
ছবি সংগৃহীত
ফেসবুক সেলিব্রেটি: নিশান জামান থেকে কাজী নিপু
আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬, ০৪:২৫
(প্রিয় টেক) কাজী নিপু (ছদ্দনাম নাম) এই নামে এক সময় দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন ফেসবুকে। নিজের প্রয়োজনে তৈরি করেছিলেন 'পাগলা গ্রুপ' নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ। সেই গ্রুপের মাধ্যমে উগ্র নাস্তিক্যবাদ ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে 'পাগলা গ্রুপ' এর সাথে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলেন নিজের পরিচিয় গোপন রাখা কাজী নিপু নামধারী এই মানুষটি। সম্প্রতি সময়েও নানা ইস্যুতে এসেছেন আলোচনায় সমালোচনায়। এই সকল বিষয় নিয়ে প্রথমবারের মত তিনি মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রিয়.কমকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহবুবর রহমান সুমন।
প্রিয় টেক : এক সময় ফেসবুকে বেশ জনপ্রিয় গাগলা গ্রুপের কিভাবে সূচনা হয়েছিল ?
কাজী নিপু : গ্রুপটা আসলে একরকম দুষ্টমি করেই খুলেছিলাম। ২০০৯ এর কথা, আমার এক বড় ভাইয়ের ফ্যামেলি ফটোতে কিছু ছেলে জঘন্যভাবে গালাগাল দিচ্ছিলো। উনার ওয়াইফের আইডিটাও রিপোর্ট করে ব্যান করে দিয়েছিলো। তখন ভাইয়ার লিস্টের আমরা কয়েকজন মিলে একসাথে ওদের প্রটেস্ট করি। সেখান থেকেই গ্রুপের সূচনা।
প্রিয় টেক : গাগলা গ্রুপের মাধ্যমে কি ধররেন কাজ করতেন ?
কাজী নিপু : সে সময় ফেসবুকে উগ্র নাস্তিক্যবাদ চলছিলো। গ্রুপটাকে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে কাজে লাগাই। সুস্থ্য মুক্তচিন্তাকে আমরা স্বাগত জানিয়ে উগ্র নাস্তিক্যবাদের প্রতিবাদ জানাই। ফেসবুক থেকে তাদের বেশ কয়েকটি বড় পেজ ও গ্রুপ ব্যান করে দেই। তারপর শুরু হয় অশ্লীলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এসময় অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ান ফেসবুকে তুমুল জনপ্রিয় আরিফ আর হোসেন। উনি আমাদের গ্রুপটাকে অশ্লীল পেজগুলো ব্যান করার জন্য কাজে লাগান। এক পর্যায়ে আমরা বেশ সফল হই। আসলে খারাপ কোনো কিছুকেই একেবারে নির্মুল করা সম্ভব নয়। আমরা শুধু সেটাকে কিছু সময়ের জন্য দমিয়ে রাখতে পারি।
প্রিয় টেক : গ্রুপ টি বন্ধ হওয়ার কারণ কি ?
কাজী নিপু : গ্রুপ কয়েক বছর আগেই বন্ধ হয়েছে। আমি শুধু চেয়েছি হ্যাকার, স্প্যামারসহ অনলাইনে উল্টাপাল্টা কাজ করে বেড়ানো যে ছেলেগুলো আছে, এরা সব এক হোক। এক হয়ে ভালো কিছু করুক। তারই অংশ হিসেবে, পাগলা গ্রুপকে জনপ্রিয় করে একসময় তা বন্ধ করে দিয়েছি এবং ওদেরকে নিয়ে এসেছিলাম প্রজেক্ট ছারপোকায়, ভালো কিছু দেখার আশায়।
প্রিয় টেক : প্রজেক্ট ছারপোকায় নিয়ে বিস্তারিত বলুন ।
কাজী নিপু : তরুণদের নিয়ে আমার এই প্রজেক্ট। সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান যে আমরা নিজেরাই করতে পারি, আমি সেটা প্রমাণ করতে চেয়েছি। ছারপোকার কাজ ছিল, তরুণদের দিয়ে ভালো কিছু করানো। যেমন ধরুন, দেশের ৬৪ জেলায় আমাদের ৬৪০ জন দুর্লভ ব্লাড গ্রুপের ডোনার ছিল। যখন যেখানে দুর্লভ গ্রুপের রক্ত প্রয়োজন, সেখানেই ওই এলাকার বা আশেপাশের কাউকে পাঠিয়ে দিতাম। ঈদে অন্যরা ফান্ড রেইজ করে পথশিশুদের কাপড় কিনে দিত। আমরা সেটা করতাম না। ছারপোকার মেম্বাররা নিজে কাপড় কিনে পথশিশুদের হাতে পৌঁছে দিয়ে একটা ছবি তুলে রাখতো। পরবর্তীতে অ্যালবাম আকারে তা আপলোড করা হতো।
প্রিয় টেক : সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন নিজের নামে ফেসবুক পেজ ভেরিফাইড করে এবং বেশ কিছু পেজ ভেরিফাইড করিয়ে ?
