৃদ্ধ বেগুন। ভর্তা, ভাজি তো বটেই, বেগুন পোড়া, বিভিন্ন তরকারি, লাবড়া, বেগুনের টক ইত্যাদিও কম জনপ্রিয় নয়! বাংলাদেশে ইফতারের একটি জনপ্রিয় খাবার হলো বেগুনী, যা বেগুন ও বেসন দিয়ে বানানো হয়। সবজি হিসেবে জনপ্রিয়তার দিক থেকে আলুর পরেই বেগুনের স্থান। বারো মাস পাওয়া যায় এবং দাম কম বলে ঠাট্টা করে একে 'গরিবের খাবার' বলে ডাকা হয়। বারো মাস পাওয়া গেলেও শীতকালের সবজি হিসেবেই বেগুনকে গণ্য করা হয়। বেগুনের ইংরেজি নাম হলো Eggplant, যদিও তা Brinjal নামেই বেশি পরিচিত। Brinjal নামটি এসেছে পর্তুগীজদের কাছ থেকে। বুনো বেগুন দেখতে হাঁসের ডিমের মতো বলেই এর নাম রাখা হয়েছিল Eggplant। ফ্রেঞ্চ ও ব্রিটিশ ইংলিশে বেগুনকে ডাকা হয় Aubergine। বেগুনের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Solanum melongena।

বেগুনের আদি নিবাস দক্ষিণ এশিয়ায়। পরে তা প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যে এবং তারপর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এশিয়ার দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশে বেগুনের চাষ করা হতো সুপ্রাচীনকাল থেকেই। তবে বেগুনচাষের লিখিত উপায় সর্বপ্রথম পাওয়া যায় চাইনীজ ভাষায়, যা লেখা হয়েছিল ৫৪৪ অব্দে। বেগুন প্রাকৃতিক এবং চাষ দুভাবেই ফলে। সাধারণত চাষ করলে একটি বেগুনগাছ ৪০ থেকে ১৫০সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে বুনো বেগুনগাছ আরো দীর্ঘ হতে পারে। বেগুনের পাতাগুলো বেশ বড় খসখসে রোঁয়াযুক্ত। বেগুনের প্রজাতি অনুযায়ী ফুলের রং হয়। ফুলের রং হয় সাদা, গোলাপি বা হালকা বেগুনী রঙের। ফল হয় লম্বা নলের মতো, গোলাকার বা ডিম্বাকার। ফলের ভেতরে অসংখ্য ছোট ছোট বীজ থাকে।
নাম বেগুন হলেও খাবার হিসেবে বেগুন ভীষণ গুণের! এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপকারী খাদ্য উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম বেগুনে রয়েছে - খাদ্যশক্তি- ২৫ কিলোক্যালরি শর্করা- ৫.৮৮ গ্রাম চিনি- ৩.৫৩ গ্রাম খাদ্যআঁশ- ৩ গ্রাম চর্বি- ০.১৮ গ্রাম আমিষ- ০.৯৮ গ্রাম থায়ামিন- ০.০৩৯ মিলিগ্রাম রিবোফ্লেভিন- ০.০৩৭ মিলিগ্রাম নিয়াসিন- ০.৬৪৯ মিলিগ্রাম প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.২৮১ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬- ০.০৮৪ মিলিগ্রাম ফোলেট- ২২ আইইউ ভিটামিন সি- ২.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই- ০.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন কে- ৩.৫ আইইউ ক্যালসিয়াম- ৯ মিলিগ্রাম আয়রন- ০.২৩ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম- ১৪ মিলিগ্রাম ম্যাংগানিজ- ০.২৩২ মিলিগ্রাম ফসফরাস- ২৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম- ২২৯ মিলিগ্রাম জিংক- ০.১৬ মিলিগ্রাম খাদ্যগুণে ভরপুর বেগুন বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরের উপকার করে। যেমন -
  • বেগুনে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। যেকোনো ক্ষতস্থান দ্রুত শুকাতেও বেগুন সাহায্য করে।
  • এতে চিনি এবং চর্বির পরিমাণ খুবই কম। তাই ডায়াবেটিকস, হৃদরোগ ও অধিক ওজন রয়েছে যাঁদের, তাঁরা নিশ্চিন্তে বেগুন খেতে পারেন।
  • বেগুনে উপস্থিত রিবোফ্লেভিন মুখ, ঠোঁট ও জিহ্বার ঘা দূর করে, জ্বর জ্বর ভাব কমায়। এর ভিটামিন এ চোখের রোগ প্রতিরোধ করে, ভিটামিন সি ত্বক, নখ ও চুলে পুষ্টি জোগায় এবং ভিটামিন ই ও কে রক্তজমাট বাঁধার বিরুদ্ধে কাজ করে।
  • বেগুনে রয়েছে খাদ্যআঁশ যা খাদ্য হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • বেগুনে রয়েছে নাসুনিন নামে একটি উপাদান, যা মস্তিষ্কের শিরা-উপশিরার দেয়ালে চর্বি জমা হতে বাধা দেয়। ফলে ব্রেইন স্ট্রোক ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে কর্মোদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়।
  • বেগুন রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
  • বেগুনের ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড় ও নখ মজবুত করে।
  • মৌসুমি সর্দি, কাশি, কফ দূর করতে বেগুন সাহায্য করে।
খাদ্যগুণের পাশাপাশি বেগুনের রয়েছে কিছু ভেষজগুণও। যেমন -
  • আগের দিন সন্ধ্যাবেলা বেগুন সেদ্ধ করে পরদিন এর শাঁস মধু মিশিয়ে খেলে অনিদ্রা দূর হয়।
  • বেগুন পোড়ানো ছাই গায়ে মাখলে চুলকানি ও চর্মরোগ সেরে যায়।
  • বেগুন সেদ্ধ করে এর পুলটিস দিলে বিষফোঁড়া তাড়াতাড়ি পেকে যায়।
  • কাঁচা বেগুনের রস খেলে ধুতুরার রস নেমে যায়।
  • রোজ সকালে খালি পেটে বেগুন পুড়িয়ে এর সাথে গুড় মিশিয়ে খেলে ম্যালেরিয়ার কারণে লিভার বড় হয়ে যাবার ঝুঁকি কমে।