কাজী নিপু : ফেসবুকের দেয়া নিয়ম অনুসারেই পেজ ভেরিফিকেশন সম্ভব। আমার পেজটা সে নিয়মেই হয়েছে। আর আমি শুধু কয়েকটা ব্রডকাস্টিং মিডিয়ার পেজ ভেরিফাই করার কাজে তাদের হেল্প করেছি মাত্র।
প্রিয় টেক : কিভাবে বা কি নিয়মে করেন এ কাজ?
কাজী নিপু : কিছু কথা থাক না গোপন।
প্রিয় টেক : ফেসবুকে আলোচনার পাশাপাশি আপনি নানা ইস্যুতে বেশ সমালোচিত। এর কারণ কি?
কাজী নিপু : কোন মেয়ে ইনবক্সে এসে যখন বিচার জানিয়ে বলে, "ভাইয়া অমুক ছেলেটা আমাকে ডিস্টার্ব করছে, ফেক বানাচ্ছে, ছবি পাবলিশ করছে"। তখন সেই অমুক ছেলেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে সজ্ঞানেই আমি নিজের একজন শত্রু বাড়াচ্ছি। এরকম শত্রু বা তথাকথিত সমালোচকদের তো অভাব নেই। সমাজে এদের সংখ্যাটা কিন্তু অনেক।
প্রিয় টেক : এত আলোচনা সমালোচনার পরও আজও নিজের পরিচয় গোপন রাখার রহস্য কি?
কাজী নিপু : মিডেল ক্লাম সেন্টিমেন্ট বলতে পারেন। পরিচয় প্রকাশ্যের আগেই তার প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে। আর তাছাড়া ব্যক্তিগত জীবনে আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। বাসা থেকে অফিসে যেতে আমাকে মেইনরোডে গিয়ে রিকশা ডাকতে হয়। বাসার গ্যারেজে গাড়ি থাকলে আর নিরাপত্তার কথা ভাবতাম না।
প্রিয় টেক : প্রিয়.কমের পাঠাকদের জন্য প্রথমবার নিজের সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
কাজী নিপু : কখনো ভাবিনি তাকে খুঁজতে ( ব্যক্তিগত ব্যপারে ) এসে এই ফেসবুকে আমার এমন অবস্থান হয়ে যাবে। শুধু এটুকু চাই, কেউ নিশান জামান থেকে কাজী নিপু হওয়ার চেষ্টা না করুক। মানুষকে আদর্শ ভাবার কিছু নেই। নিজেকে আদর্শ বানিয়ে কারো সামনে দাঁড় করাতে পারাটাই বেটার।
প্রিয় টেক : বিশেষ কিছু বলার আছে ফেসবুক ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী বা সমালোচকদের উদ্দেশ্যে?
কাজী নিপু : আমি এনোনিনাম, এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ইতিপূর্বে অনেকেই নিজেকে কাজী নিপু পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছে। যার কারণে আমাকে আরো বেশি সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। বিভ্রান্তি এড়াতে সব ফেক আইডিগুলো থেকে যেনো সবাই দুরে থাকে। ফেসবুকে আমার একমাত্র পেজ কাজী নিপু।